সিলেট ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৩৫ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৭, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে যুবক রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া এখনো অধরা। তাকে ধরতে কাজ করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তিনি যাতে কোনোভাবে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য দেশের সব ইমিগ্রেশনে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে। আকবরের খোঁজ পেতে এখন চেষ্টা চালাচ্ছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশও (এসএমপি)। তবে প্রশ্ন উঠেছে, আকবর পালালেন কীভাবে, না কি তাকে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এসএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘‘আকবর আমাদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়েছেন, প্রতারণা করেছেন। ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ, এসআই আকবর পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, ‘আমি কেন পালাব, আমি তো কোনো কিছু করিনি। তাকে মারিনি। তাহলে পালিয়ে কেন অযথা ঝামেলা বাড়াব’’।
রায়হানের মৃত্যুর পর দিনই এসআই আকবরসহ ফাঁড়ির চার পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করে এসএমপি। ওই সময় তাদের সিলেট নগরী ছেড়ে অন্যত্র না যেতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্তদের প্রতিদিন পুলিশ লাইনে হাজিরা দেওয়ার কথা। কিন্তু বরখাস্ত হওয়ার পর দিন আর পুলিশ লাইনে রিপোর্ট করেননি আকবর। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই খবর রটতে থাকে আকবর লাপাত্তা হয়েছেন। তবে এসএমপির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা শুরুতে বিষয়টি স্বীকার করতে রাজি হননি।
ওই সময় এসএমপির মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেছিলেন, ‘আকবর লাপাত্তা কি না সেটা আমার জানা নেই, আকবর লাপাত্তা একথাও আমি কোনো মিডিয়াকে বলিনি। আকবর তো পুলিশ লাইনেই থাকার কথা।’
এমন বক্তব্যের পরদিন বুধবার এসএমপির মিডিয়ার দায়িত্ব থেকে জ্যোতির্ময় সরকারকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহেরকে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এসআই আকবর গা ঢাকা দেওয়ার আগে ফাঁড়িতে রায়হানকে নির্যাতনের কিছু আলামতও মোছার চেষ্টা করে গেছেন। প্রযুক্তিতে পারদর্শী এক বন্ধুর সহায়তায় তিনি ফাঁড়ির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার হার্ডডিস্ক খুলে সেখানে নতুন ডিস্ক লাগিয়েছেন। তবে বিষয়টি এখনও স্বীকার করেননি এসএমপির কর্মকর্তারা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের বেড়তলা বগইর গ্রামের জাফর আলী ভূঁইয়ার ছেলে আকবর হোসেন ভূঁইয়া পুলিশে যোগ দেন ২০১৪ সালে। প্রায় বছরখানেক আগে তিনি সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পান।
জানা যায়, নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র বন্দর ফাঁড়ির দায়িত্ব পেয়ে টাকার নেশায় বুঁদ হয়েছিলেন আকবর। রাতারাতি টাকার পাহাড়ও গড়েছেন বলে অভিযোগ। তার বাড়িতে উঠেছে আলিশান দালান। স্থানীয়রা বলছেন, আকবরের পরিবার অল্পদিনেই বদলে গেছে। এখন তাদের অনেক টাকা। ইতিমধ্যে তারা প্রচুর ভূ-সম্পত্তির মালিক হয়েছে। আকবরের স্কুল শিক্ষক বাবাও একটি মামলায় ইতিপূর্বে জেল খাটেন। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বন্দরবাজার ফাঁড়িতে দায়িত্ব নেয়ার পর এসআই আকবর হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসায়ী ও ছিনতাইকারী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে টাকা নেয়া, বন্দরের কয়েকটি আবাসিক হোটেল থেকে মাসোহারা আদায় করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
শনিবার রাতে নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। এসময় পুলিশের মোবাইল ফোন থেকে বাসায় ফোন করে রায়হান বলেছিলেন তাড়াতাড়ি ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে গিয়ে তাকে বাঁচাতে।
পরে তার চাচা ফাঁড়িতে ছুটে গেলেও পুলিশ জানায়, রায়হান অসুস্থ হওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। সেখানে গিয়ে মর্গে রায়হানের লাশ পান পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কোনো আসামির নাম না থাকলেও এজাহারে বলা হয়েছে, ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে আঘাতের অসংখ্য চিহ্ন এবং নখ উপড়ানো ছিল।
পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে রায়হান হত্যা মামলা এখন তদন্ত করছে পিবিআই। তদন্তের শুরুতেই তারা রায়হানের লাশের পুনরায় ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। বৃহস্পতিবার কবর থেকে লাশ তুলে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান, সহকারী অধ্যাপক শামসুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘রায়হানের শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তাকে প্রচণ্ড মারধর করা হয়েছে। এতেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। কিছু রাসায়নিক পরীক্ষার পর মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ জানা যাবে।’
বৃহস্পতিবার পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, মামলা তদন্তের জন্য এসআই আকবরকে খুব দরকার। কিন্তু তিনি এখন পলাতক। তাই তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।
শুক্রবার এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বলেন, এসআই আকবরকে গ্রেপ্তার করতে এসএমপিও সচেষ্ট রয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd