সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২১
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: পরিবেশ ও প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষিত জাফলংয়ের পাথর তোলার প্রস্তুতি টেকাতে টাস্কফোর্সের অভিযানে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে জাফলংয়ের ডাউকি নদের একাংশে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছিল। রাতের বেলা কাজটি করার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক টাস্কফোর্সের অভিযান চালিয়ে খননযন্ত্র দিয়ে সেই বাঁধ রাতেই অপসারণ করে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমানের নেতৃত্বে সোমবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এ অভিযান হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে ‘মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন’। জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা আজ মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটি পরিশোধ করেছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দাবি, কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে রাতের বেলা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত বাঁধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।
জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন গত বছরের ১৭ আগস্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশনার একটি চিঠির মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনকে জাফলংয়ের চৈলাখেল (তৃতীয় খণ্ড) মৌজার ৬ দশমিক ৫৮ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা ভূমি বলে জানিয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, চুনাপাথর উত্তোলনের জন্য ১৯৭২ সালের ১১ অক্টোবর ওই ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৭৮ দশমিক ২৭ একর ভূমি ‘মাইনিং লিজ’ নেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ৪ ডিসেম্বর ও ১২ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের ভূমিসংশ্লিষ্ট দপ্তর কোনো প্রকার বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই বন্দোবস্ত বাতিল করে। পরে প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হলে সম্প্রতি ভূমির ভোগদখল বজায় রাখার আদেশ হয়।
মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের দুই ব্যবসায়ী তখন অভিযানে থাকা লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় ১৮৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফছার উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জাফলংকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা হয় ২০১২ সালে। সেই প্রজ্ঞাপন জারি হয় ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকে বালু ও পাথর কোয়ারি হিসেবে ইজারা বন্দোবস্ত কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। বালু ও পাথর উত্তোলনও বন্ধ রয়েছে। পরিবেশ ও প্রকৃতির উন্নয়নে জাফলংয়ে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডাউকি নদ থেকে আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইসিএ। ঘোষিত এলাকার মধ্যে জাফলংয়ের ডাউকি নদ এবং এ নদের উভয় পার থেকে ৫০০ মিটার প্রস্থের এলাকাসহ বল্লাঘাটের বিপরীত দিকে পিয়াইন নদ পর্যন্ত বিস্তৃত পুরো খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে।
ইউএনও তাহমিলুর রহমান বলেন, ইসিএভুক্ত এলাকায় ইসিএ–বিরোধী যেকোনো কাজ করা আইনত অপরাধ। নদে বাঁধ দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে রাতের বেলা তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হয়। মেসার্স জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের দুই ব্যবসায়ী তখন অভিযানে থাকা লোকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ এবং সরকারি কাজে বাধার সৃষ্টি করেন। এ অবস্থায় ১৮৯ ধারায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফছার উদ্দিনকে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। নদের গতিপথ রোধ করায় তাঁদের জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানকালেই খননযন্ত্র দিয়ে পরিবর্তিত গতিপথ স্বাভাবিক করা হয়েছে।
সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও জরিমানা সম্পর্কে জানতে চাইলে জালালাবাদ লাইম ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফছার উদ্দিন দাবি করেন, তাঁরা নদে কোনো রকম বাঁধ বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেননি। উচ্চ আদালত নির্দেশিত তাঁদের অধিগ্রহণ করা ভূমি থেকে নদের পানি সরাতে পাইপ স্থাপন করছিলেন। এ কাজ ইসিএভুক্ত এলাকার বাইরে হচ্ছিল। তাঁদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রাতের বেলা পরিচালিত এই অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁরা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd