সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : যুব মহিলা লীগ নেত্রী (বহিষ্কৃত) শামীমা নূর পাপিয়ার প্রশ্রয়দাতা ও তাঁর অপকর্মের সহযোগীদের তালিকা হচ্ছে। এঁদের সঙ্গে পাপিয়ার সম্পর্ক এবং লেনদেনের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর মোবাইল ফোন থেকে অন্তত ১১ জন সংসদ সদস্যের নম্বরে বেশি যোগাযোগের তথ্য মিলেছে। তাঁদের ব্যাপারেও তথ্য নিচ্ছেন তদন্তকারীরা। পাপিয়ার অপকর্মের সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে জন্য সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ওপর নজরদারি করা হচ্ছে।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে গতকাল বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে পাপিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তের জন্য র্যাবের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর হোটেলগুলোতে সুন্দরী তরুণী সরবরাহ, প্রভাবশালীদের ব্লাকমেইলিং, তদবির বাণিজ্য, অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাপিয়া ও তাঁর স্বামী সুমনসহ চারজনকে। পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে আদালতের মাধ্যমে ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয় বিমানবন্দর থানা পুলিশ। পরে মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তর হওয়ায় ডিবি তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এরই মধ্যে রিমান্ডের দুই দিন পার হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে পাপিয়ার সহযোগী ও প্রশ্রয়দাতাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সূত্রের দাবি, রাজনীতির সূত্র ধরেই ঢাকায় এসে পাপিয়া আওয়ামী লীগের তিন নেত্রীর স্নেহধন্য হয়ে ওঠেন। তাঁদের মাধ্যমে পরিচিত হন অন্য অনেক নেতার সঙ্গে। এর মধ্যেই হোটেলে যাওয়া-আসা শুরু হয় তাঁর।
জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া পুলিশকে জানান, যুব মহিলা লীগের তিন নেতাসহ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল। আর তিনি হোটেলে যেতেন মূলত ডিসকোতে যোগ দিতে। ডিসকো করতে করতেই নিজের একটি গ্রুপ তৈরির ইচ্ছা জাগে। সে জন্য নরসিংদীর কিছু সুন্দরী তরুণীকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। ওই সব মেয়েকে নিয়ে অভিজাত হোটেলে নাচ-গানে অংশ নিতেন তিনি। এক চলচ্চিত্র পরিচালকের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সিনেমার নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। আশ্বাস মিললেও পরে আর তা হয়ে ওঠেনি।
জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার স্বামী পুলিশকে জানান, পাপিয়াকে হোটেলে থাকতে নিষেধ করতেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী তাঁর কথা শুনতেন না। আর তাঁরও কিছুই করার ছিল না। উল্টো স্ত্রী যা বলতেন তা-ই তাঁকে মেনে চলতে হয়েছে।
বিমানবন্দর থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাজী কায়কোবাদ। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘পাপিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জাল নোট মামলার তদন্ত করেছি আমরা। উদ্ধার হওয়া জাল নোট সম্পর্কে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে সেগুলো তাঁদের নয় বলে তাঁরা দাবি করেন। মামলাটি এখন ডিবিতে।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাপিয়ার অপকর্মের সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ কারণে পাপিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ থাকা সংসদ সদস্যসহ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ওপরও নজরদারি করা হচ্ছে। পাপিয়ার কললিস্টে ১১ জন সংসদ সদস্যের নম্বরে বেশি যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এঁদের কার সঙ্গে পাপিয়ার কী ধরনের সম্পর্ক সে ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়ার পরও পাপিয়া বেশ দম্ভ নিয়ে বলেছেন যে তাঁর হাত অনেক ওপরে, কিছুই হবে না। পরে র্যাবের দ্বিতীয় অভিযান এবং তিন মামলায় রিমান্ডে আসার পর অনেকটাই চুপসে গেছেন তিনি। এখন বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর তিনি অপকর্মের দায় চাপাতে চাইছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, পাপিয়ার বিরুদ্ধে র্যাব তিনটি মামলা করেছে। গত বুধবার রাতে মামলাগুলো ডিবিতে স্থানান্তর হয়েছে। ওই সব মামলায় পাপিয়া ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কারা জড়িত, কারা ইন্ধনদাতা, তাঁর অর্থের উৎস কী, বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে শক্তির উৎস—সবই তদন্ত করে দেখা হবে। অনৈতিক বিষয় থাকলে তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd