সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল সোয়া ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বরেণ্য এই আলেমের জানাজায় হাজার হাজার মুসল্লির ঢল নামে। জানাজায় ইমামতি করেন মরহুমের ছোট ছেলে মুফতি জাবের কাসেমী। দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ ও রাজনীতিবিদরা এতে অংশ নেন।
জানাজা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিপুল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। জানাজার আগে বায়তুল মোকাররমের আশপাশের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ভোরেই লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে বায়তুল মোকাররম এলাকা।
জানাজায় অংশ নিতে হেফাজতকর্মীরা দূরদূরান্ত থেকে ঢাকায় এসেছেন। ফজরের নামাজে অংশ নিয়েছেন বিপুলসংখ্যক মুসল্লি। তাদের অনেকেই গতকালই ঢাকায় চলে আসেন। হেফাজত নেতাকর্মীদের দাবি, স্মরণকালের অন্যতম বৃহৎ জানাজা এটি।
জানাজার আগে কাসেমীর রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া চান হেফাজতের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, নিজ দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা জিয়াউদ্দিন, কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাক ও আল-হাইআর পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা মাহমুদুল হাসান ও পরিবারের পক্ষ থেকে আল্লামা কাসেমীর ছোট ভাই মাওলানা আবদুল কুদ্দুস। তারা স্মৃতিচারণ করে আল্লামা কাসেমীর কর্মবহুল জীবনের নানাদিক নিয়ে কথা বলেন। আজ আশুলিয়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন ধউর গ্রামে অবস্থিত সুবহানিয়া মাদ্রাসায় তাকে দাফন করা হবে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। আল্লামা কাসেমী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব ছিলেন।
আল্লামা কাসেমীকে দেখতে রোববার হাসপাতালে যান হেফাজতের আমির আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী এবং কওমি অঙ্গনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বহু মানুষ। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মো. ইসহাক ও মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের। এ ছাড়া ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও শোক জানান।
আল্লামা কাসেমীর প্রেস সচিব মুনির আহমদ জানান, ঠাণ্ডা ও শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা হওয়ায় ১ ডিসেম্বর তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সন্দেহে তার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও ফল নেগেটিভ আসে।
হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে নূর হোসাইন কাসেমী সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনের আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর ১৫ নভেম্বর নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। আল্লামা কাসেমী বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি, আল-হাইয়া বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ছিলেন।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার চড্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। গ্রামের স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি শেষ করে চড্ডার কাশিপুর মাদ্রাসায় ভর্তি হন। তার পর তিনি বড়ুরার মাদ্রাসায় হেদায়াতুন্নাহু জামাত শেষ করেন। এর পর ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়িতাজপুর মাদ্রাসায় জালালাইন জামাত পড়েন।
শিক্ষাজীবন শেষে কাসেমী দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যাপনা করেন। নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৭৫ সালে জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসেন। ২০১৫ সাল থেকে জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুয়ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd