স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে চাঁদপুর থেকে তরুণী সিলেটে

প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২০, ২০২১

স্ত্রীর স্বীকৃতি চেয়ে চাঁদপুর থেকে তরুণী সিলেটে

নিজস্ব প্রতিবেদক :: বোরকা পরা এক তরুণী। তাঁর হাতে সাদা প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘স্বামীর স্বীকৃতি না পেলে আমি মারা যাবো’। ওই তরুণী স্বামীর স্বীকৃতির জন্য মৃত্যুর হুমকি দিয়ে সিলেট নগরীর জালালাবাদ থানাধীন কালীবাড়ি গ্রামের বন্ধন ১৪-ডি বাড়ির সামনে অবস্থান নেন।

শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুর দেড়টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত অবস্থানের পর পুলিশের আশ্বাসে বাড়ির সামন থেকে সরেন। তবে দুইদিনের ভেতর স্বামীর স্বীকৃতি না পেলে ফের তিনি ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে স্বীকৃতি আদায় করবেন বলেও জানান।

তাঁর অভিযোগ, ওই বাড়ির বাসিন্দা মো. আবু হানিফের ছেলে মিছবাহুজ্জামান রুহিনকে স্বামী। কিন্তু তাঁকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না পেশায় থাই মিস্ত্রি রুহিন।’

তরুণীর দাবি, ‘ফেসবুকের সূত্র ধরে পরিচয়, পরে বিয়ে। এমনকি গত সাত মাস থেকে নারায়ণগঞ্জের একটি ভাড়া বাসায় তাঁকে রেখেছেন রুহিন। মাঝেমধ্যে গিয়ে থাকেনও সেখানে। কিন্তু এখন স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে চাইছেন না।’

ওই তরুণীর নাম মোছা. রেহেনা আক্তার (৩৬)। তিনি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ থানার শিদনা গ্রামের মো. নুরুল ইসলামের মেয়ে।

রেহেনা বলেন, গত ৮ মাস আগে কোর্টের মাধ্যমে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পরে রুহিন আমাকে নারায়ণগঞ্জে একটি বাসায় রেখে সিলেটে থেকে কিছুদিন পর পর গিয়ে সেখানে থাকতেন। এভাবে ৭ মাস একসঙ্গে সংসার করার পর এখন এড়িয়ে চলছেন এখন। এ জন্য স্ত্রীর স্বীকৃতি ও স্বামীর বাড়িতে অবস্থান পেতে শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) থেকে রুহিনের বাড়ির সামনে অবস্থান নেই। পরে দুই থেকে ঘণ্টা অবস্থানের পর রাত ১০ টার দিকে চলে যাই। কিন্তু কোন সমাধান না পাওয়ায় ফের শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে আবারও আমি অবস্থান নিয়ে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত থাকি। তখন জালালাবাদ থানার এসআই আসাদুজ্জামান এসে আমাকে আশ্বাস দিলে আমি আপাতত সরেছি। তিনি আমাকে দুই দিনের সময় দিয়েছেন। আমি সিলেটেই আছি। স্বামীর স্বীকৃতি না পেলে আমি যাব না।’

রেহেনা আরও জানান, কোনো কাবিননামা তার কাছে নেই। কিন্তু রুহিনের সঙ্গে তার প্রেম চলাকালীন সময় থেকে তার পরিবারের সবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। বিয়ের পরেও তিনি নিয়মিত শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন বলে দাবি করছেন রেহেনা। বর্তমানে রুহিনের কথায় তার পরিবার রেহেনাকে মেনে নিচ্ছে না। রেহেনার কাছে কাবিননামা না থাকলেও ফোনের কথোপকথনের রেকর্ড ও মেসেজ আদান-প্রদানের প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি জানান।

তাছাড়া এ বিষয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করেছেন রেহেনা। পিটিশন মামলা নং- ৩৩৫/২০২১। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রুহিনের বক্তব্য জানতে তার দুটি মুঠোফোন নাম্বারে কল দিলে দুটিই বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, ‘আমি আজ ছুটিতে আছি। কয়েকদিন আগে ওই নারী আমার কাছে এসেছিলেন। এ ঘটনায় একটি মামলাও আছে। এটি তদন্ত করছে পিবিআই। আমি উনাকে বলেছি পিবিআই যদি কোন চিঠি দেয় তাহলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারব। কিন্তু আজ কি হয়েছে তা জানা নেই।’

এ ব্যাপারে জালালাবাদ থানার এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, এলাকার লোকজন আমাকে কল দিয়ে জানানোর পর আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে উনাকে বুঝিয়ে সরিয়ে এনেছি। উনাকে আমরা আশ্বস্ত করেছি আইনগত ভাবে উনি যে পদক্ষেপ নেবেন তাতে আমরা উনার সাথে থাকব। ব্যাপারটি ভালো ভাবে বুঝার জন্য দুইদিন সময় দিতে বলেছি।

তবে রেহেনা আক্তারের দাবি গত সপ্তাহ খানেক আগে তিনি সিলেটে এসে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইলিয়াছুর রহমানের সাথে দেখা করেন। কাউন্সিলর তাঁকে নিয়ে ছেলের বাড়িতে গেলে রুহিনের পরিবারের লোকজন কাউন্সিলরের সামনেই তাঁকে মারধর করেন।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ইলিয়াছুর রহমান বলেন, ওই নারী আমাদের কাছে এসেছিলেন। কিন্তু মারধরের ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। আমরা বলেছি- কাবিননামা বা উপযুক্ত প্রমাণ নিয়ে আসতে। ব্যাপারটি সম্পর্কে মেয়র মহোদয়ও অবগত। কিন্তু তাঁর কাছে উপযুক্ত কোন প্রমাণ নেই। সে মোবাইলে বিভিন্ন রেকর্ড, ছবি প্রমাণ দেখাচ্ছে। এসব আইনের ব্যাপার। লিখিত প্রমাণ ছাড়াত আমি কিছু করতে পারি না।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..