কোম্পানীগঞ্জে ছুরিকাঘাতে ব্যাবসায়ী গুরুতর আহত, নেপথ্যে প্রভাবশালী চক্র

প্রকাশিত: ৫:৫৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০২১

কোম্পানীগঞ্জে ছুরিকাঘাতে ব্যাবসায়ী গুরুতর আহত, নেপথ্যে প্রভাবশালী চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক, কোম্পানীগঞ্জ :: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার টুকের বাজারে সবজী বিক্রেতার উপর বখাটেদের ছুড়িকাঘাতে একজন আহত হয়েছে। আহত ব্যক্তি ইসলামপুর গ্রামের আরিজ মিয়ার পুত্র আপন মিয়া (২৪)। গতকাল বুধবার দুপুর ১ টা ৩০ মিনিটের সময় ঘটনাটি ঘটে ।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুর দেরটায় উপজেলার টুকের বাজারে সবজী বিক্রয় করছিল আপন মিয়া (২৪)। দোকানে বাকিতে সবজী ক্রয় করতে আসেন স্থানীয় জসিম মিয়া। বাকিতে সবজী দেওয়া/নেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে জসিম সবজী বিক্রেতা আপন মিয়াকে কিল ঘুষি মাড়তে থাকে।সে সময় পাশে থাকা জসিমের ভাগ্না মাদক সেবী নওশার আলী ডন সহ ৫/৬ জন এগিয়ে আসলে জসিম আরও মারমুখী হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে আপন মিয়াকে ধারালো ছুড়ি দিয়ে ঘা মাড়েন আসামি জসিম মিয়া। পাশে থাকা জসিম মিয়ার সহযোগীদের উপর্যপূরি হামলা ও জসিমের ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত আপন মিয়া প্রাণবাচানোর জন্যে চিৎকার শুরু করলে পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

সরেজমিনে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে আলাপকালে জানা যায়, উপজেলার টুকের বাজারে শতাধিক বখাটের আশ্রয়স্থল। সেই বখাটেদের কারনে সপ্তাহান্তেই এখানে ছোট কিংবা বড় রকমের ঝগড়ার সৃষ্টি হয়। রামদা কিংবা লাঠিসোঁটা নিয়ে হইহুল্লুর করে বাজারে প্রবেশ করে ব্যবসায়ী ও প্রতিপক্ষদের উপর হামলা করাটা যেন ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে এখানে। বাজারের দুই/তিনটি গোপন স্থানে দেশীয় সহ লাঠিসোটা লুকিয়ে রাখে সেই বখাটেরা। গত দেড় বছরে ছোট বড় ২৫/২৬ টি অঘটন দেখতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। কিছুদিন আগেও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের ধাওয়া পালটা ধাওয়া এবং হামলায় ১৫/২০ জন আহত হয়। আহতরা দুই পক্ষেরই ছিল। এছাড়াও গত ১১ মে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে আকাশ নামে এক যুবককে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেই ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের হলেও অন্যান্য ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ানোর সুযোগ নেই। স্থানীয় ভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুদিন পরেই পূর্বের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। গত ১৫ অক্টোবর রাতে টুকের বাজার সংল্গন ইসলাম পুর এলাকায় এক মাদকসেবী কর্তৃক ৯/১০ বছরের মেয়ে শিশুকে নির্যাতন ও স্থানীয় কলোনীতে ভাড়ায় থাকা মহিলাদের মারধরের অভিযোগ পাওয়া যায়। ঐসময় ব্যপারোয়া সেই মাদকসেবীকে স্থানীয় কয়েজন যুবক প্রতিহত করেন। এরপর দিন টুকের বাজারে প্রতিবাদী সেই যুবকদের উপর দেশীয় অশ্রসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে ৫০/৬০ জনের একটি দাঙ্গাবাজ ও মাদককারবারী হামলা করেন। সেই সময় হামলাকারীদের তুঘলক কান্ডে টুকের বাজারে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

বাজারের কিনারঘেষা ধলাই নদীর পাড়ে দিনরাত বসে মাদক সেবীদের আড্ডা। প্রতিদিন শতশত যুবক মাদকসেবনের জন্যে নদীর পাড় এলাকায় ভীর করে । এদের বেশিরভাগ বিদ্যালয় ত্যাগী বখে যাওয়া কিশোর। এইসব অপরাধের বিরুদ্ধে স্থানীয় ভাবে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের উপর মাদক ব্যবসায়ীরা হামলা করে । হামলার ভয়ে এখন আর কেউ প্রতিবাদের সাহস পায় না।

বাজার সংলগ্ন টুকের গাও যেন এ এক অঘোষিত মাদকরাজ্য। ১৫/২০টি স্পটে চলে মাদক ব্যবসায়। ১০/১২ স্পটে চলে ইয়াবা ও গাজার সেবন। শুধু তাই নয় মাদক সেবনের সাথে সাথে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেহ ব্যবসায়ীদের এনে অশ্লিল কর্মকান্ড চলে। অনেক মাদক ব্যবসায়ী স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই সব কর্মকান্ড চালাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। সেইসব প্রভাবশালীরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সুসম্পর্কের পূজির আরালে এই সব অপকর্ম চালাচ্ছে বলে জানান নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক যুবলীগ নেতা।

এছাড়াও নয়াগাঙ্গেরপাড়, টুকেরবাজার ও ইসলামপুর এলাকার নদীর পাড় ঘেষা চলা রমরাম জুয়ার আড্ডা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। প্রতিদিন সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে জুয়ারীরা এসে এখানে জুয়া খেলে। স্থানীয় ভাবে এদের সেল্টারদাতা সেই প্রভাবশালী চক্র। এরই মধ্যে নতুনভাবে যোগ হয়েছে অনলাইন মাধ্যমে জুয়া। ক্রিকেট খেলায় জুয়া। করোনাকালীন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় স্থানীয় কিশোররা এইসব অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। যার প্রমান সেই সব অপকর্মের বেশিরভাগই স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া কয়েক কিশোর কর্তৃক টুকের বাজারে গতকাল ঘটে যাওয়া ছুড়িকাঘাতের ঘটনা। এদের বেশির ভাগই বিদ্যালয় ও কলেজ পড়ুয়া বখে যাওয়া কিশোর চক্রের সদস্য। ঘটনার পরপরই টুকেরবাজার এলাকায় থমথম অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় ভিকটিমের চাচাতো ভাই বাদী হয়ে গতকাল রাতেই কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দাখিল করলেও তদন্তের নামে চলছে কালক্ষেপণ। আহত আপন বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা ভিকটিম পক্ষকে চাপ সৃষ্টি করছে।অন্যদিকে অভিযোগটি তদন্তের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ব্যবসায়ী রণি মিয়া। ঘটনার ২৪ ঘন্টা হলেও এখনো অভিযোগটি থানায় রেকর্ড হচ্ছেনা।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন সবজী বিক্রেতা বলেন, আমরা কেউই স্বাক্ষী দিতে পারবো না।কারন স্বাক্ষী দিলে ওরা আমাদেরকে একই অবস্থা করবে। দেখেন না, ঘটনা ঘটিয়ে আসামীরা এখনো বাজারেই প্রকাশ্যে ঘুরাচ্ছে। তারা অনেক ক্ষমতাধর তাই তাদেরকে পুলিশেও ধরবে না।

আহত আপন মিয়া বলেন, জসিম ও নওশাদ ডন সহ ৬/৭ জন আমাকে প্রচন্ড মারধর করে। আমাকে জবাই করার চেষ্টা করে। শেষে ব্যার্থ হয়ে ঘার সংলগ্ন হাতের পেশীতে ছুড়িকাঘাত করে। শুনেছি পুলিশ মামলাটি এখনো রেকর্ড করেনি। আমি এখন সম্পূর্ণ নিরাপত্তাহীনতায় আছি। যে কোনো সময় সেই হামলাকারীরা আমার উপর হামলা করতে পারে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাতের পেশীর উপর অংশে ছুরির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত কাটা হাত নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাৎরাচ্ছে আহত আপন মিয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার সুকোমল ভট্টাচার্য ঘটনার তদন্তকাজ শুরু করবে বলে জানান।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

November 2021
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..