সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৫১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক :: শতভাগ ক্যাশব্যাক অফার দিয়ে গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ ওঠেছে আঁখি সুপার শপ নামে সিলেটের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
এই অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন ভূক্তভোগি দুই গ্রাহক। তবে তার আগেই প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ করে পালিয়েছেন আঁখি সুপার শপের কর্মকর্তারা। প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের ও এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সোমবার নিজেদের ফেসবুক পেজে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে আঁখি সুপার শপ। এতে সিলেট থেকে তাদের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়েছিলো বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যদিও আঁখি সুপার শপের এই স্ট্যাটাসেই অনেক গ্রাহক একে প্রতারণার নতুন কৌশল হিসেবে মন্তব্য করেছেন। আঁখি সুপার শপের ফেসবুক পেজ থেকে সোমবার দেয়া স্ট্যাটাসে লেখা হয়-নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমরা চাইলেও সিলেটে আসতে পারছিনা… ‘আমরা চাই একটা সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হোক। আর আপনারাই পারেন সেই পরিবেশ তৈরি করতে। সেদিন সিলেট থেকে ঠিক সময়ে বের হয়ে না আসতে পারলে পরদিন আমাদের লাশ বের হতো। ২ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয় আমাদের কাছ থেকে… হয় টাকা দিবো না হলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়, অথচ মাসের শুরুতে ১ কোটি টাকা দিয়েছিলাম…. প্রতি মাসে মাসে এভাবে নিজের প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কোটি টাকা আমাকে দিতে বাধ্য করা হয়…
এভাইবেই গত ১ বছরে ১০ কোটি টাকা আমার কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে আত্মসাৎ করা হয়…
গত একবছরে কি নিখুঁতভাবে কাজ করে আসছি আপনার তার সাক্ষী ছিলেন…
ডেলিভারি সবসময় দু-চারদিন এক সপ্তাহ আগে পেয়েছেন, কিন্তু টাইম কখনো পার হয়নি…
আজকে আমরা বিপদে পরেছি কে বা কারা আমাদের বিপদে ফেললো আপনারা একবারো বুঝতে চাইলেন না…
উল্টা প্রতারক বলছেন!
এতো সার্ভিস নিয়েছেন কখনো কেউ বলতে পারবেন আমাদের সার্ভিসে আপনারা অসন্তুষ্ট ছিলেন নিজের মনকে একবার প্রশ্ন করুন!
আমরা একটা সমঝোতা চেয়েছিলাম যার কারণে এস.পি, ডিসি মহাদয়ের কাছেও গিয়েছিল। আমরা একটু সময় চাই…
আর এই সময়টা আপনারা চাইলেই দিতে পারেন…
আমাদের উদ্দেশ্য কখনোই অসৎ ছিলো না…
আপনারা চাইলেই আঁখি সুপার শপ আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। আমরা চাই আপনাদের প্রাপ্য আপনাদেরকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা…’
আখিঁ সুপার শপের পক্ষ থেকে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবির বড় অভিযোগ তোলা হলেও কে বা কারা চাঁদা চেয়েছিলো এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
এই স্ট্যাটাসেই জুনেদ আহমদ জুুনু নামে একজন মন্তব্য করেছেন- ‘আর কত বোকা বানাবেন অসহায় মানুষকে?? এখন এই মানুষরা সিলেটের বিতর সিলেটি চাঁদাবাজ খুঁজতে খুঁজতে আপনারা দেশের বাইরে চলে যেতে চান’।
মো. আব্দুল মুহিত স্বপন নামে একজন লিখেছেন,- কে বা কারা রিতিমতো টাকা নিতো বা নিছে, বা চাঁদা দাবি করছে তাদের নাম ছবিসহ পোষ্ট করেন। তাহলে সবাই বুজবো কথাগুলো সঠিক বলেছেন’। আরও অনেকেই এমন মন্তব্য করেছেন। তবে এসব মন্তব্যের কোনো জবাব দেওয়া হয়নি আঁখি সুপার শপের পক্ষ থেকে। নগরের বটেশ্বর এলাকায় আঁখি সুপার সপের কার্যালয়। রোববার বিকেলে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ দেখা যায়।
রোববার নগরের শাহপরান উপশহর এলাকার বাসিন্দা মো. জিয়াউর রহমান ও মো. আশরাফ হোসেন বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।
মামলার আইনজীবী মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, আসামিরা অনলাইনে পেজ চালু করে প্রতারণা মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য একটি কিনলে আরেকটি ফি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা নিতেন তারা।
এই আইনজীবী বলেন, মামলার বাদি আশরাফ হোসেন ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২০ টাকা এবং জিয়াউর রহমান ৩ লাখ ৭ হাজার ২০০ টাকা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরকম শতাধিক গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাত করেছে এই প্রতিষ্ঠান।
মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, আদালতের বিচারক মো. সাইফুর রহমান মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই মামলাতেই আসামি করা হয়েছে আঁখি সুপার শপের কর্মকর্তা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাসনীপুর গ্রামের আসমা শারমিন আঁখি (২৬) ও পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলমকে (৩১)। এ ছাড়া আরও চার থেকে পাঁচজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, আসমা ও জাহাঙ্গীরই এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন। সিলেট শহরতলির বটেশ্বর গইলাপাড়া এলাকায় আঁখি সুপার শপ নামের একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, আঁখি সুপার শপ কর্তৃপক্ষ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ‘একটি পণ্য কিনলে একই পণ্য আরেকটি ফ্রি তথা শতভাগ ক্যাশব্যাক’ বলে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এ প্রচারণা দেখে দুজন বাদী আরও কয়েকজন সহযোগী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে যান। তারা গত বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত দুটি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস সামগ্রী এবং তেল-দুধ ক্রয়ের জন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, টাকা জমা দেওয়ার পর মামলার দুই বাদীকে প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় মেমোও দেয় এবং দ্রুতই পণ্য বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়। তবে সেসব পণ্য যথাসময়ে তারা পাননি। এরপর প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে গিয়ে সেটি বন্ধ দেখতে পান। পরে বিভিন্ন গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে তারা জানতে পারেন, তাদের মতো আরও গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে আসামিরা পালিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে আঁখি সুপার শপের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সংশ্লিস্টরা জানয়েছেন, গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে আঁখি সুপার শপ নামের প্রতিষ্ঠানটিও তালাবদ্ধ আছে। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রাহকেরা সেখানে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, আঁখি সুপার শপ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা শুরু করে। এর বাইরে সুপার শপের মাধ্যমেও তারা বটেশ্বর এলাকায় ব্যবসা পরিচালনা করত। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ হতে নানা সময়ে ৯০ দিন এবং ৩০ দিনের একাধিক প্যাকেজ অফার ফেসবুক পেজে জানানো হতো। এসব প্যাকেজে একটি পণ্য কিনলে আরেকটি পণ্য ফ্রি দেওয়া হতো। এ অফারের মধ্যে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও গ্রোসারি পণ্য থাকত। এ অফারে অনেক গ্রাহক অংশ নিয়ে একটি ক্রয় করা পণ্যের সঙ্গে একই পণ্য আরেকটা বিনা মূল্যে পেয়েছেন।
একাধিক গ্রাহক জানান, গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে আঁখি সুপার শপের পক্ষ থেকে এমন একটি অফার দিয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। এ প্রচারণায় প্রলুব্ধ হয়ে অন্তত ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাহক মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে টাকা জমা দেন। অন্তত ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটি এভাবে জমা নিয়েছে বলে কয়েকজন গ্রাহক ধারণা করছেন। এই টাকা নিয়েই আসমা ও জাহাঙ্গীর পালিয়ে গেছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd