সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪৬ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২২
গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি :: সিলেট বনবিভাগের সারী রেঞ্জের আওতাধীন জাফলংয়ের সংরক্ষিত বনভূমি উজাড় হচ্ছে। বনের রোপায়িত গাছ কেটে চুরি, বনের ভূমি জোরপূর্বক দখল, বনের ভেতরে পাহাড়, টিলা কাটা, সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে অবৈধ রাস্তা, বনের ভূমি দখল করে অবৈধ স্টোন ক্রাশিং মেশিন তৈরি, অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলাসহ বন ধ্বংসের মহোৎসব চলছে।
অভিযোগ উঠেছে জাফলং বনবিটে অবৈধ দখলদারদের সাথে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে খোদ বন কর্মকর্তারাই এসব অপরাধে জড়িত। শুধু তাই নয় বনখেকোদের সাথে আঁতাত ও সখ্যতা গড়ে তোলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল বিনষ্টে জাফলং বনবিট ফরেস্টার প্রদীপ মন্ডল’র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। বনভূমি দখলকারী ও ইতিপূর্বে জাফলংয়ে বনের ভূমি দখলে বাধা দেয়ায় বনপ্রহরীদের উপর হামলাকারী স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সাথে প্রকাশ্য চলাফেরা, ঘুরাফেরা, সখ্যতা, খোশগল্পে দেখা যায় বন কর্মকর্তাদের।
জাফলং জুড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষার কোন তৎপরতা নেই, বরং তার বিপরীতে বনভূমি উজাড়, গাছপালা, পাহাড়, টিলা কাটাসহ ও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হচ্ছে। প্রকল্প নিয়ে কাজ না করিয়ে বনায়নের নামে এসব কর্মকর্তারা সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিয়োগের টাকাও আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, ছয় মাস আগে বদলি হওয়া বনপ্রহরী ফারুকের মাধ্যমে উত্তোলিত হয় জাফলং বনবিট এলাকার বখরার টাকা।
বন কর্মকর্তা প্রদীপ মন্ডল’র বেপরোয়াভাবে সংরক্ষিত বনভূমিতে জবরদখলে সুযোগ দিয়ে অবৈধ ডাম্পিং ইয়ার্ড, অফিস, স্টোন ক্রাশারমিল, স্থাপনা বাণিজ্য, অনিয়ম দুর্নীতি ও লুটপাট চালাচ্ছেন বলে অভিযোগের নানা ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সিলেটের স্থানীয় ও জাতীয় একাধিক দৈনিকে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়।
সরজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, তামাবিল স্থলবন্দরের অদূরে সারী রেঞ্জের আওতাধীন জাফলং বনবিটের চৈলাখেল ৩ খন্ডে দাগ নং ১৭০ এ নজরুল, সামসু মিয়া গংরা একাধিক নতুন ডাম্পিং ইয়ার্ড তৈরি করে পাথর স্তুপ করছেন। একই দাগে সিলেট তামাবিল স্থলবন্দর পয়েন্টে জনৈক ব্যবসায়ী একটি অবৈধ অফিস কক্ষ তৈরি করেছেন। একটু পূর্ব দিকে তামাবিল বিজিবি ফাঁড়ির পশ্চিম পার্শ্বে সংরক্ষিত এ বনের ভেতর দিয়ে প্রবাহমান প্রাকৃতিক একটি পানি প্রবাহের নালা বন্ধ করে ডাম্পিং ইয়ার্ড করেছেন মুজিব নগর গ্রামের জনৈকা মহিলা। এগুলোর পাশাপাশি সোনাটিলা গ্রামে যত্রতত্র সংরক্ষিত বনভূমির গাছপালা কেটে ঘরবাড়ি, মটরশুঁটি চোরাচালানের চক্রের গুদাম ঘর স্হাপিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
ওই স্থানের আশপাশে ও তামাবিল জুড়ে অগণিত ডাম্পিং ইয়াার্ড, অফিসসহ অবৈধ স্থাপনা সমূহ। আগেকার গড়ে উঠা এসব স্থাপনা উচ্ছেদে কোন তৎপরতা নেই, বরং অবৈধ ডাম্পিং এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের জন্য বনভূমিতে পাহাড়, টিলা, গাছপালা কাটা হচ্ছে দেদারসে। পরিবেশ বিনষ্টের ঘটনা এখানে নিত্যকার। বনবিটের সম্পত্তিতে রাতারাতি গড়ে উঠা এই স্থাপনা বাবদ জাফলং বনবিট ফরেস্টার প্রদীপ চন্দ্র মন্ডল ছয় মাস আগে ময়মনসিংহ বদলি হওয়া বনপ্রহরী ফারুক আহমদকে সবকটি স্থান হতে মাসিক, বাৎসরিক বখরা আদায় করিয়ে থাকেন বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সাদ, প্রদীপের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সংরক্ষিত বন ধ্বংসসহ অবৈধ বাণিজ্যের অগণিত অভিযোগ দেয়া হলেও ম্যানেজের মাধ্যমেই বহাল তবিয়তেই আছেন তারা।
এসব সংবাদের প্রকাশের পর সিলেটের জেলা বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বন কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে সিলেটের অতিরিক্ত বনসংরক্ষক আবু বকর সিদ্দিককে আহবায়ক হবিগঞ্জের অতিরিক্ত বনসংরক্ষক মারুফ আহমদকে সদস্য সচিব ও সুনামগঞ্জের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাহমুদুল হককে সদস্য করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
জাফলংয়ে সংরক্ষিত বনভূমিতে অবৈধ ডাম্পিং ইয়ার্ড বানিজ্য, অফিস, স্থাপনাসহ বনের ভূমি জবরদখলে ব্যবস্থাগ্রহণ অনীহা, নীরবতার ব্যাপারে কথা হলে জাফলং বনবিট ফরেস্টার প্রদীপ মন্ডল বলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন দখলদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
এদিকে চলমান তদন্তের ব্যাপারে কথা হলে তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হবিগঞ্জের অতিরিক্ত বনসংরক্ষক মারুফ আহমদ বলেন, আমরা তদন্ত কমিটির সবাই মাঠে আছি, প্রতিটি বিষয়েই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। অচিরেই আমরা আমাদের তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবো।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd