সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক :: স্থানীয় ও পরিবেশবাদীদের জোর প্রতিবাদ, বিক্ষোভ-মানবনন্ধন-সংবাদ সম্মেলন- কিছুই বন্ধ করতে পারছে না সিলেটের গোয়াইনঘাটের সারি রেঞ্জের আওতাধীন রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টে চলমান ‘উজাড়কাণ্ড’।
রাতারগুল এলাকায় বেশ কয়েকদিন ধরে একের পর এক কেটে উজাড় ও নিধন করা হচ্ছে নানা জাতের গাছ-মাছ। প্রকাশ্যে ট্রাক ট্রাক মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করা হচ্ছে অবৈধভাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রহস্যজনক কারণে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরব বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তবে বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন- বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আলাদা আলাদা ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বনবিভাগের যদি কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে জড়িত থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, গোয়াইনঘাট সারি রেঞ্জের আওতাধীন বন বিভাগের ৫০৪ একর বনভূমি এলাকা নিয়ে অবস্থিত রাতারগুল জলাবন। বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির জলাবন এটি। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই বনে ৭৩ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। যার মধ্যে বনে রয়েছে বেত, কদম, হিজল, করচ ও মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ রয়েছে। এছাড়াও এই বনে ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ২০ প্রজাতির সরীসৃপ ও ১৭৫ প্রজাতির পাখি এবং ৯ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে।
এটিকে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট হিসাবেও অভিহিত করা হয়। বনবিভাগ ও স্থানীয় জনসাধারণের সমন্বয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি কাজ করছে রাতারগুলের সম্পদ রক্ষায়। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বনের ভেতরে বেত ও নানারকমের গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে এলাকার প্রভাবশালী একটি চক্র। চলছে মাছ নিধন। আর বর্তমানে সেই এলাকার পিয়াইন নদীর চরের মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে সেই চক্র।
বনবিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্মাদের যোগসাজশে এমন অবৈধ কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর কাছে প্রধান অভিযুক্ত হচ্ছেন সিলেট বন বিভাগের সারি রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে গত ১৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেছেন ওই এলাকার মানুষ। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে গাছ কাটার অভিযোগ এনে বিভাগীয় কর্মকর্তা বরাবরে লিখিতভাবে জানিয়েছেন ওই এলাকাবাসী।
তবে এসব অভিযোগ ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ উল্লেখ করে সাদ উদ্দিন বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে অনেকে আমার বিরুদ্ধে এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। বরং আমাদের প্রচেষ্টায় রাতারগুল বনটি সবুজে ছেয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
তবে রাতারগুলে গাছ কাটার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেটের বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. তওফিকুল ইসলাম। তিনি সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বলেন, গাছ কাটার কিছু ভিডিও এবং ছবি আমাদের কাছে এসেছে। গাছকাটা রোধ করতে আমরা ওই এলাকায় টহল ও নজরদারি জোরদার করেছি এবং আলাদা ৩টি তদন্ত টিম গঠন করেছি। এ ঘটনায় যদি বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকেন তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর প্রথমে অভিযোগ ছিলো- মামলা দিয়ে হয়রানির। গাছ কাটায় জড়িত থাকার অভিযোগ তারা সম্প্রতি করছেন। তবুও বিষয়টি আমরা ছোট করে দেখছি না। অভিযোগটি আমরা আমলে নিয়েছি এবং এ বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd