সিলেটে মেটলাইফের কবির খান এজেন্সির বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ

প্রকাশিত: ৮:৩৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৫, ২০২১

সিলেটে মেটলাইফের কবির খান এজেন্সির বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ‘মেটলাইফ’র অধিভুক্ত সিলেটের ‘কবির খান এজেন্সি’র ম্যানেজার কবির উদ্দিন খানের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও কর্মচারীর বেতনের টাকা আত্মসাতের পর এবার গ্রাহকের স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ ওঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন নগরীর কালিঘাটের ব্যবসায়ী জাকির আহমদ।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কবির খান এজেন্সি’র সাবেক এফ.এ (ফিনান্সিয়াল এসোসিয়েট) ও বর্তমান ইউ.এম (ইউনিট ম্যানেজার) বুরহান উদ্দিন ২০১৮ সালে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করে একটি পলিসি করাতে জাকিরকে সম্মত করান। কিন্তু জাকির শুধু নিজের পলিসি করার কথা বললেও বুরহান জাকিরকে জিজ্ঞেস না করে তার স্ত্রী ও সন্তানের নামে আরও দুটি বীমা পলিসি করান। এতে ক্ষুব্ধ হন জাকির। এসময় বুরহান অনেক বুঝিয়ে জাকিরকে শান্ত করেন। এসময় বুরহান বলেন, মাঝে-মধ্যে কিস্তির টাকা না দিতে পারলেও কোনো সমস্যা নেই। এসব আমি দেখবো। আর আপনি যে সময় পলিসি বন্ধ করে দিতে চাইবেন তখনই আপনার সব টাকা পরিশোধ করে দিবো।

এছাড়াও বিভিন্ন কাগজপত্রে জাকিরসহ তার স্ত্রীর একাধিক স্বাক্ষর বুরহান নিজেই দিয়ে দেন। এ নিয়ে জাকির প্রতিবাদ করলেও এতে কর্ণপাত করেননি বুরহান।

এদিকে, বিভিন্ন সময় রশিদ ছাড়াই জাকিরের কাছ থেকে কিস্তির টাকা নিতে বুরহান। রশিদ পরে দিবেন বলে আর দেননি। এভাবে জাকিরের কাছ থেকে ৩টি পলিসির নামে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন ‘কবির খান এজেন্সি’র ইউনিট ম্যানেজার বুরহান উদ্দিন। পরে একসময় জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বুরহান। একপর্যায়ে তার অনিয়ম ও জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পেরে ‘কবির খান এজেন্সি’র ম্যানেজার কবির উদ্দিন খানের শরণাপন্ন হলেও কোনো প্রতিকার পাননি জাকির।

উল্লেখ্য, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ‘মেটলাইফ’র অধিভুক্ত সিলেটের ‘কবির খান এজেন্সি’র ম্যানেজার কবির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ ওঠছে দীর্ঘদিন ধরে। এ বিষয়ে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন ভুক্তভোগী ‘কবির খান এজেন্সি’র ইউনিট ম্যানেজার ও ফিনান্সিয়াল এসোসিয়েটরা। এছাড়াও ‘কবির খান এজেন্সি’র ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ গত বছর ১৫ দিনের কর্মবিরতি পালন করেন। সর্বশেষ গত ৬ ডিসেম্বর মেটলাইফ ও কবির খান এজেন্সির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

জানা যায়, ২০০৩ সালে সিলেট নগরীর বারুতখানাস্থ সিম্ফনি হাইটস ভবনের তৃতীয় তলায় ‘কবির খান এজেন্সি’ নামে ‘মেটলাইফ’র একটি ব্রাঞ্চ খুলে বসেন কবির উদ্দিন খান। খোলার পর থেকেই ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত কবির উদ্দিন নানা অনিয়ম ও কোম্পানি বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগকারীরা বলেন, কোম্পানির নিয়োগকৃত সেক্রেটারিবৃন্দ কবির উদ্দিন খানের প্রত্যক্ষ মদদে অফিসের কাজ বাদ দিয়ে নিজেরা গ্রাহকদের পলিসি করাতে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও সার্টিফিকেট জাল করে এফ.এ (ফিনান্সিয়াল এসোসিয়েট) নিয়োগ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, কোম্পানির নির্দিষ্ট ফরমেট ছাড়াই কবির উদ্দিন ব্যক্তিগত ফরমেটে গ্রাহকদের পলিসি করান। এতে পরবর্তীতে গ্রাহক এবং কোম্পানির মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং গ্রাহকরা চরম ক্ষুব্ধ হন।

অভিযোগকারীরা বলেন, ‘কবির খান এজেন্সি’-তে বিভিন্ন ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর কোনো রিসিভ কপি দেওয়া হয় না। পরবর্তীতে অধিকাংশ ডকুমেন্ট ‘হারিয়ে গেছে’ বলে জানান কবির উদ্দিন এবং তার বলয়ের কর্মকর্তারা। এমনকি অনেক গ্রাহকের ডকুমেন্ট হারিয়ে যাওয়ার পরে সেক্রেটারিবৃন্দ সে ডকুমেন্টের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে বসেন।

এছাড়াও কবির উদ্দিন মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লগো দেখিয়ে লোক নিয়োগ দিয়ে এফ.এ কোড তৈরির পর পরবর্তীতে সে এফ.এ (ফিনান্সিয়াল এসোসিয়েট)-কে তার ভাইয়ের কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্স-এ স্থানান্তরিত করেন।

অভিযোগ রয়েছে- কবির উদ্দিনের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় অনেকেই ইতোমধ্যে বাধ্য হয়ে এজেন্সি ছেড়ে নিরবে চলে যান। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে হেড অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে তাদের চুক্তি বাতিল করান।

অভিযোগকারীরা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে কবির উদ্দিন খানের অনিয়মের বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছেন।

এদিকে, সিলেটের ‘কবির খান এজেন্সি’র ম্যানেজার কবির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে অফিস পিয়নের বেতনের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। ওই কর্মচারী প্রতিবাদ করায় তাকে চাকরিচ্যুতও করেন কবির খান। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সে পায়নি পরিপূর্ণ বেতনের টাকা, এমনকি চাকিরও ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি তাকে।

জানা যায়, সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার খাদিমনগর ইউনিয়নের মংলীপাড় গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান মশাহিদ (৩৪) ২০০২ সালে কবির খান এজেন্সিতে অফিস পিয়ন হিসেবে নিয়োগ পান। নিয়োগের পর এজেন্সির ম্যানেজার কবির উদ্দিন খান কৌশল করে হাবিবের নিয়োগপত্র দেননি। প্রথম থেকেই অফিস পিয়ন হিসেবে হাবিবের বেতন ছিলো কোম্পানি নির্ধারিত ১০ হাজার টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত ছিলো বিভিন্ন ভাতার টাকাও।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালে হাবিবকে চাকরিচ্যুত করার সময় বিভিন্ন ভাতাসহ সর্বসাকুল্যে প্রতি মাসে তার বেতন ছিলো ৩২ হাজার ৪৭৪ টাকা। কিন্তু শুরু থেকেই তাকে প্রতি মাসে ৩-৫ হাজার টাকা দিয়ে বেতন শিটে হাবিবের নামে ভুয়া স্বাক্ষর করে বাকি টাকা আত্মসাত করতেন কবির খান। বিষয়টি জানতে পেরে প্রতিবাদ করে হাবিব। হাবিব প্রতিবাদ করায় ২০১৭ সালে তাকে একমাসের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠান কবির খান। এরপর আর হাবিবকে আর কাজে ফিরিয়ে নেননি তিনি।

বিষয়টি তখন কবির খান এজেন্সির সিনিয়র এফএ এবং ইউএম-দেরকে জানায় হাবিব। পরে গত বছরের শেষ দিকে এ বিষয়ে এজেন্সির এফএ এবং ইউএম’র পক্ষ থেকে মো. শহীদুজ্জামান, মো. মিজানুর রহমান ও মো. রাসেল উজ জামান মেটলাইফের রিস্ক এন্ড কম্প্লাইন্স ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ম্যানেজারকে লিখিতভাবে অবগত করেন এবং কবির খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা।

এদিকে, হাবিব এ বিষয়ে মুখ না খুলতে তাকে বাড়িতে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন কবির খান এবং তার দুই সেক্রেটারি নাজির হােসেন ও হিফজুর রহমান। এ ৩জনকে অভিযুক্ত করে এবং জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ এয়ারপোর্ট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে হাবিব।

এর আগে হাবিব তার বেতনের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অবগত করতে মেটলাইলাইফের এরিয়া সেলস ম্যানেজার বরাবরে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু কোনো প্রতিকার পায়নি হাবিব।

এছাড়াও হাবিবের অভিযোগ- পুরো বেতন তো দিতেন-ই না; তার উপর হাবিবকে দিয়ে কবির খান নিজের বাজার-সদাই করাসহ ব্যক্তিগত কাজে দিন-রাত খাটাতেন। তাছাড়া হাবিবের স্ত্রীকে দিয়েও কবির খান তার বাসায় গৃহস্থালী কাজ করাতেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2021
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031

সর্বশেষ খবর

………………………..