সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২১
শামীম আহমদ তালুকদার, সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে এক সময়ের কয়লা শ্রমিক রিয়াজ উদ্দিন অল্পদিনে জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়ায় জনমনে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি শ্রমিক জীবনের শুরুতেই স্বাধীনতা বিরোধী জামাতে ইসলামীর একজন সক্রিয় সদস্য হয়ে রাজনৈতিকভাবে যাত্রা শুরু করেন। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ট্যাকেরঘাট সীমান্তে চোরা চালান, মাদক ও ভারতে অবাধেভাবে শ্রমিক পাঠিয়ে অবৈধ আয়ের মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন রিয়াজ উদ্দিন।
অল্পদিনে কোটিপতি হওয়া নিয়ে স্থানীয় স্থানীয়দের মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়।
জানা যায়, এর পর থেকে তিনি নিজেকে কয়লা ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ও তামান্না এন্টারপ্রাইজ নামে এল.সি লাইসেন্স করেন। তার প্রতিষ্টানের নামীয় লাইসেন্স দিয়ে এলসি মালামাল আমদানী এবং অন্যান্য পরিচিত লোকজনকে দিয়ে ভারত থেকে কয়লার এল.সি শুরু করলেও থেমে যাননি তিনি। মরণ নাশক ইয়াবা ও হিরোইন চোরাইভাবে দেশের ভেতরে আমদানী কওে থাকেন এমন অভিযোগও উঠেছে। এক পর্যায়ে অদৃশ কিছু বিপদগামি শক্তির সাথে তার সখ্যতা গড়ে উঠে। এভাবে অল্পদিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যান রিয়াজ উদ্দিন। আর তাকে পেছনের দিকে থাকাতে হয়নি। তাহিরপুরের সীমান্ত এলাকাগুলোতে সকল অবৈধ কর্মকান্ডের সম্রাট হিসেবে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর কোম্পানীর আমদানীকৃত হাজার হাজার টন চুনাপাথর সংশ্লিলষ্ট অফিসকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। সীমান্ত এলাকায় চলছে রিয়াজ উদ্দিনের ত্রাসের রাজত্ব। তার একক আধিপত্য ও শক্তির কাছে যেন সবাই ছিল অসহায়। সু-কৌশলে কয়লার ব্যবসার অধিক মুনাফার কথা বলে কাছে টেনে নেন পার্শ্ববর্তী এলাকার লাকমা গ্রামের জসিম উদ্দিন, পুটিয়া গ্রামের জহির, কামড়াবন্দ গ্রামের আজিজুল হক, মাটিকাটা গ্রামের আব্দুল্লাহ আল-মাসুদ ও ভৈরবের রাশিদ মিয়াকে। পরবর্তীতে ব্যবসায়িক ব্যর্থতার মারপ্যাচ দেখিয়ে জসিম উদ্দিনের ত্রিশ লাখ, জহিরের লক্ষ লক্ষ, আজিজুল হকের এক কোটি টাকা না দিয়ে অদৃশ এক শক্তির সহযোগিতায় মামলা মোকদ্দমার ভয় দেখিয়ে তাদেরকে ব্যবসায়ীক অংশিদারিত্ব থেকে বের করে দেন। রিয়াজ উদ্দিনের ভাগ্য আকাশে দেখা দেয় নতুন চাঁদ। এরই মধ্যে ভৈরবের রাশিদ মিয়া টাকা না পাওয়ার শোকে ষ্টোক করে মৃত্যু বরণ করেন। অনায়াসে রাশিদ মিয়ার পুঁজির এক কোটি টাকা রিয়াজ উদ্দিনের নিকট। রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অন্তহীন অভিযোগ, ব্যবসা বাণিজ্যের বাহানা করে রাখেন মাটি কাটার আব্দুল্লাহ আল-মাসুদকে। রিয়াজ উদ্দিনের পরামর্শে মাসুদ আর রিয়াজ উদ্দিন যৌথভাবে বাদাঘাট বাজারের পাশে কামড়াবন্দ গ্রামে ২২.৭৬ শতক ভূমি খরিদ করে তৈরী করেন তিনতলা একটি ভবন। এই ভবনেই রিয়াজ উদ্দিন পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গভীর ষড়যন্ত্র করে মাসুদ এর নামে ইসলামী ব্যাংক, সুনামগঞ্জ শাখা থেকে এক কোটি পচিঁশ লক্ষ টাকা টি আর ঋন উত্তোলন করেন। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করার পর রিয়াজ উদ্দিন বাষট্রি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা তার ব্যক্তিগত ব্যবসার কাজে নিলেও বাকী টাকা দিয়ে সুনামগঞ্জ শহরের হাসপাতালের পাশে তিনগুন মুনাফার কথা বলে ২০ শতক ভূমি খরিদ করে মাসুদ এর নামে দলিল করে দেন। কিছুদিন পর মাসুদ সুনামগঞ্জ শহরে ক্রয়ক্রিত ভূমি দেখতে গিয়ে ভূমির মূল মালিকের সাথে পরিচয় হয়। প্রসঙ্গে ক্রমে মাসুদ ভূমির বিক্রয় মুল্য জানতে চাইলে ভূমি মালিক জানান প্রতি শতকের মূল্য ত্রিশ হাজার টাকা। একথা শুনেই মাসুদের মাথায় হাত। এই জায়গা ক্রয়ের জন্য মাসুদ ছিছষ্ট্রি লক্ষ টাকা রিয়াজ উদ্দিনকে বুঝিয়ে দেন। এপর রিয়াজ উদ্দিনের সাথে চলাফেরা থেকে বিরত থাকার সিন্ধান্ত নেন মাসুদ। এই বিষয়ে রিয়াজ উদ্দিন কোন সঠিক জবাব দিতে না পারায় তাদের মধ্যে শুরু হয় ব্যাপক অন্তর দ্বন্ধ। এ অবস্থায় শুরু হয় রিয়াজ উদ্দিনের প্রতিক্রিয়া। প্রথম দিকে মাসুদকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কুরবান নগর ইউনিয়নের মেসার্স আজিজ বিক্স এর পার্টনারশীপ থেকে মাসুদের পুঁজির টাকা ফেরৎ না দিয়ে তাকে বের করে দেয়া হয়। দ্বিতীয় ধাপে বাদাঘাট বাজারের পাশে কামড়াবন্দ গ্রামের তিনতলা ভবন বাসা থেকে মাসুদকে স্বপরিবারে বের করে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, রিয়াজ উদ্দিন ঠান্ডা মাথায় দুষ্ট চক্রের সাহায্য নিয়ে মাসুদ এর নামে ০৪.০১.২০২০ইং তারিখে মাদারীপুর জেলা থেকে মাদক মামলার ভূয়া সাঁজা ওয়ারেন্ট ইস্যু করে তাহিরপুর থানা পুলিশ দিয়ে মাসুদকে গ্রেফতার করানো হয়। ভূয়া ওয়ারেন্ট নিয়ে সর্বমহলে জানাজানি ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
এই ওয়ারেন্ট মামলা থেকে মাসুদ নির্দোষ প্রমানিত হয়ে বাড়ীতে আসার পর রিয়াজ উদ্দিন আবারো মাসুদের নামে ঢাকা ওয়ারী থানায় সিআর ৯০৫২/১৮ নং মামলার কোর্ট প্রসেস নম্বর ৯৯/২০২০ইং ধারা ১৪৩/১৪৪/১৪৮/১৪৯/১৫১/৩২৩/৩২৬/৩০৭ দিয়ে ঢাকা জেলা থেকে ভূয়া গ্রেফতারী পরোয়ানা তাহিরপুর থানায় নিয়ে আসেন। পরে চলচাতুর রিয়াজ তাহিরপুর থানা পুলিশ দিয়ে মাসুদকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে মাসুদ এ ওয়ারেন্ট ভূয়া দাবি করে তাহিরপুর সার্কেলের এএসপি বাবুল আক্তারের শরনাপন্ন হন। সার্কেল এসপি ওয়ারেন্টের কাগজপত্র তদন্ত সাপেক্ষে যাচাই বাছাই করে ওয়ারেন্টটি ভূয়া প্রমাণিত হলে মাসুদকে গ্রেপ্তার না করে বিনা গ্রেপ্তারে ভূয়া ওয়ারেন্ট তামিল করেন। ভূয়া ওয়ারেন্ট সংক্রান্ত বিষয়ে মাসুদ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ১৭.০৮.২০২০ ইং তারিখে সুনামগঞ্জ তাহিরপুর জোন আদালতে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৮৮/২০। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর জোনের বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারকৃৃত আসামী রিয়াজ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করা হলে বিজ্ঞ বিচারক তার জামিন না মুঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরনের নির্দেশ প্রদান করেন। রিয়াজ উদ্দিন জেল থেকে বের হয়ে শুরু করেন নতুন অপকৌশল। ব্যাবসায় অংশিদারিত্ব থাকা অবস্থায় রিয়াজ উদ্দিনের নিকট জমাকৃত কামড়াবন্দ গ্রামের আজিজুল হকের ও মাটিকাটা গ্রামের মাসুদ এর স্বাক্ষর করা ব্যাংকের একাধিক ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রিয়াজ উদ্দিন নিজে ও তাহার অন্যান্য লোক দিয়ে ইচ্ছামত টাকার অংক বসিয়ে আইনি নোটিশ আর চেক ডিজঅনারের মামলা করেন। রিয়াজ বারহাল গ্রামের মুলু হোসেনকে দিয়ে পয়তাল্লিশ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করেন আজিজুল হকের নামে। অথচ মামলার বাদি মুলু হোসেন সরকারী রিলিফএর চাউল খেয়ে জীবনযাপন করেন। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি করকে দিয়ে বাইশ লক্ষ টাকার ও রিয়াজ উদ্দিন নিজে সতের লক্ষ টাকার মামলা করেন আজিজুল হকের নামে। অপরদিকে আজিজুল হক তার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য রিয়াজ উদ্দিনের নামে বহু আগেই চুয়াল্লিশ লক্ষ টাকার মামলা করেছেন সুনামগঞ্জ আমল গ্রহনকারী আদালতে। সেই মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। মাসুদের নামে নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার রিয়াজ উদ্দিনের আত্মীয় শাহ আলম নামের এক লোক দিয়ে আরো নব্বই লাখ টাকার চেক ডিজঅনার মামলা এবং তাহার শ্যালক ভাদেরটেক গ্রামের উজ্জলকে দিয়ে দশ লক্ষ টাকার মামলা রুজু করান রিয়াজ।
রিয়াজ উদ্দিন এর প্রধান উপদেষ্টা স্বপন কুমার দাস বিজ্ঞ আদালতের সীলমোহর ও পুলিশ বিভাগের সবোর্চ্চ কর্মকর্তার সীলমোহরসহ ব্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। তিনি গ্রেফতারের আগে রিয়াজ উদ্দিন নারী সংগঠিত বিষয়ে ট্যাকেরঘাটের পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা ইমাম হোসেন এর কাছে গ্রেপ্তার হলে স্বপন কুমার দাস সু-কৌশলে মোটা অংকের টাকা দিয়ে রিয়াজ উদ্দিনকে ছাড়িয়ে নেন। স্বপন কুমার দাস গ্রেফতার হওয়ার পর রিয়াজ উদ্দিনকে টাকার দাপট দেখিয়ে কৃষকলীগের ব্যানারে বাদাঘাট বাজারে জনসভায় মঞ্চে উঠেন। এভাবেই এক সময়কার রিয়াজ উদ্দিনের ব্যবসায়ীক অংশিদারকে বিভিন্নভাবে হুমকিদামকী প্রদানসহ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা মামলায় জড়ানোর পাঁয়তারা করছেন বলে অভিযোগ ভূক্তভোগীদের।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী ও মামলার বাদি মো. আব্দুলাহ আল মাসুদ জানান, আমি সরল বিশ^াসে রিয়াজ উদ্দিনের সাথে ব্যবসায়ীক অংশিদার হয়েছিলেন। আমার ব্যবসার সবগুলো টাকা রিয়াজ উদ্দিনের পকেটে। তিনি আরো বলেন, ব্যাংক ঋৃনের জ¦ালায় পথে পথে ঘুরে বেড়ালেও দেখার যেন কেউ নেই। উল্টো রিয়াজের একেক সময় মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে আমাকে ফাঁসানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত মো. রিয়াজ উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেও প্রতিপক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ তার ব্যবসায়ীক অংশিদার ছিলেন জানান। তিনি আরো বলেন, মাসুদ সহ তাহিরপুরের বাদাঘাট বাজারে অংশিদারিত্বে ভূমি ক্রয় করেন। মাসুদ এই জায়গার দলিল দিয়ে ইসলামিব্যাংক শাখা হতে এক কোটি পঁিচশ লাখ টাকা লোন উত্তোলন করেন। এই লোনের সুদ অনেকবেড়ে যাওয়ার পর নোটিশ আসে লোন পরিশোধের জন্য কিন্তু আব্দুল্লাহ আল মাসুদ লোন পরিশোধে গড়িমসি করলে পরবর্তীতে ব্যাংক হতে লোন পরিশোধের আরেকটি নোটিশ রিয়াজউদ্দিনের নিকট। পরবর্তীতে সালিশ বৈঠকে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে ও কোন সমঝোতা না হওয়ায় পরবর্তীতে মাসুদ নাকি তার নামে মিথ্যা মামলা মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি করছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সাহেব আলী পাঠান জানান, রিয়াজ এবং আব্দুল্লাহ আল মাসুদের মধ্যে বাদাঘাটের একটি বাড়ি নিয়ে বিরোধের অংশ হিসেবেই বিষয়টি তদন্তের প্রয়োজনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd