সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবিসি পয়েন্ট। এ, বি এবং সি ব্লকের মিলনস্থল এই পয়েন্টকে সংক্ষেপে এবিসি পয়েন্ট ডাকা হয়। এই এবিসি পয়েন্টের নিয়ন্ত্রণ বর্তমানে কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতে। এই পয়েন্ট ছাড়াও, উপশহর এলাকার বিভিন্ন স্থানের অলিখিত দখলদার সেলিম বাহিনীর কর্মীরা। এবিসি পয়েন্টে নিয়মিত বখাটে ছেলেদের আড্ডা বসলেও, ভয়ে কথা বলার সাহস নেই সাধারণ মানুষের।
২০১৮ সালের ৩ জুন দুপুর ২টায় সেই এবিসি পয়েন্টের পাশেই কাউন্সিলর সেলিম গ্রুপের কর্মী, চিহ্নিত জুয়াড়ি আরজু মিয়ার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হন কোরআনে হাফেজ এখলাছুর রহমান। তিনি জকিগঞ্জ উপজেলার নিয়াগুল গ্রামের মৃত আব্দুল মালিকের ছেলে। সে সময় সুবিচার পাননি হাফেজ এখলাছ। পরবর্তীতে বাসা পরিবর্তন করে শিবগঞ্জ এলাকায় চলে যান তিনি। পরবর্তীতে আপস করতে বাধ্য হন হাফেজ এখলাছ। দেড়মাস আগে উপশহর এলাকা থেকেই আরো ১৯ জুয়াড়ির সাথে গ্রেপ্তার হন আরজু।
একই বছরের ২৫ অক্টোবর সরকারি তিব্বিয়া কলেজের সামনে কাউন্সিলর সেলিমের বিশ্বস্ত কর্মী ও ছাত্রলীগ নেতা হুমায়ুন রশীদ সুমন (এইচ আর সুমন), চঞ্চল কুমার দাস, নিয়াজ, তুহিন, কাজী জুবায়ের আহমদ, রাহাতের হামলায় নিহত হন একই গ্রুপের জুনিয়র কর্মী জাহিদ হোসেন (১৮)। নিহত জাহিদ তেররতন এলাকার আবুল কালামের ছেলে ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম গ্রুপের উপ গ্রুপ যুবলীগ নেতা মিন্নত গ্রুপের ছাত্রলীগ কর্মী ছিলেন। ওই ঘটনায় মামলাও দায়ের হয় শাহপরাণ থানায়। হত্যাকান্ডের ২ বছর পার হলেও মূল আসামিরা রয়ে গেছেন অধরা। প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছেন তারা। কাউন্সিলর সেলিমের অনুসারী, একাধিক মামলার আসামিরাই মূলত নিয়ন্ত্রণ করেন পুরো উপশহর এলাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওই মামলার আসামিদের মাথায় ছাদ হিসেবে আছেন কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম। তিনিই খুনীদের রক্ষাকর্তা। কারণ, তারাই টাকার যোগান দেন তাকে।
সরেজমিনে জানা গেছে, প্রতিদিন উপশহর ডি-ব্লক এলাকার ভাঙ্গা বিল্ডিং সংলগ্ন মেইন রোডের দু পাশে ভ্রাম্যমাণ সবজি, মাছ ও মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকেন সেলিম গ্রুপের কর্মী চঞ্চল কুমার দাস, কাজী জুবায়ের, এইচ আর সুমন এবং মিন্নত আলী। প্রতিদিন ওই স্থানে অর্ধশতাধিক সবজি ও মাছ বিক্রেতা বসেন। সেখানে মুরগীর দোকান রয়েছে ১টি এবং ১টি গরুর মাংসের দোকান রয়েছে। স্থায়ীভাবে ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি করা প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে দিনপ্রতি ২শ টাকা করে চাঁদা নেন সেলিম বাহিনীর সদস্যরা। প্রত্যেক মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আদায় করা হয় ২শ টাকা। অস্থায়ী সবজি ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় বসলে তাদের কাছ থেকেও ১শ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হয়। ই-ব্লকে থাকা একমাত্র মাংসের দোকানে গরু জবাই হলে সেখান থেকেও ২ হাজার টাকা করে চাঁদা নেন কাউন্সিলর সেলিম বাহিনীর চাঁদাবাজরা। মুরগীর দোকান থেকে প্রতিদিন আদায় করা হয় ৩/৪শ টাকা।
স্প্রিং টাওয়ার সংলগ্ন এলাকা এবং ই-ব্লক এসএমপি’র ট্রাফিক অফিসের পাশেই বিক্রি হয় ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদকদ্রব্য। চঞ্চল, তামিম হাসান হৃদয় এবং মিন্নতের নেতৃত্বে সন্ধ্যার পরপরই ইয়াবা বিক্রি ও সেবন করা হয় সেখানে। কাউন্সিলর সেলিমের আরেক কর্মী শাহীন (সিএনজি শাহীন)। তিনি আছেন শিলং তীর খেলার নিয়ন্ত্রক হিসেবে। সাদারপাড়া পয়েন্ট, উপশহর পয়েন্ট, লামাপাড়া, তেররতন, পশ্চিম তেররতন ও ট্রাফিক অফিসের মোড়ে জুয়াড়িদের মিলনমেলা বসে। শাহীন, হিমু, সাইদু, আরজু ও আনোয়ারের নিয়ন্ত্রণে চলে উপশহর এলাকার শিলং তীরের বোর্ড। হাজারে দেড়শ টাকা কাউন্সিলর অফিসে।
সময়ের সাথে সাথে ডিজিটাল হয়েছে জুয়াড়িরাও। মোবাইলে, ম্যাসেঞ্জার, ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপেই চলে বাজী ধরা এবং জুয়া খেলার টিপস আদান-প্রদান। সারা দিনে চাঁদাবাজির সব টাকা সন্ধ্যায় কাউন্সিলর সেলিমের অফিসে আসে। নিয়ে আসেন এইচ আর সুমনই। সেখান থেকে হয় ভাগ বাটোয়ারা। একটা অংশ পান কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিম। বাকিটা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করে নেন উত্তোলনকারী চাঁদাবাজেরা। সিনিয়র হিসেবে পুরো গ্রুপের নেতৃত্ব দেন সরকারি কমচারীর উপর হামলা এবং সরকারি গাড়ি ভাঙচুর মামলার আসামি কামাল উদ্দিন। কাউন্সিলর ছালেহ আহমদ সেলিমের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি, সরকারি গাড়িতে হামলা, বাসাবাড়িতে হামলাসহ একাধিক মামলা থাকলেও, বহাল তবিয়তে তারা বুক ফুলিয়ে অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ওয়ারেন্টভুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তবুও তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন উপশহর এলাকায়। কারণ তাদের পেছনে ছায়া হয়ে আছেন কাউন্সিলর সালেহ আহমদ সেলিম। সূত্র:দৈনিক একাত্তরের কথা
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd