ডিসি প্রত্যাহার ও সাংবাদিকের জামিন

প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০২০

ডিসি প্রত্যাহার ও সাংবাদিকের জামিন

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ভ্রাম্যমাণ আদালতে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে সাজা দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘একজন সাংবাদিককে ধরতে মধ্যরাতে তার বাসায় ৪০ জনের বিশাল বাহিনী গেলো, এ তো বিশাল ব্যাপার! তিনি কি দেশের সেরা সন্ত্রাসী?’ এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দেবাশীষ ভট্টাচার্য্য। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে সোমবারের মধ্যে রায়ের কপি, সাজা ভ্রাম্যমাণ আদালত নাকি টাস্কফোর্স দিয়েছে, মধ্যরাতে এভাবে কারও বাসায় যাওয়ার এখতিয়ার আছে কিনা প্রভৃতি তথ্য দাখিল করতে বলেছেন হাইকোর্ট। আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের (মোবাইল কোর্ট) কারাদণ্ড প্রদানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।

এদিকে, ডিসি সুলতানা পারভীনসাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাড়িতে মধ্যরাতে হানা এবং তাকে তুলে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনের সম্পৃক্ততা ও আচরণের অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য তাকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। রবিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘শুধু ডিসি নয়, এই ঘটনার সঙ্গে অন্য যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিল, নিজ নিজ ভূমিকা বিবেচনায় নিয়ে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনমনে শনিবার থেকে যত প্রশ্ন উঠেছে, সব প্রশ্নের সত্যতা তদন্তে পাওয়া গেছে।’ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক-দুজন কর্মকর্তার দায় সরকার বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নেবে না।’ বিভাগীয় কমিশনারের খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘স্বাক্ষরযুক্ত প্রতিবেদন কিছুক্ষণের মধ্যে পেয়ে যাবো। খসড়াতে যা দেখেছি সেটাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন হবে। যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর, তাই আদেশে তার স্বাক্ষর লাগবে। ফলে দোষীদের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি এখনই বলা ঠিক হবে না।’ কী ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া গেছে প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইন না মেনে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, প্রশাসন সম্পর্কে জনগণকে ভীতির জায়গায় নিয়ে যাওয়া। অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করায় জনমনে বিরূপ ধারণা জন্ম দিয়েছে।’

আরিফের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ইতোমধ্যে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। যেহেতু প্রতিবেদনে সব উল্লেখ আছে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি, সেহেতু একসময় তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হবেন।

আরিফের মুক্তি, জামিনে মুক্তি পেয়েছেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম। অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের আবেদনের পর কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুজাউদ্দৌলা তাকে জামিন দেন। রবিবার সকালে তাকে জামিন দেওয়া হয়। পরে তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আরিফ জানিয়েছেন, জেল কর্তৃপক্ষ তার কাছে একটি ওকালতনামা পাঠায়। তাকে বলা হয় পরিবার পাঠিয়েছে। এই কথা বলে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে পরিবারের কেউ ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য জেল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও কাগজ পাঠাননি। পরিবারের কে আপনাকে নিয়োগ করেছে এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব নিলু তার সঙ্গে যোগাযোগ করে দুজনে মিলে ২৫ হাজার টাকা জামানতে জামিন করিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে জানতে আহসান হাবি নিলুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। স্থানীয় সংবাদকর্মী ও সূত্রগুলো বলছে, মোবাইল কোর্টের সাজা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হওয়ায় চাপের মুখে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন নিজের লোকজনদের দিয়ে আরিফের পরিবারের সঙ্গে কথা না বলেই কৌশলে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে জামিন দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এর আগে রবিবার সকালে আরিফুল ইসলামকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কারাদণ্ড দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ১৭ জনকে রিটে বিবাদী করা হয়। বাংলা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক হারুন উর রশীদের পক্ষে আইনজীবী ইশরাত হাসান জনস্বার্থে রিটটি দায়ের করেন। ইশরাত হাসান বলেন, ‘বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি সরদার মো. রশিদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে।’ এছাড়াও রিটে ফৌজদারি কার্যবিধি, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন এবং সংবিধানের ৩১,৩২,৩৫ এবং ৩৬ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রশ্ন? মদ ও গাঁজা, প্রতীকী ছবিআধা বোতল মদ ও ১৫০ গ্রাম গাঁজা রাখার অপরাধে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের জেল দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। যদিও তার বাসা থেকে এসব উদ্ধার করা হয়নি। এজন্য কুড়িগ্রামসহ সারাদেশের মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, কারা সরবরাহ করেছিল সেই ১৫০ গ্রাম গাঁজা ও আধা বোতল মদ। শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়ির গেট ও ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে মারধর করতে করতে সাংবাদিক আরিফকে তুলে আনে একদল সাদা পোশাকধারী। পরে তাকে ডিসির অফিসে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে মাদক পাওয়ার অভিযোগ এনে সাজা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পৌর মেয়র আবদুল জলিল বলেন, ‘ডিসি সুলতানা পারভীন একজন চরম মিথ্যাবাদী ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি। তিনি রাজা-বাদশা আমলের মতো কুড়িগ্রামকে তার তালুক মনে করেন। আমাদের তার প্রজা মনে করেন। তিনি ভুলে গেছেন, তিনি একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। গণতান্ত্রিক সরকারের মাঠ প্রশাসনের প্রতিনিধি।’ তিনি বলেন, ‘আরিফুল ইসলাম একজন চৌকশ সাংবাদিকই নন, তিনি একজন আদর্শ শিক্ষকও। ডিসির অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার সংবাদ প্রকাশ করায় তাকে মারাত্মক ভয় পেয়ে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে।’

তার প্রশ্ন, ‘এই ১৫০ গ্রাম গাঁজা ও আধা বোতল মদ কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে? কারা সরবরাহ করেছে, কার নির্দেশে এসব সংগ্রহ করে সাজায় ব্যবহার করা হয়েছে? এসব উদঘাটন করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে মানুষের মাঝে একটি ভুল বার্তা যেতে পারে। তাই সরকার, দেশ এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই তা খুঁজে বের করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..