সুদের টাকা আদায়ের ঘটনায় নারী নির্যাতন, অভিযুক্তের বাবা গ্রেপ্তার

প্রকাশিত: ২:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২১

সুদের টাকা আদায়ের ঘটনায় নারী নির্যাতন, অভিযুক্তের বাবা গ্রেপ্তার

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ‘সুদের টাকা আদায়ের’ জন্য কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় এক নারীকে তার পরিহিত শাড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে পেঁচিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে শওকত আলম (২৮) নামে এক যুবক। এ ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের বাবা জহির আহম্মদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল বুধবার ওই নারীকে নির্যাতনের একটি ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে ঘটনাটি এর আগেরদিন মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের হাফালিয়া কাটা (মোড়াপাড়া) এলাকায় ঘটে।

ভুক্তভোগী নারী (৩০) একই এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে চারজনের নামউল্লেখ করে মোট ছয়জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে- চকরিয়ার বরইতলি ইউনিয়নের হাফালিয়া কাটা (মোড়াপাড়া) এলাকার বাসিন্দা শওকত আলম (২৮), তার বাবা জহির আহম্মদ (৫০), তার মা সুফিয়া খাতুন (৫০) এবং শওকতের স্ত্রী শাহিনা আক্তারকে (২৩)। এছাড়া আরও দুইজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, গ্রামের একটি রাস্তার ধারে এক নারীকে তার পরিহিত শাড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছেন এক যুবক। এরপর ওই নারীর চুলের মুটি ধরে যুবকটি কিল-ঘুষি ও লাথি মারছেন। এক পর্যায়ের যুবকটির মাও লাঠি হাতে সেখানে উপস্থিত হন। পরে তিনিও লাঠি দিয়ে ওই নারীকে গুঁতা মারতে থাকেন। শারীরিক নির্যাতনের সঙ্গে চলছিল ওই নারীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ।

এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত দুই-তিনজন নারী এসে গাছের সঙ্গে বাঁধা ওই নারীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তারপরও থেমে থেমে চলছিল নির্যাতন।

ভিডিওচিত্রটির পুরো সময় জুড়ে দেখা গেছে, মায়ের ওপর নির্যাতন চালানোর সঙ্গে ওই নারীর বছর-দেড়েক বয়সের এক শিশু সন্তানের করুণ কান্না আর মাকে উদ্ধারের আকুতির সুরও।

গতকাল বুধবার রাতে ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তার স্বামী এক নলকূপ মিস্ত্রীর সহকারী হিসেবে কাজ করেন। বছরখানেক আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এতে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় প্রতিবেশী শওকত আলমের কাছ থেকে সুদের চুক্তিতে ৪ হাজার টাকা ধার নেন তিনি।

ভুক্তভোগী বলেন, ‘গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ধার নেওয়া ওই টাকার অঙ্ক সুদাসলে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে আমি ৮ হাজার টাকা শওকত আলমকে পরিশোধ করেছি। বাকি ছিল আর দুই হাজার টাকা। পাওনা বাকি দুই হাজার টাকা কথা মতো শওকতের কাছে পরিশোধ না করায় আমার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে।’

ওই নারীর ভাষ্য, তার হাতে টাকা না থাকায় গত বৃহস্পতিবার কথা মতো পাওনা পরিশোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শওকতের কাছে পাওনা পরিশোধের জন্য সময় চান। কিন্তু শওকত সময় দিতে রাজি ছিলেন না। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার (ভুক্তভোগী নারী) ওপরে নির্যাতন চালান শওকত।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘গত মঙ্গলবার বিকেলে এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার সময় আমাকে পথরুদ্ধ করে শওকত। একপর্যায়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে টেনে-হিঁচড়ে আমার পরনের শাড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে।’ এ নিয়ে অভিযুক্ত শওকত আলমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এক নারীকে নির্যাতন চালানোর একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসার পরপরই অভিযান চালানো হয়। এসময় অভিযুক্ত নির্যাতনকারী ওই যুবক পালিয়ে গেলেও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

এসপি বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..