সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:১১ পূর্বাহ্ণ, মে ১০, ২০২১
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের এক মানবতার ফেরিওয়ালা আলাউদ্দিন আলাল। যিনি সর্বদাই মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। তিনি অভিনেতা, নাট্যপরিচালক, নাট্যনির্মাতা এবং কমেডিয়ান। তিনি হাসতে ভালোবাসেন, হাসাতে ভালোবাসেন, দেশকে ভালোবাসেন, দেশের মানুষকে ভালোবাসেন। উনার হাসির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে কিছু অসংখ্য যন্ত্রনা। সে যন্ত্রণা তিনি কাউকে শেয়ার করতে চাননা, কারণ তিনি তো বড়ই অভিমানী, মোটেও অহংকারী নন। আমি সরজমিনে তার সাথে কথা বলে উপলব্ধি করতে পারছি যে, মাইক্রোস্কোপ যন্ত্র দিয়েও তার মধ্যে কোন অহংকার খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে একটু বেশি অভিমানী এবং প্রচন্ড রাগী ব্যক্তি।
গুণীজনরা বলেছিলেন যে ব্যক্তির রাগ বেশি তার হৃদয়টা খুবই নরম এবং তার ভালবাসাও বেশি। তার প্রমাণ তিনি অনেকবার দিয়েছেন এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছেন। সেই ভালোবাসা পূর্ণ মানুষ টি নিজে মাঠে আছেন ভালোবাসা বিতরণ করার জন্য। কিন্তু তার ভালোবাসা যে একেবারেই তুচ্ছ! আর সেই তুচ্ছ ভালোবাসা নিয়ে তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা বিশ্বাস করি, পরিপূর্ণ খাঁটি ভালোবাসা তুচ্ছ হলেও নির্ভেজাল থাকে। এবার আসি আসল কথায়। বিশ্বজুড়ে Covid-19 এর প্রভাবে সারা বিশ্ব থমকে গেছে। সারা বিশ্বের মানুষ অসহায় হয়ে পরছে। বাংলাদেশ ও ব্যাতিক্রম নয়। বাংলাদেশের মানুষদের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন সরকার, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার, স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। যার যার অবস্থান থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে যাচ্ছেন। মানুষ মানুষকে সাহায্য করবে, এটাই তো নিয়ম। কিন্তু মানুষের এই দুঃসময়ে একজন মানবতার ফেরিওয়ালা তিনি কি ঘরে বসে থাকতে পারেন! মোটেও না, হয়তো তার (আলা উদ্দিন আলাল) টাকা নেই, সামর্থ্য নেই, তারপরও তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের ভালোবাসা নামক সম্বল টুকু নিয়ে।
করোনার শুরু থেকে একদিনও বন্ধ হয়নি আলা উদ্দিন আলালের মানবিক কাজ। বর্তমানে প্রাবাসীদের কাছ থেকে সাহয্য নিয়ে হাজার হাজার অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। এমনকি সমাজে যাদের কোন স্থান নেই হিজড়া জনগোষ্টীর কথাও স্বরণ করেছেন তিনি। গতকাল সিলেটে প্রায় অর্ধশত হিজড়াকে ত্রাণ দিয়েছেন তিনি।
এ যেন এক মানবতার প্রেমিক। দেশের মানুষ যখন অসচেতন, পাশাপাশি মানুষেরা ক্ষুধার্ত, লকডাউন থাকার কারণে অনেকে যেতে পারছেন না স্ব কর্মস্থলে, তখন তিনি অনেক চিন্তা ভাবনা করে সোসাল মিডিয়ায় একটি হ্যান্ড মাইক এর জন্য আবেদন করেছিলেন। উনার উদ্দেশ্য ছিল, একটি হ্যান্ড মাইক পেলে অলিতে গলিতে মাইকের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করবেন। কিন্তু সেই আশাও ও বিপল হয়ে গেল! কেউ তাকে হ্যান্ড মাইক গিফট করলো না! কেউ গিফট না করলেও তিনি কারও হাতের দিকে তাকিয়ে থাকার মানুষ কিন্তু তিনি নন। সহধর্মিনীর সাথে ভালো করে পরামর্শ করে সারা জীবনের তিলেতিলে জমিয়ে রাখা অলঙ্কারগুলো স্ত্রীর সম্মতিতে বিক্রি করে কাজ শুরু করে দেন। অলঙ্কারগুলো বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রথম যে কাজটি করেন সেটা হলো সুদূর খুলনা থেকে আসা মুসাফিরদের জন্য দেড় মাসের খাবার তুলে দেন তাদের হাতে। তারপর হ্যান্ড মাইক কিনে বেরিয়ে পড়েন সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে।
এ কাজটি তিনি যখন শুরু করেন তখন বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩০ জনের মতো। পুরাতন একটি বাইক, ছুটে চলছে নগর বন্দর, অলিতে গলিতে, মানুষকে সচেতনতার বাণী শোনাচ্ছেন, ধরছেন হাতে-পায়ে। প্রশ্ন করেছিলাম আপনি কেন হাতে পায় ধরছেন? তিনি আমাকে বিশ্বের কয়েকটি দেশের (আমেরিকা, ইতালি, স্পেন) অবস্থা উল্লেখ করে বলেন তারা কত সচেতন তারপরেও তাদের এই করুণ পরিণতি! আমাদের কি হবে? এই প্রশ্ন যখন আমার কাছে ছুড়ে দিলেন তখন আমি চিন্তা করলাম সত্যিই তো আমাদের দেশের মানুষ বেশিরভাগই অসচেতন। সরকার আমাদেরকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অলিতে-গলিতে কারা যাবে? গ্রামে-গঞ্জে কারা যাবে? কানাইঘাটের একটি কথা তুলে ধরে তিনি বলেন একজন ভদ্রলোক নাকি ক্যামেরার মাইক্রোফোন দেখিয়ে বলছেন এটার ভিতরে নাকি করুণা প্রবেশ করেছে! তিনি এ দায়ভার নিজের উপরে নিয়ে নিলেন। কতটা হৃদয়বান হলে অন্যের ব্যর্থতা নিজের গায়ে নিতে পারেন। বর্তমানে তিনি সাবান, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভস ইত্যাদি মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছেন।
পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন এগুলির ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে। এবং সাধ্যমত বিতরণ করছেন। আরেকটি প্রশ্ন করতে গিয়ে আমি লজ্জিত হয়ে পরলাম ভদ্রলোকের নিকট। প্রশ্নটা ছিল এরকম আপনাকে কি ইতিমধ্যে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে ছিল বা সহযোগিতা করেছিল? উত্তরটা শুনে তিনি বললেন সহযোগিতা করতেছে মানে, ভালো সহযোগিতা পাচ্ছি! দেশের মানুষ আমাকে গ্রহণ করে নিচ্ছে বিভিন্ন উপাধিতে কেউ বলছে পাগল, কেউ বলছে মেন্টাল, কেউ বলছে সরকার থেকে টাকা পাচ্ছি, কেউ বলছে ধান্দা নতুন ধান্দা। তিনি আরও বলেন যে এই উপাধি গুলো তার খুব ভালো লাগে কারণ তিনি বুঝতে পারছেন যে তিনি ভাল কাজ করছেন। এই পর্যন্ত কোন সংস্থা, কোন প্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি, কোন সরকারি বেসরকারি মানবাধিকার কমিশন এর পক্ষ থেকে কোন সাপোর্ট পাচ্ছেন না! তিনি এই উপাধিগুলোর স্মরণ করিয়ে আমাকে বললেন নিঃসন্দেহে আমি ভালো কাজ করছি, কারণ যারা ভালো কাজ করে তাদেরকেই মানুষ মেন্টাল, পাগল, ধান্দাবাজ বলে। সর্বশেষ পরিকল্পনা তার (আলা উদ্দিন আলাল) কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বলেন যতদিন বাইরে যাওয়া সম্ভব ততদিন উনি থাকবেন মাঠে, মানবতার ফেরিওয়ালা হয়ে। উনার একটি মাত্র কথা, সচেতনতাই সব।
আসুন আমরা সবাই মিলে সতর্ক থাকি। নিজে সচেতন হই, নিজের ফ্যামিলিকে সচেতন করি। মহাবিপর্যয় আমরা সহ্য করতে পারবো না! তাই সচেতনতাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র কাজ। প্রশ্ন করেছিলাম সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোন কিছু দেওয়া হয় তাহলে কি চাইবেন। তিনি বলেন, সরকার আমাকে দেবে এই আশা নিয়ে মাঠে কাজ করছি না, মাঠে কাজ করছি মানবতার তাগিদে, সরকার আমাকে কি দেবে, কি পেলে আমি সন্তুষ্ট হবো, মানুষকে পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট করা যে কত কঠিন কাজ সেটা বলার ভাষা রাখিনা। তবে একটা বস্তু সরকার থেকে আমি চাইতে পারি সেটা হলো আমার কাজের মূল্যায়ন। অনেক মানুষ আমাকে বিভিন্ন জেলা থেকে ফোন করে বলছে যাওয়ার জন্য তাদের এলাকায়। আমি যেতে পারছি না আমার পুরাতন বাইকটির জন্য। যদি আমি বিয়ানীবাজার এলাকা, সুনামগঞ্জ হবিগঞ্জ মৌলভীবাজার যেতে পারতাম মানুষকে আরও সতর্ক করতে পারতাম। পাঠকের কাছে আমার অনুরোধ আসুন আমরা সবাই মিলে এই লোকটির মনোবল বাড়িয়ে দেই।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd