সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : যেন সিনেমাকেও হার মানিয়েছে রাজীব-প্রেমা প্রেমিক যুগলের কাহিনী। একজন ওসির মেয়ে হওয়ায় বিয়ের পর বিপাকে পড়েছেন তারা। অপহরণ মামলা দিয়ে ওই প্রেমিকের পরিবারকে হয়রানি ও ওই বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়াকালে রাজীবের প্রেমে পড়ে প্রেমা। একে অপরের ভালোবাসায় জড়িয়ে পড়ে এই প্রেমিক যুগল। পরে বিয়ে করেন তারা। পুলিশ অফিসার বাবা মেয়ের এ প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ। তাই তো প্রেমা-রাজীব সবার কাছে গোপন রাখে তাদের এ সম্পর্কের কথা। তবে এ বিয়ের কথা জেনে যান ওসি।
পরে মেয়েকে বাসায় নজরবন্দি করে রাখেন মাসের পর মাস। যাতে প্রেমিকের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখতে পারে সেজন্য ভেঙে ফেলেন মেয়ের মোবাইল ফোন। এমনকি বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী ও আত্মীয়র সঙ্গেও প্রেমার যোগাযোগ বন্ধ করে দেন প্রেমার বাবা।
এভাবে রাজীবকে ছাড়াই ঘরে নজরবন্দি অবস্থায় প্রেমার কেটে যায় ৭-৮ মাস। এক দিন বাসা থেকে পালিয়ে স্বামীর বাড়িতে ঠাঁই নেয় মেয়েটি। কিন্তু হার মানতে নারাজ তার পুলিশ অফিসার বাবা। পরদিনই মিথ্যা অপহরণ মামলা দেন রাজীব ও তার পুরো পরিবারের নামে। এরপর বিভিন্ন সময় মেয়ে প্রেমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ধামরাইয়ের নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রেমা উঠেছে আশুলিয়ার গকুলনগর স্বামীর বাড়িতে। তবে বাবা পুলিশ কর্মকর্তা মীর শাহীন শাহ পারভেজের ভয়ে তারা আপাতত ভাড়া বাসায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ দম্পতি।
রাজীবের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, ওসি শাহীন পারভেজের জন্য তারা অনেকটা বন্দিদশায় চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন।
ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ ঢাকা জেলা উত্তরের (সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানা) ডিবি পুলিশের ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগ দেন। পরে সেখান থেকে ক্লোজড হয়ে বর্তমানে তিনি মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনে কর্মরত।
সামিয়া আক্তার প্রেমা বলেন, দেড় বছর আগে আমরা বিয়ে করেছি আমার নিজের ইচ্ছায়। বাবাকে আমাদের সম্পর্কের কথা জানিয়েছিলাম। বাবা তখন থেকেই নানাভাবে চাপ দেন। রাজীবের পরিবারের ওপরও চাপ সৃষ্টি করেছেন আমার বাবা।
তিনি বলেন, অনার্স কমপ্লিট হওয়ার পরে আমাকে প্রায় এক বছর বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল। কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেননি। ফোন ভেঙে ফেলেছেন। তারপর গত ৩ নভেম্বর নিজের ইচ্ছায় আমি আমার স্বামীর বাড়ি পালিয়ে আসি। এরপর আমার স্বামী, ভাসুর, শ্বশুর-শাশুড়ির নামে মামলা দেয়া হয়। পরে আমার ভাসুরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। মামলার পর কোর্টে গিয়ে আমি নিজের জিম্মায় আমার স্বামীর কাছে চলে আসি। পরে আমার ভাসুরকেও জামিন দেন আদালত।
আলামিন রাজীব বলেন, আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে একই ডিপার্টমেন্টে পড়াশোনা করতাম। ওখানে আমরা একজন আরেকজনকে পছন্দ করি। পরে আমরা নিজেদের ইচ্ছায় বিয়ে করি।
তিনি বলেন, এরপর থেকে আমাকে ও আমার পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমার ভাইয়ের ওপর হামলা করা হয়েছে। তাই আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, আমার পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়া হোক; যাতে আমি সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারি।
রাজীবের বড়ভাই সরকারি পশু চিকিৎসক ওমর আলী বলেন, আমি একজন সরকারি এআই কর্মী। গত ২২ নভেম্বর সকালে বাসা থেকে আমি ও আমার সহকারী মোটরসাইকেল নিয়ে চাকল গ্রামে যাচ্ছিলাম। এ সময় তিনটা মোটরসাইকেল ও একটা প্রাইভেটকারে ৮-১০ জন আমার পথরোধ করার চেষ্টা করে। পরে আমি ও আমার সহকারী দৌড়ে পালিয়ে যাই। আর আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা দ্রুত চলে যায়।
অভিযোগ নিয়ে শনিবার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন মেয়ে। মিথ্যা অপহরণ মামলা ও তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ওপর হামলার কারণ জানতে চাইলে ওসি শাহীন পারভেজ মেয়েকে জানান, ‘মামলা দিব না, তুমি কোথায় গেছ আমি জানব কীভাবে? মামলা দিয়েছি বলেই তো জানতে পারছি তুমি কোথায় আছ।’
এ সময় প্রেমাকে মারধরের কথাও স্বীকার করেন ওসি। তবে প্রেমার কাছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি মো. শাহিনশাহ পারভেজ তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি পুলিশে চাকরি করি। আমার হাত-পা বাঁধা। ঘটনার দিন আমি ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গভর্নমেন্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে সাব ইন্সপেক্টর ও ইন্সপেক্টরশিপ পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলাম। আমাকে চাপের মধ্যে রাখতে আমার বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ তুলেছে। আমার মেয়েকে গোপনে ভাগিয়ে নেয়ার তাকে পাওয়া না গেলে আমার স্ত্রী ধামরাই থানায় অপহরণ মামলা করে। এরপর আমার মেয়ের সন্ধান পাই। মামলা করা না হলে আমার মেয়ের সন্ধান পেতাম কি করে।
তিনি আরও বলেন, এরপর মো. আবদুর রহমান বাবুল নামে বিএনপি ঘরানার নেতা পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি আমাকে ও আমার ছেলেকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করার জন্য বলে। জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে এ ব্যাপারে ধামারই থানায় একটি সাধারণ ডায়রি দায়ের করা হয়েছে।
অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ধামরাই থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, অপহরণ মামলায় রাজীবসহ তার পরিবারের আরও চার সদস্য আসামি। মামলার পরদিন রাজীবের ভাই ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। তবে আসামিরা সবাই জামিনে আছেন।
আদালতে ওসি শাহীন পারভেজের মেয়ে হাজির হয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন সে ব্যাপারে তিনি বলেন, বিষয়টা সম্পূর্ণ আদালতের। তবে সুষ্ঠু তদন্ত করে মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।
আশুলিয়া থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘বৃদ্ধকে হাতুড়িপেটা করার ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অভিযোগে একজন পুলিশ কর্মকর্তার নামও রয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ করেছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd