সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২২
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বিত্তশালীদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ভিডিও ধারণের পর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। একটি চক্র গড়ে দীর্ঘদিন ধরে সুকৌশলে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলেন তিনি। আটক কানিজ ফাতেমা ওরফে ফাতেমা কানিজ রংপুর পুলিশ হাসপাতালের পুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে নগরীর সেনপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে তাকে আটক করে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশ।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ। এর আগে সোমবার (৩ জানুয়ারি) এই চক্রের সদস্য রংপুর নগরীর গ্র্যান্ড হোটেল মোড় এলাকার শাহরুখ করিম অনিক ও তার স্ত্রী আসমানি আক্তারকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব-১৩। অনিক ও তার স্ত্রী আসমানি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের জবানবন্দিতে উঠে আসে কানিজ ফাতেমার নাম। এরপরই অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পুলিশ। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই অপরাধী চক্রে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীর নাম উঠে আসার পরপরই রংপুরে পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়। বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। পুরো বিষয়টি কঠোর গোপনীয়তায় হ্যান্ডেল করছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, কানিজ ফাতেমাকে নিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এই চক্রে আর কে কে আছেন তা খতিয়ে দেখছেন রংপুর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিত্তশালী ব্যক্তিদের টার্গে করে একটি চক্র গড়েছেন কানিজ ফাতেমা। এই চক্রের সদস্যরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে অনেক ব্যক্তির লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহরুখ করিম ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর অন্যদের নাম জানিয়ে দেন তারা।
র্যাব জানায়, অনিক ও তার স্ত্রী আসমানিকে সোমবার রাতে কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করেছিল র্যাব। রাতেই রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে পুলিশ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের স্ত্রী কানিজ ফাতেমার নাম বলেছেন ওই দম্পতি। একই সঙ্গে চক্রের অন্যান্য সদস্যের পরিচয় ও নানা অপরাধ সম্পর্কে জানিয়ে দেন। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কানিজ ফাতেমাকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কয়েকজন নারী ও পুরুষকে নিয়ে একটি চক্র গড়েছেন কানিজ ফাতেমা। চক্রের নারী সদস্যদের দিয়ে বিত্তশালীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলতেন। এরপর বাসায় ডেকে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও তুলে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। আসমানি, কানিজ ফাতেমা ও আরও কয়েকজন নারী নিয়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। অভিজাত ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন এসব কর্মকাণ্ড চললেও পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ায় ভয়ে কিছু বলতো না স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর পুলিশ হাসপাতালের পুলিশ পরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কানিজ ফাতেমার সঙ্গে এখন আমার সম্পর্ক নেই। আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে।’
তবে পুলিশের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘কানিজ ফাতেমার সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে থাকেন পরিদর্শক হাবিবুর রহমান। তাদের ছাড়াছাড়ির বিষয়টি আমি জানি না। এসব ঘটনায় হাবিবুর রহমানের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা দরকার। তখন আসল ঘটনা জানা যাবে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রংপুর মেট্রোপলিটনের উপ পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি কানিজ ফাতেমার সঙ্গে হাবিবুর রহমান থাকেন না। এ ঘটনায় আর কে কে সম্পৃক্ত তা তদন্ত করে দেখা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটনের কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রশিদ বলেন, ‘অপরাধী চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগে কানিজ ফাতেমাকে আটক করা হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হবে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
এর আগে রবিবার (২ জানুয়ারি) রাতে নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড় এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-১৩। এ সময় বাসা থেকে শাহরুখ করিম অনিক ও তার স্ত্রী আসমানি আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানের সময় ওই বাসার ছয়তলায় একটি টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে প্রতারণার ফাঁদে পড়া ব্যক্তিদের জিম্মি করে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন অনিক-আসমানি দম্পতি। ওই টর্চার সেল থেকে দুটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শকের তার, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি, হাতুড়ি, ছুরি, স্ট্যাম্প, ভিডিও ধারণের দুটি মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১৩-এর সহকারী পরিচালক মাহমুদ বশির আহমেদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ওই দম্পতি বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিম্মি করে টাকা আদায় এবং নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার দুই জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনার জন্য র্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd