সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২০
বাবর হোসেন :: চিহ্নিত দুই মিডিয়া চাঁদাবাজকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা না দেয়ার কারনে প্রচন্ড লকডাউন কালীন সময় গত রমজান মাসে সুরমা মার্কেটের দুজন কৃষি পণ্য বিক্রেতাকে বন্দর বাজার ফাঁড়ীর তিন পুলিশ সদস্য আটক করে নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার হাজতখানায় বন্দী করে রেখেছিলো। ক্রাইম সিলেট,র আবুল হোসেনের মাধ্যমে খবরটি পেয়ে আমি মোবাইলে তৎপরতা শুরু করি।
কোতয়ালীর সহকারী কমিশনার নির্মল চক্রবর্তী এবং ওসি সেলিম মিয়ার নির্দেশে ফাঁড়ীর ইনচার্জ আকবর ভূইয়া বাধ্য হয়েছিলেন ১ ঘন্টার ভিতরে থানা হাজত থেকে দুই কৃষি পণ্য বিক্রেতাকে মুক্ত বাতাসে ছেড়ে দিতে। সেই সংবাদটি এসি এবং ওসির বরাত এবং ভূমিকা উল্লেখ করে বাংলার বারুদ ও সিলেট প্রেস নামক অনলাইনে প্রকাশ হয়েছিলো।
ডিজিটাল এক্সপার্ট সাংবাদিকের অফিসার,রা সাংবাদটির লিংক এসএমপি,র তৎকালীন মিডিয়া অফিসার সহ কয়েক সিনিয়র অফিসারকে দিয়েছিলেন কিন্তু সেই তিন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার তাক্কৎ এসএমপি,র কোনো ‘সৎ-অসৎ, কর্মকর্তার হয়েছে বলে’ আমার জানা নেই। কৃষি পণ্য বিক্রেতারা এখনো আছে সুরমা মার্কেটে, ব্যবসা করছে। গত আগষ্ট মাসে মোগলবাজার থানার কুচাই,র ফয়েজ নামে এক সিএনজি চালককে ঠিক রায়হানের ষ্টাইলে আটক করে নিয়ে বন্দর ফাঁড়ী নামক গারদে বিভিন্ন কায়দায় নির্যাতন করে তার হাত-পায়ের নখগুলো প্লাস দিয়ে ছিড়ে ফেলা হয়েছিলো। সেই রাতে ফয়েজের মা,র কি আর্তনাদ! কি আহাজারী! শেষ পর্যন্ত কনেষ্টবলদের খুশি করে ছাড়িয়ে নিতে হয়েছিলো ফয়েজের মা কে।
ঘটনার বেশ কিছু দিন পরে এসএমপির, অপর এক সাব ইন্সপেক্টরের মাধ্যমে খবরটি পেয়েছিলাম। ঘটনার ব্যাপার আমার মাধ্যমেই অবগত হয়েছিলেন এসি নির্মল চক্রবর্তী এবং ওসি সেলিম মিয়া। আমি জানতাম গারদের একজন কনেষ্টবলকে কিছু করা বা বলার মত প্রাতিষ্ঠানিক চেইন অব কমান্ড দুই কর্মকর্তার নেই, তদুপরি জানিয়েছিলাম এই ভেবে দেখি তারা দুজন কি করেন। ওসি সেলিম মিয়া আইসি আকবরকে কিছু বলেছিলেন এমন আলামত আমি পেয়েছিলাম। বুদ্ধি ও বিবেক প্রতিবন্ধী কিছু দুষ্ঠ প্রকৃতির মিডিয়াবাজরা ইনিয়ে-বিনিয়ে এমন ভাবে রিপোর্ট কিংবা প্রতিবেদন লিখছে, তারা যেনো বোকারাম জনগণকে বুঝাতে চাইছে এসএমপি,র সিনিয়র এবং ‘সৎ-অসৎ’ অফিসারগণ স্বাস্থ্য কর্মী রায়হানের মৃত্যুর ঘটনার মাধ্যমে এই প্রথম ফাঁড়ী কিংবা গারদের পুলিশ সদস্যদের টাকা রোজগারের ষ্টাইল সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
বুদ্ধি ও বিবেক প্রতিবন্ধী মিডিয়াবাজরা যেভাবে লেখনী উপস্থাপন করছে তাতে টের পাওয়া যায় এসএমপিতে পোষ্টিং বাণিজ্য নামে কোনো সুড়ঙ্গ পথ নেই, এমনটি তারা বুঝাতে যাচ্ছে। ফাঁড়ী কিংবা গারদের ভিতর পুলিশ-পাবলিক নির্যাতনে স্বাস্থ্য কর্মী রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা হলো এসএমপি,র সিনিয়র অফিসারদের পোষ্টিং বানিজ্যের চূড়ান্ত ফসল। তবে আমি বলবো বন্দর ফাঁড়ী পুলিশের পাপ বহু দিনে বালেগ হয়েছে। যে পাপের ভাগীদার এসএমপি,র পোষ্টিং বাণিজ্যকারী প্রত্যেকটি সিনিয়র অফিসারকে হতেই হবে। ফাঁড়ী কিংবা গারদে পোষ্টিং দিতে বা নিতে গেলে ইনচার্জকে ১০/১২ লাখ টাকার লেনদেন গোপনে নয় ওপেন করতে হয়। কনেষ্টবলকেও লেনদেন করে ফাঁড়ী কিংবা গারদে পোষ্টিং দেয়া কিংবা নেয়ার মত প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হতে হয়। ‘গারদের ভিতরে পুলিশ-পাবলিক, একটি কথা উল্লেখ করলাম এজন্যে যে, টাকার জন্য মানুষকে নির্যাতন, যেমন প্লাস দিয়ে হাত পাঁয়ের নখ ছিড়ে দেয়া এবং মেয়ে মানুষের স্পর্শ কাতর স্থানে তল্লাশীর নামে হাত বসিয়ে ভেঁপুবাজানোর ষ্টাইলে আঙ্গুল চালানো কিংবা দুই উরুর মধ্যখানে আঙ্গুল দিয়ে ‘সতী-অসতী’ পরীক্ষার কাজটি কিন্তু একা পুলিশ সদস্যরাই করে না। এসএমপি,র একেকটা ফাঁড়ী কিংবা গারদ হলো ১০০ হালি ডিম দেনেওয়ালা হাঁস।
সেই হাঁসকে কিংবা তার রাখালদের কিছু বলা যাবে না। আপ টু বটম সকলেই এসব হাঁসের ডিমের সুবিধা ভোগী, কেউ বেশী কেউ কম। বন্দর গারদের ভিতরে নির্যাতনের শিকার হয়ে স্বাস্থ্যকর্মী রায়হানের মৃত্যু সংক্রান্ত যে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে কোতয়ালী মডেল থানায়, সেটি রুজু হয়েছে উপ পুলিশ কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, এর একটি লিখিত নিদের্শনামার ভিত্তিতে। নিহত রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নীর দেয়া এজহারের সাথে ডি সি অফিসের স্বারক নং ৩৩৫৭ মুলে একটি লিখিত আদেশ নামার ভিত্তিতে মামলাটি কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি সৌমেন মৈত্র রেকর্ডের সময় কি করেছেন দেখেন। কোতয়ালীর মামলা নং ২০(১০)২০ এর এফআইআর এর আসামীর কলামটিতে কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি অথচ এজাহার গর্ভে ০১৭৮৩৫৬১১১১ নাম্বার মোবাইলের কথা উল্লেখ রয়েছে। যে মোবাইলটি থেকে রায়হানের বাড়ীতে ফোন করে ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিলো। মামলার এজাহারের বিবরন অনুযায়ী এত নাম্বার মোবাইলের মালিক সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন উল্লেখ করা যেতো কিন্তু তা করা হয়নি। মামলাটি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারা সহ ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের ১৫(১)(২)(৩) ধারায় রেকর্ড করা হলেও ঘটনাস্থল এবং ঘটনাকারী হিসেবে এফআইআর এর কলামে উল্লেখ করা হয়েছে কে বা কারা বাদীনির স্বামীকে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ীতে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারন আইনের ধারায় মামলা রেকর্ড করেও উল্লেখ করা হলো কে বা কারা।
তাহলে কি পুলিশ ফাঁড়ীর অভ্যন্তরে পুলিশ সদস্যরাই শুধু অবস্থান করে না কে বা কারাও থাকে। প্রশ্ন হলো, সেই কে বা কারা বলতে কি বুঝানো হয়েছে এবং কার হেফাজতে রায়হানের মৃত্যু হলো? রায়হান হত্যা মামলার এফআইআরে এ ধরনের গড়মিলের ব্যাপারটি সিনিয়র ‘সৎ-অসৎ’ অফিসারদের চোখে পড়লো না কোনো? আবারো উল্লেখ করতে হচ্ছে বন্দর ফাঁড়ীর পুলিশের পাপ পূর্ণ হতে-হতে বালিগ, হয়ে যাবার কারনেই এমনটি হয়েছে বলে আমি মনে করি। কত নারীর ইজ্জতের উপর পাপী পুলিশ সদস্যদের কালো থাবা পড়েছিলো বিগত দিনগুলোতে, কত পিতার, কত ভাই,র কত স্বামীর আহাজারী আল্লাহর দরবারে পৌছে গেছে কিন্তু এসএমপি,র পোষ্টিং বাণিজ্যকারী ‘সৎ-অসৎ, সিনিয়র অফিসারদের চোখেও পড়েনি, কানে শোনেনি। আর এসব কিছুর সময়টা কিন্তু রায়হান হত্যা মামলার এফআরআই এ উল্লেখিত সময় অর্থাৎ ভোর রাত ৪ টা থেকে সাড়ে ৬টা ৭টা পর্যন্ত। মেয়ে লোক,কে তার সাথে থাকা পুরুষ আত্মীয়র কাছ থেকে নামিয়ে নিয়ে ফাঁড়ীর ভিতরে নিয়েই গেইট বন্ধ করে দিতো, কারো কিছু বলার ছিলোনা, সবাই যেনো পুলিশ পরিচয়ধারী হায়নাদের কাছে অসহায় অবস্থায়। মেয়ে লোকটি যখন ফাঁড়ীর ভেতর থেকে বের হতো, তখনই বুঝা যেতো তার উপর কি নির্যাতন হয়েছিলো, জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশীদের নামে। ভোর বেলা কিংবা সকাল বেলা থানার ওসি কিংবা যেকোন সিনিয়র অফিসারকে ফোন করে দেখবেন কি বিরক্তির কন্ঠে কথা বলেন। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করলে জেরার উত্তর দিতে দিতেই সব কিছু শেষ হয়ে যায়।
ভোর কিংবা সকাল বেলা সিনিয়র কোনো অফিসারের রাউন্ড ডিউটি কারো চোখে পড়ে না কোনোদিন। নগরীর মহাজনপট্টি রোড থেকে কাষ্টঘরগামী রাস্তাটি যেনো সীমান্তবর্তী এলাকা পুলিশের কাছে। অথচ রানা-দিলালের তীর জুয়াবোর্ড সহ ইয়াবার স্পটগুলো পোষাকধারী সাদা পোষাকধারী পুলিশ নিজেরাই পাহারা দিয়ে রাখে। রায়হানের মৃত্যুকে গণ পিটুনীতে ছিনতাইকারীর মৃত্যু উল্লেখ করে কোন মিডিয়া অফিসারের বরাত দিয়ে অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছিলো? তার উত্তর দেয়ার সাহস আছে কি কারো?
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd