সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২১
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: এক সাথে দুটি ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করা নিয়ে আবারও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ৩০ সদস্যের ঘোষিত কমিটির সদস্যরা দুটি পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি অঙ্গন। যে কোন সময় দুটি পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষেও আশংকা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ‘স্বাধীনতা দিবস’ উপলক্ষ্যে ঘোষিত ১০ দিনের কর্মসূচি থেকে ছাত্রলীগের কর্মসূচি বাতিল করেছেন। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি নজরধারীতে রেখেছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই শীতল বৈদ্যকে সভাপতি ও মোবারক হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩০ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্বনাথ উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন করেন জেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।
সম্প্রতি সময়ে সভাপতি শীতল বৈদ্য বিদেশ গমন করায় গত বছরের ২৪ নভেম্বর একই কমিটির ৩য় সহ সভাপতি পার্থ সারথি দাশ পাপ্পুকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। দায়িত্ব পাওয়ার পর পাপ্পু-মোবারক একত্রে কাজ করলেও কমিটির একটি বৃহৎ অংশ পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বর্তমান সময়ে ওই ৩০ সদস্যের কমিটির ১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, ৪ জন রয়েছেন বিদেশে এবং আরো ৭ জনের অবস্থান ওই দুই পক্ষের কার সাথে না গিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছেন। এদিক দিয়ে কার্যকরী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৪ জন একই পক্ষে থাকলেও তাদের বিপক্ষে অবস্থান করছেন ১৪ জন ছাত্রলীগ নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পার্থ সারথি দাশ পাপ্পু ও সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসাইন গত রোববার বিকেলে উপজেলার দশঘর ও রামপাশা ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। দুই ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করার পর তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও স্থানীয় সাংবাদিকদেও অবহিত করেন। বিলুপ্ত হওয়া দুটি কমিটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ পূর্ব থেকেই উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিপক্ষে অবস্থান করায় কমিটি বিলুপ্তির বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
এদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এ সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে সোমবার রাতেই এক জরুরী সভা করেন কার্যকরী কমিটিতে থাকা ওই ১৪ ছাত্রলীগ নেতা। এই ১৪ জনের মধ্যে ৭ জন সহ সভাপতি, ৩ জন যুগ্ম সম্পাদক ও ৪ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত রয়েছে। জরুরী সভায় ওই ১৪ নেতা বলেন, কার্যকরী কমিটির কোন সাধারণ সভা বা জরুরী সভা ছাড়াই নিজেদের স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য ‘রামপাশা ও দশঘর’ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী। আর দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না ছাত্রলীগ। আমরা উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রহন করা সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ওই ১৪ ছাত্রলীগ নেতা উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার দাবী জানান।
এবিষয়ে জানতে কমিটির প্রথম সহ-সভাপতি রেদওয়ানুল করিম মাছুম ও ১ম যুগ্ম-সম্পাদক শাহ বুরহান আহমেদ রুবেল জানান, কার্যকরি পরিষদের কোন সভা বা সিদ্ধান্ত ছাড়াই দুই ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে, যা সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। এটা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সেচ্ছাসারিতা। এ সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। আমরা তৃণমূল ও উপজেলা ছাত্রলীগ মিলে তাদেরকে কমিটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন বলেন, তৃণমুলে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডকে শক্তিশালী করতে কার্যকরি পরিষদের সভা করেই উপজেলা কমিটির অধিকাংশ মতামতে করেই আমরা ইউনিয়ন কমিটিগুলো পুন:গঠন করতে যাচ্ছি। তারই ধারবাহিকতায় দশঘর ও রামপাশা ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অলংকারি ও সদর ইউনিয়নের কমিটিও পুন:গঠন করা হবে। ছাত্রলীগের এ নেতা জানান, প্রতিটি ইউনিয়নে অধিকাংশরা বিবাহিত ও অনেকে বিদেশ গমন করে ছাত্রলীগ শুন্যের কৌটায় চলে আসছে। কোন কার্যক্রমও তাদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। মোবারক হোসেন আরও বলেন, এখন যারা কোন একটি গ্রুপের হয়ে আধিপত্য বিস্তার ও ছাত্রলীগের কমিটির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে। আমরা কোন ভাইয়ের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে আমরা ছাত্র রাজনীতি করি।
উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পার্থ সারথী দাশ পাপ্পু বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সিলেটে কর্মীসভায় আসলে তারা আমাদেরকে প্রতিটি ইউনিয়নে ছাত্রলীগকে শক্তিশালি করার নির্দেশনা দেন। তাদের নির্দেশ অনুযায়ী আমারা প্রতিটি ইউনিয়ন কমিটিকে পুন:গঠন করবো। আর আমরা সাংগঠনিক নিয়ম অনুযায়ি এ প্রদক্ষেপ নিয়েছি। পাপ্পু আরও বলেন, যারা ফেসবুকে প্রতিবাদ দিচ্ছে তাদেরকে বারবার আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে ও প্রতিটি সভার আগে দাওয়াতপত্র দিয়েছি। তারা কোন একটি সভা বা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি। তবে, কোনভাবেই ছাত্রলীগের মধ্যে কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd