সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরায় বাংলাদেশকে নিয়ে করা ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে প্রচারিত প্রতিবেদনটি ফেসবুক- ইউটিউব, টুইটার- ইনস্টাগ্রামসহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে দ্রæত সরাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত রিট নিষ্পত্তি করে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
জৈন্তা বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রিটকারী আইনজীবী ব্যরিস্টার এম এনামুল কবির ইমন। গতকাল রাতে নিজের অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে গিয়ে এই আইনজীবী জানান, এই রিট করার মাধ্যমে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং অপপ্রচার বন্ধে অবদান রাখতে পেরে আমার অনেক ভালো লাগছে। আমি গর্ববোধ করছি।
রিটকারী আইনজীবী সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবীর ইমন বলেন, রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় বাল্যকাল থেকে দেশবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র দেখেছি। আমি যখন এক বছরের শিশু ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর আমার বাবাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তখন থেকেই ষড়যন্ত্রকারীদের তৎপরতা দেখছি। আমরা দেখেছি প্রত্যেকটি সময় বাংলাদেশের যখন কোনো অর্জন হয় অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি শক্তি, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি মিলে মিডিয়ায় অপপ্রচারসহ বিভিন্নভাবে আমাদের অর্জনগুলোকে ¤øান করতে চেষ্টা করে। তারা বাংলাদেশকে হারাতে চায়। এ বিষয়টি আমাকে বারবার তাড়না দেয়। আল জাজিরায় ‘অল দা প্রাইম মিনিস্টারস মেন’Ñ এই ভিডিওটা দেখার পর আমি একই তাড়না বোধ করি। এখানে বাংলাদেশকে মাফিয়া স্টেট বলা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সেনাবাহিনীর প্রধানসহ সবাইকে দেশে এবং দেশের বাইরে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা ন্যাক্কারজনক ও ষড়যন্ত্রমূলক। মাফিয়া স্টেট একটা খুব বাজে বিষয়। সেনাবাহিনীর সাথে ইসরাইলের কেনাকাটা নিয়ে যে কথা তারা তুলেছে তা নিয়ে জাতিসংঘও বলেছে বিষয়টা তদন্ত করা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মূলত এসব প্রচারের মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে একটা বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে। এটা একটি ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ কিন্তু আজ একটি সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছে। আজকেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান স্বীকার করেছেন, বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। আমি যখন দেশের বাইরে যাব সবাই বলবে একটি মাফিয়া স্টেটের লোক এসেছে। আমার আন্তর্জাতিক লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতেই আমি রিট করেছি। ১ ফেব্রæয়ারি থেকে ৬ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত যখন দেখলাম সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি প্রচার হচ্ছে কিন্ত বিটিআরসি কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না তখন আমি সংক্ষুব্দ হয়েছি। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে দেশের যেকোনো কষ্ট স্বাভাবিকভাবেই আমাকে ব্যাথিত করেছে। এতে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এজন্য জনস্বার্থের বিষয়ে আমি আদালতের দ্বারস্ত হয়েছি।
তিনি জানান, আদালত অনেক পর্যবেক্ষণ করেছেন। এমিকাস কিউরি নিযুক্ত করেছেন। সবশেষে আজকে যে রায়টা হয়েছে তা এই মুহ‚র্তে দরকার ছিল। রিটে বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনার পাশাপাশি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ নামে সম্প্রচারিত প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনা চেয়েছিলাম। আদালত আজ ওই ডকুমেন্টারিটি সকল অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অবিলম্বে সরাতে বিটিআরসিকে আদেশ দেন। তবে বাংলাদেশে আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধে কোনো আদেশ দেননি।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানি করেন। অন্যদিকে বিটিআরসির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রেজা- ই রাকিব। আদালতে আরও সংযুক্ত ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী ও বিটিআরসির পক্ষে ব্যারিস্টার রেজা- ই রাকিব। রিটের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমরানুল কবির ও ফারজানা শায়লা।
গত ৮ ফেব্রæয়ারি আল জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ এবং বাংলাদেশকে নিয়ে করা প্রতিবেদন ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে সরানোর নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন।
১০ ফেব্রæয়ারি আল জাজিরার প্রতিবেদন বিষয়ে মতামত শুনতে ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন হাইকোর্ট। পরে ১৫ ফেব্রæয়ারি আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, কামালুল আলম, প্রবীর নিয়োগী, ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল, আব্দুল মতিন খসরু ও শাহদীন মালিক হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
আল জাজিরায় গত ১ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ নিয়ে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়, যা ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেদনে উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। সরকারিভাবে এই প্রতিবেদনের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd