সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২২শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পুলিশের এক সদস্যের সাথে প্রেমের পর বিয়ের প্রস্তাব তোলায় থানায় বেঁধে নির্মম নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগী এক ছাত্রী অবশেষে মামলা দায়ের করেছে উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আকতার, কনস্টেবল মো. সুমন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) নুরুল ইসলাম ও এ.এস.আই মো. শামীমের বিরুদ্ধে।
আজ মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্র্যনাল-৩ এ রিয়াদ সোলতানা নুরী নামের এক মহিলা মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদী কক্সবাজারের একটি বেসরকারি কলেজের ছাত্রী বলে জানা গেছে। তিনি নারী নির্যাতন আইনের ৯ (১) তৎসহ দ:বি: আইনের ৩২৩/৩২৪/৩৪২/৩৭৯/৫০৬ ধারা মতে অভিযোগ আনেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই ট্রাইব্যুনালের পি.পি এডভোকেট একরামুল হুদা।
অভিযোগে জানা গেছে, সুমন নামে এক পুলিশ কনষ্টেবলের সাথে প্রেমের পর বিয়ের প্রস্তাব তোলায় পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে মামলার বাদি ওই ছাত্রী। কনষ্টেবল হলেন কুমিল্লা জেলার হোমনা ইউনিয়নের হাসান আলীর ছেলে সুমন। কক্সবাজারের উখিয়া মরিচ্যা চেক পোস্টে দায়িত্বরত অবস্থায় ওই মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে সুমনের। সেই সম্পর্কের সূত্রধরে চলতি বছরের ৭ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে উখিয়া থানায় নির্মম পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয় ওই ছাত্রী।
মামলার বাদি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সূত্র ধরে পুলিশ কনষ্টেবল সুমনের সাথে তার সর্ম্পক হয় প্রায় এক বছর আগে। এরইমধ্যে তাদের বেশ কয়েকবার সরাসরি দেখা হয়। শারীরিক সর্ম্পকও হয়ে যায়। উখিয়া মরিচ্যা চেক পোস্টে দায়িত্বের সুবাদে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সুমনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য থাকেন। সর্বশেষ ওই কক্ষেও সুমনের সাথে দেখা করতে যান ছাত্রী। সেখানেও তাদের শারীরিক সর্ম্পক হয়। এরপর থেকে কিছুদিন যোগাযোগ বন্ধ রাখেন সুমন। যোগাযোগ বন্ধ রাখার এক পর্যায়ে ৭ জুলাই (মঙ্গলবার) সকালে কথা হয় সুমনের সাথে। সুমনের কথা মতো উখিয়ার মরিচ্যায় যান তার প্রেমিকা। সেখানে তাদের বিয়ের ব্যাপারে অনেক কথা হয়। এরপর ছাত্রীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিকালের দিকে উখিয়ার ইনানী নিয়ে যান সুমন। সেখানে তারা উঠেন সুমনের কয়েকজন বন্ধুর কক্ষে। বন্ধুদের সামনেও তাদের বিয়ের বিষয়ে কথা উঠে। কথার এক পর্যায়ে সুমন ও তার প্রেমিকার মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। সেখানে তারা সিন্ধান্ত নেন মরিচ্যা গিয়ে কাজী ডেকে বিয়ে করবেন। মরিচ্যায় গিয়ে বিয়ের নামে নানা তালবাহানা শুরু করে সুমন। ৭ জুলাই রাত ১০ টার দিকে প্রেমিকাকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায় সুমন।
ওই ছাত্রী আরও বলেন, “যখন সুমন রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায়; তখন রাত ১১ টার দিকে আমি কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন স্যারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি অবগত করি। স্যার উখিয়া থানায় যোগাযোগ করে সেখানে যেতে বলেন। স্যারের কথায় আমি রাত সাড়ে ১১ টার দিকে উখিয়া থানায় হাজির হয়ে ওসি মর্জিনা আক্তারকে সব বিষয় খুলে বলি। বলার পর থেকে আমার উপর নির্যাতন শুরু করে।” ছাত্রী বলেন, “প্রথম দফায় আমাকে ব্যাপক মারধর করেন ওসি নিজেই। এরপর দ্বিতীয় দফায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য (পুরুষ) আমাকে মারধর করে। পুলিশের ব্যাপক মারধরে আমার সারা শরীরে আঘাত হয়। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্তক্ষরণও হয়। পুরো শরীর জুড়ে পুলিশি নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। হিজাব দিয়ে চোখ বেঁধে এবং হাত কড়া পরিয়ে মারধর করা হয়। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তলপেটে লাথি মেরেছে বেশি। যার কারণে পরনের জামাও রক্তাক্ত হয়ে যায়। শারীরিক নির্যাতনের সময় অনেক মন্দ গালিগালাজ করা হয়। ‘কনষ্টেবল সুমনের সাথে যোগাযোগ না রাখার হুমকি দিয়ে দফায় দফায় মারধর করা হয়। এমনকি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে চালান করে দেওয়ার হুমকিও দেন ওসি। ইয়াবার কথা শুনে তাদের সব কথায় রাজি হয়। এর পরের দিন ৮ জুলাই (বুধবার) আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করেন ওসি। বাবা উখিয়া থানায় এসে আমাকে নিয়ে যান। কিন্তু আমার মোবাইল ফোনটি রেখে দেন ওসি।’
তিনি বলেন, বাসায় এসে চকরিয়ার একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। ৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ডাক্তার দেখায় চকরিয়ার একটি হাসপাতালে। আঘাতের চিহ্ন দেখে ডাক্তারও রীতিমত অবাক হন। এরপর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। ওই ছাত্রী বলেন, সুমন দেখে শুনে আমার সাথে সর্ম্পক করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সর্ম্পকও করেছে। তাই বলে আমাকে এমন নির্যাতন করবে মেনে নিতে পারছি না। মহিলা ওসি নিজে মেরেছে ঠিক আছে; কিন্তু পুরুষ পুলিশের দ্বারা নির্মম মারধর করা হয়েছে। আমার শরীর দেখলে বুঝা যায় কেমন নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। আমি এর বিচার চাই। বিচারের জন্য আমি আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd