নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ। বিদ্যালয়টি কলেজ পর্যন্ত পোঁছে গেছে ভূয়া তথ্য ও ভূয়া দান দলিলের ভিত্তিতে। প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫০ বছর পর বিদ্যালয়ে নামে দেওয়া ভূমির দান দলিল ভূয়া বলে ধরা পড়েছে। এই ভূয়া ও জাল দান দলিলে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দাতা সদস্য হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় ও কলেজ পরিচালনা করছে একটি মহল।
জানা গেছে, উপজেলার আসামপাড়া হাওরের মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেন গত বছরের ১২ অক্টোবর আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিবের কাছে ওই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত তথ্য উপাত্ত জানতে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ সভাপতি উপজলা নির্বাহী অফিসার তার কার্যালয়ের ২ ভিসেম্বর ২০২০ তারিখের ৩০৮৬ নং স্মারকে মোজাম্মেল হোসেনকে জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাকলীন দলিলাদি সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রদান করেন।
সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যে জানানো হয়-উপজেলার জাফলং গ্রামের মরহুম আমির মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ হাবিবুন নেছা ১৯৭০ সালের ২৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে সম্পাদিত ৪০৫৭/১৯৭০ নং দলিলে উক্ত বিদ্যালয়ে ৩.৩৩ একর ভূমি দান করেন,যার মৌজা চৈলাখেল ২য় খন্ড, জেএল ১০৩, খতিয়ান নং -১৭৬ এর ৩২২,৩২৫ ও ৩২৬ নং দাগে ১.১৯ একর এবং একই মৌজার ২০৫ নং খতিয়ানের ৩২৩ ও ৩২৪ দাগ ১.০১ একর এবং ২১৭ নং খতিয়ানর ৩০১ দাগে ১,১৩ একরসহ মোট দানকৃত ৩,৩৩ একর অখন্ড ভূমি এবং ওই ভূমির উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা লাভ করায় এই দান দলিল মূলে বিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় ‘ জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ’। উপরন্তু এই দান দলিল মূলে আলহাজ্ব আব্দুল হাসিম (জমিদার) ও পরবর্তীতে তাঁর উত্তরসূরী শফিউল আলম সেলিম (জমিদার) আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের পর পর প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য হয়েছেন এবং বর্তমানেও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রয়েছেন।
সিলেট জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে তল্লাশী চালিয়ে দেখা গেছে- ২৫ ডিসেম্বর ১৯৭০ খ্রিঃ তারিখে উল্লেখিত মরহুম আমির মিয়ার স্ত্রী মোছাঃ হাবিবুন নেছা দাতা হয়ে ওই বিদ্যালয়ের অনুকুলে ৩,৩৩ একর ভূমির ৪০৫৭/১৯৭০ নং কোন দান দলিল সম্পাদন করেননি। জেলা রেজিস্টার অফিসে ৪০৫৭/১৯৭৯ নং দলিলটি সম্পাদিত হয় ১৫ অক্টোবর ১৯৭০ খ্রিঃ তারিখে,যার দাতা হলেন-গোয়াইনঘাট উপজেলার জৎনা মা (পং ধরগ্রাম)-গ্রামের মরহুম মজিদ আলীর পুত্র আব্দুল গফুর এবং দলিল গ্রহীতা হলেন- গোয়াইনঘাট উপজেলার (ধরগ্রাম পরগনার) নিরাগোল গ্রামের অর্জুন রাম দাসের পুত্র অক্ষয় কুমার দাস, যার ভূমির পরিমান ছিল মাত্র ৩২ শতক।
এতেই প্রতীয়মান হয় গোয়াইনঘাটের জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ-এর নামকরণ ও দাতা প্রতিষ্ঠিতা সদস্যদের দালিলীক কোন ভিত্তি নেই। ভূয়া ও জাল দলিলে দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করে আসছেন সংশ্লিষ্ঠরা। জালিয়তির এ গোমর ফাঁস হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। দলিল জালিয়াতির এ ঘটনা বিদ্যালয়টির সরকারি করণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে বলে অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর আশংকা রয়েছে।
জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি ও গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সম্পাদক মো: মনিরুজ্জামান নিজ স্বাক্ষর ও মোহরে মোজাম্মেল হোসেনের লিখিত পত্র প্রপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে জাফলং আমির মিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ সভাপতি বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমানের মুঠোফোনে বার বার কল দিলে তিনি সাংবাদিকের মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।