সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৫৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে জড়িত দুই ভাই এনামুল হক ও রূপন ভুঁইয়ার রয়েছে আরো ৩০টি টাকার গুদাম। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা অনুসন্ধান করে এমন তথ্য পেয়েছে। যে কোনো সময় ঐসব টাকার গুদামে অভিযান চালাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত সোমবার রাতে নারিন্দার ‘মমতাজ ভিলা’য় রাখা পাঁচটি সিন্দুক বা ভল্ট থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর তাদের বাসায় প্রথম দফায় অভিযানে ৫ কোটি টাকা উদ্ধার করেছিল র্যাব। তখন থেকেই দুই ভাই পলাতক ছিল। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সে সময় তাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। সিআইডির রিমান্ডে তারা ২০০০ সালের পর থেকে ১৫৬টি ফ্ল্যাট এবং ২২টি বাড়ির মালিক হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ঢাকাতেই তাদের ছোটো-বড়ো ৭০টি জমির খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ঢাকার বাইরে তাদের ৪ বিঘা জমিরও সন্ধান মিলেছে।
জানা গেছে, এক সময় যুবদল করত এনামুল হক ও রূপন ভুঁইয়া। বিএনপির প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় ছিলেন। পরে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। যুবদলের এই দুই নেতাও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে টাকার পাহাড় গড়েন। এনামুল হক এনু ও রূপন ভুঁইয়ার কত টাকা, বাড়ি, গাড়ি আর ফ্ল্যাট আছে তা নিশ্চিত করে কেউ জানেন না। তাদের পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাড়িতে সিন্দুকের পর সিন্দুকে নগদ টাকা মিলছে। মঙ্গলবার উদ্ধার করা পাঁচটি টাকা ভর্তি ভল্টের সঙ্গে কয়েকটি ইলেকট্রনিক চিপসও উদ্ধার করেছে র্যাব। র্যাব কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এগুলো টাকার ভল্টের চিপস। তাদের হেফাজতে অন্য কোথাও আরো অন্তত ৩০টি সিন্দুক বা ভল্ট রয়েছে। আবার কেউ কেউ ধারণা করছেন, আরো ৪০টি সিন্দুক বা ভল্ট আছে। সেগুলোর ভেতরে আরো কোটি কোটি নগদ টাকা রয়েছে। এসব চিপসের মাধ্যমে সেসব ভল্ট খোলা যায়। তবে সেগুলো কোন বাড়িতে লুকিয়ে রাখা হয়েছে সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি র্যাব। এসব ভল্টের সন্ধানে সম্ভাব্য এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এনামুল-রূপনের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া টাকাগুলো ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের জুয়ার অর্থ। সেপ্টেম্বর মাসে র্যাবের অভিযান শুরুর পরপরই বস্তায় করে এসব টাকা এনু-রূপনের বাসায় নিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব পরিচালনা পর্ষদের অন্য সদস্যদের অংশও এখানে ছিল। তাদের বিষয়েও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। র্যাবের গোয়েন্দা এবং আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, আমরা নিয়মিত ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি। ক্যাসিনো থেকে আমরা দৃষ্টি সরাইনি। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করার পরই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ক্যাসিনোর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’ র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এনামুল-রূপনের আরো অবৈধ অর্থ আছে কি না তারও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য এসেছে, পুরান ঢাকার আরেকটি বাসায় এনামুল-রূপনের আরো একাধিক ভল্ট রয়েছে। অত্যাধুনিক ঐ ভল্টগুলো ইলেকট্রনিক চিপস এবং পাসওয়ার্ড সংবলিত। অত্যন্ত সুরক্ষিত এসব ভল্টে রক্ষিত আছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। ঐ তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত হতে বেশ কয়েকটি বাসায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন কৌশলে রেকি করা হয়েছে। বাসার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। র্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা, ঐ বাসায় রক্ষিত ভল্টগুলোতে সম্পদের পরিমাণ আরো বেশি হতে পারে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর একযোগে রাজধানীর ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, শাহজাহানপুর মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে র্যাবের একাধিক টিম অভিযান শুরু করে। ওই সুযোগে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে রক্ষিত বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে ফেলা হয়। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে র্যাব সদস্যরা অভিযানে গেলে নগদ মাত্র ১০ লাখ টাকা এবং ক্যাসিনোর কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করে। ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল ও রূপনের সূত্রাপুরের মুরগিটোলা মোড়ের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। ওই অভিযানে এনামুল-রূপন ও তাদের দুই সহযোগীর বাসা থেকে ৫টি সিন্দুক ভর্তি ৫ কোটির বেশি টাকা, ৮ কেজি সোনা (৭০০ ভরি) ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর ও ওয়ারী থানায় মোট ৭টি মামলা করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থার এক জন কর্মকর্তা জানান, যেহেতু নারিন্দার বাসা থেকে ২৬ কোটি টাকা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার সঙ্গে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো চিপস উদ্ধার করা হয়েছে, তাই এর দায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। ক্লাবে ক্যাসিনোর সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, ভাগ পেতেন, তাদেরও পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি আরো বলেন, শুরুতে মাত্র দুটি ক্লাবে একযোগে অভিযান চালানোর কারণে ক্যাসিনো চলে এমন অন্য ক্লাবের মালিকরা ক্যাসিনো সামগ্রী সরিয়ে ফেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। নারিন্দার বাসার চিত্র আমাদের অন্য ক্লাবগুলোর বিষয়টি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিন নারিন্দা কাঁচাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সবার মুখে মুখে ‘ক্যাসিনো ব্রাদার্সের’ কথা। তাদের অনেকেরই প্রশ্ন, এই দুই ভাই কীভাবে এলাকায় এত সম্পদের মালিক হলো, কীভাবেই বা তারা দিনের আলোতে এত সব সিন্দুক বাসায় এনেছিল? তাদের অনেকেই আবার সিআইডি আর দুদকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের বিশ্বাস, এই দুই ভাইয়ের হেফাজতে আরো অনেকের গুপ্তধন রয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd