ক্লান্ত হলেই শরীরে ছিটিয়ে দেয়া হতো গরম তেল

প্রকাশিত: ৪:০২ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২, ২০২০

ক্লান্ত হলেই শরীরে ছিটিয়ে দেয়া হতো গরম তেল

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : গাজীপুরের শ্রীপুরে কিশোরী আছমা খাতুনকে (১৪) বাসায় কাজের চাপ সহ্য করতে না পারলেই গায়ে গরম তেল ছিটানো হতো। চলত সিগারেটের ছ্যাঁকা, লাঠিপেটা আর লাথিসহ অমানবিক নির্যাতন। আছমা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের ঈমান আলীর মেয়ে।

ওই সব অভিযোগে কিশোরীর মা জোসনা বেগম শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আবু তাহের-শাহাজাদী দম্পতি, তাদের প্রতিষ্ঠান (ফারসিং নিট কম্পোজিট লিমিটেডের) মহা-ব্যবস্থাপক বাবুল, ব্যবস্থাপক ইব্রাহীম, সহকারী ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করা হয়।

থানায় লিখিত অভিযোগ, নির্যাতিত ও তার পরিবারের ভাষ্যমতে, তাদের বাড়ির পাশেই ফারসিং নিট কম্পোজিট লিমিটেড। ওই কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু তাহের ঢাকা উত্তরার ৩নং সেক্টরের ৭/বি রোডের ৩১নং বাসায় বসবাস করেন।

তাহের-শাহজাদী দম্পতি মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বছরখানেক আগে কিশোরীকে তার পরিবারের কাছ থেকে গৃহস্থালী কাজের জন্য তাদের উত্তরার বাসায় নিয়ে যান। গৃহস্থালীর কাজ করে এক সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে কিশোরীকে প্রথমদিকে গালিগালাজ করা হতো।

পরে শরীরে গরম তেল ঢেলে দেয়া, লাঠিপেটা করা এবং বিভিন্ন সময় সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয়া হতো। এতে কিশোরীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফুসকাসহ জখম তৈরি হয়। এ অবস্থায় কিশোরীকে চিকিৎসা করানো হয়নি।

বর্তমান করোনা বিপর্যয়ের অজুহাতে কিশোরীকে তার বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেয়া হতো না। এ দিকে কিশোরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৯ জুন সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে তাকে তার বাড়ির উদ্দেশে গাড়িচালকের মাধ্যমে একটি যাত্রীবাহী বাসে তুলে দেয়।

কিশোরী বাড়িতে ফিরে এ সব ঘটনা তার বাবা-মাকে জানায়। পরে কিশোরীকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

কিশোরীর বাবা ঈমান আলী জানান, বাসার কাজ করানো হলেও মেয়ের মতো স্নেহ দিয়ে রাখার কথা দিয়ে ছিলেন। কিন্তু তারা তার কন্যাকে দিনের বেশিরভাগ সময় কাজ করাতেন। এমনকি ঠিকমতো ঘুমাতে দিতেন না। কাজের চাপে তার কন্যা ক্লান্ত হয়ে পড়লে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন।

কিশোরী জানায়, বাড়ির মালিক আবু তাহের মাঝে মধ্যেই কিল-ঘুষি দিয়ে নির্যাতন করতেন। কয়েকবার সিগারেটের আগুনের ছ্যাঁকাও দিয়েছেন। গৃহকর্ত্রী শাহজাদীও শরীরে দিতেন গরম তেলের ছিটা। তারপর দগ্ধ ঘায়ের ওপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতেন। গত চার মাস ধরে এমন নির্যাতন চলে।

ফারসিং নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অভিযুক্ত আবু তাহেরের সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কারখানায় গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজী হননি কেউ।

শ্রীপুর থানার ওসি খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, নির্যাতিতার পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু ঘটনাস্থল ঢাকার উত্তরা তাই ওই থানার সার্কেল স্যার ও ওসির সঙ্গে কথা বলে নির্যাতিত ও তার পরিবারকে উত্তরা থানায় পাঠানো হয়েছে এবং ওই থানায় মামলা দায়ের করা হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..