ছাতকে সরকারি সহায়তার তালিকায় ইউপি সদস্যের তেলেসমাতি

প্রকাশিত: ২:০০ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২০

ছাতকে সরকারি সহায়তার তালিকায় ইউপি সদস্যের তেলেসমাতি

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: করোনাভাইরাস মহামারিতে আড়াই হাজার টাকা সরকারী সহায়তা কার্যক্রমে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিক মিয়া’র বিরুদ্ধে ব্যাপক স্বজনপ্রীতি ও আর্থীক ভাবে স্বচ্ছল জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজন ও একই পরিবারের একাধিক ব্যাক্তি ও প্রবাসীদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অভিযোগ উঠেছে। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম, যাচাইকারী সহকারী শিক্ষিকা আইরিন আক্তার ও শাহানারা বেগম স্বাক্ষরিত তালিকা প্রকাশ হলে বঞ্চিতদের মনে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। অনিয়মের ফলে অনেক অসচ্ছলের প্রণোদনা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। জাতির সংকটময় মুহূর্তে বিপাকে পড়া মানুষদের তালিকায় এই অনিয়ম অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন মহল। উপকারভোগীরাও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনের নিকট খসড়া তালিকা জমা দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায় চুড়ান্ত তালিকা জেলা প্রশাসনে প্রেরন করা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন সময় যারা সরকারী ত্রাণ ও ভাতা পেয়ে আসছেন তারাও রয়েছেন ২৫০০ টাকা সহায়তার তালিকায়। এমনকি কি অনেক মহিলার বিয়ে হয়েছে অন্য এলাকায় ও প্রবাসে রয়েছেন তাদের নামও রয়েছে তালিকায় রয়েছে অভিযোগ বঞ্চিতদের।

প্রকাশিত তালিকা পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ক্রমিক নং ৯০৫,৯১৭ এ আয়েশা বেগম পিতা মৃত. তাহির আলী গ্রাম হাঁদা চাঁনপুর দুইবার এই নাম রয়েছে তালিকায়।
ক্রমিক নং ৮৪৪ হাদাচাঁনপুর গ্রামের আব্দুর রউফের ছেলে লিটন মিয়া প্রায় এক বছর ধরে সৌদি আরব থাকার পরও তার নাম তালিকায় রয়েছে।
ক্রমিক নং ৮৭২ হাদা চাঁন পুর গ্রামের মৃত নুর আলীর ছেলে সালিক মিয়া, ৮৭৩ নং ক্রমিকে মৃত. ছোরাব আলীর ছেলে আখদ্দুছ আলী সৌদি প্রবাসী ৮৪৪ নং ক্রমিকে লিটন মিয়া ও ৮৭২ নং ক্রমিকে সালিক মিয়ার সম্পর্কে চাচা হন। ক্রমিক নং ৮৬৯, ৮৬৬, ৮৯৮ এ ফারুক মিয়া, মাসুক মিয়া, জুনাব আলী সর্ব সাং হাঁদা চাঁনপুর পিতা ইদ্রিশ আলী। ক্রমিক নং ৮৫১, ৮৬৪, ৮৬৫ লাল মিয়া, ধন মিয়া, মো. রইছ মিয়া সর্ব সাং হাদা চাঁনপুর পিতা- আলকাছ আলী। ক্রমিক নং ৮৭৫,৮৫৯ এ মুহিবুর রহমান ও মো. বিল্লাল মিয়া গ্রাম হাদা চাঁনপুর পিতা আব্দুল কদ্দুছ। ক্রমিক নং ৮৭৭ এ মো. আব্দুল জলিল পিতা মৃত. হাসিম উল্লাহ সাং হাদাচাঁনপুর। তিনি প্রায় দুই বছর যাবৎ দুবাই রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে কুমারদানী (হাদাচাঁনপুর) গ্রামের আব্দুল হেকিম বলেন, ইউপি সদস্য মো. রফিক মিয়া নিজের এক গোষ্টির মধ্যে একাধিক ব্যক্তির নাম দিয়েছেন। কথা ছিল মুরব্বিদের সাথে পরামর্শ করে তালিকা করবেন। কিন্ত তিনি তা করেননি। ঐ তালিকায় অনেক প্রবাসী ও স্বচ্ছল পরিবারের নাম রয়েছে। আমরা হতদরিদ্ররা বঞ্চিত রয়েছি।
ভুক্তভোগী কুমারদানী গ্রামের আব্দুল হেকিম বলেন, সদস্য মো. রফিক মিয়া তালিকার করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন গ্রামের জয়নাল আবেদিনকে। জয়নাল আবেদিন তালিকা করার দায়িত্ব পেয়ে তিনিসহ তার পরিবারের ৪ জনের নাম তালিকায় দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন ইউপি সদস্য নাম প্রতি ৫ শত টাকা দেওয়া হবে। এ বিষয় নিয়ে কুমারদানী গ্রামের পঞ্চায়েত দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। তিনি আরো বলেন আমরা অনাহারে-অর্ধাহারে রয়েছি। স্বজনপ্রীতির তালিকা বাতিল ও নতুন তালিকা প্রণনয়ন কওে প্রকৃত হতদরিদ্রদের নামে যাচাইক্রমে তালিকা করে সরকারের উপহার বিতরনের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দাবি জানা দিনি।

মানবাধিকার কর্মী ও তরুন ব্যাবসায়ী দিলোয়ার হোসেন বলেন, ইউপি সদস্য মো. রফিক মিয়া’র অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারনে প্রকৃত হতদরিদ্ররা সরকারী ত্রান প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারী সহায়তা তিনি তার আত্মীয় স্বজন ও পছন্দের লোকদের শর্তস্বাপেক্ষে দিচ্ছেন। অনেকেই সরকারী ভাতার কার্ড চাইলে আগামী নির্বাচনে তাকে ভোট দেওয়ার শর্তে পছন্দের লোকদের দিচ্ছেন। এটা কােন ভাবেই কাম্য হতে পারেনা।
যাচাইকারী হাঁদা চাঁনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আইরিন আক্তার বলেন, তালিকা সঠিক হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালিকা ইউপি সদস্য মো. রফিক মিয়া করেছেন। আমি মুঠোফোনে কল করে যাচাই করেছি।
ইসলামপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. রফিক মিয়া অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রতিটি গ্রামে গ্রামে ভাগ করে তালিকা করা হয়েছে। একই পরিবারে একাধিক সদস্য বা কোন প্রবাসী তালিকায় নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকা যাচাই করেছেন।

ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হেকিম সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেছেন, তালিকা করার জন্য ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কমিটি রয়েছে। জনপ্রতিধিরা তালিকা করে দিয়েছেন। চড়ান্ত তালিকা জেলায় পাঠানো হয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতিতে অনিয়মের ভরপুর বর্তমান এই তালিকা বাতিল করে যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে নতুন ভাবে তালিকা প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার প্রকৃত উপকারভোগীদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতম কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান অসহায় হতদরিদ্র বঞ্চিতরা।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..