সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক :: জাফলং পাথর কোয়ারিতে পাথর উত্তোলনের কাজ করে সংসার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেরই দৈনন্দিনের রোজগার আর খানিকটা ধারদেনার মধ্য দিয়ে মোটামুটি চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু প্রায় ৩ বছর ধরে জাফলং পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে ঘোর অন্ধকার। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তারা। পরিবার পরিজন নিয়ে রয়েছেন বিপাকে। তাদের অভাব-অনটন আর মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা।
কথা হয় মাসুক, হান্নান, আলী, আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন পাথর শ্রমিকের সাথে। কথার এক পর্যায় মাসুক বললেন, আমাদের মত সাধারণ শ্রমিকের কোন মূল্য নেই। আমরা এ দেশের নাগরিক হয়েও দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন হয়ে আছি। ঘরে তিনবেলা খাবার জুটে না। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। খুব অসহায় হয়ে পড়েছি। আমাদের কান্না দেখার মত কেউ নেই। তার কথার সাথে একমত পোষন করে অনেকেই বলেন, আমরা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। কাজ করলে তিনবেলা খেতে পারি। না পারলে উপোষ থাকার অবস্থা হয়। তাদের মতো বর্তমানে জাফলং পাথর কোয়ারি সংশ্নিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিকের জীবনের চিত্র এটি।
জানা যায়, জাফলং পাথর কোয়ারি নিয়ে দেশে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০১৪ সালে প্রকাশিত গেজেট অনুয়ায়ী পিয়াইন নদী এলাকায় প্রায় ১৫৮ দশমিক ৭০ হেক্টর জায়গা পাথর কোয়ারি বলে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চাহিদার জোগান দিতে আশির দশক থেকে জাফলংয়ের ডাউকি ও পিয়াইন নদী থেকে পাথর আহরণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে স্থানীয় লোকজন। কালের পরিক্রমায় তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা খেটেখাওয়া হাজারও মানুষ।
তবে পরিবেশ বিনষ্টের বিষয়টি বিবেচনায় এনে পাথর উত্তোলন বন্ধে সোচ্চার হয় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে ২০০৯ সালে জাফলংয়ের ডাউকি নদীকে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) এলাকা ঘোষণার জন্য উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করে। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে ২০১২ সালে ডাউকি নদীর ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যার গেজেট প্রকাশ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী ইসিএ ঘোষিত এলাকার সীমানা চিহ্নিত করে ওই এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করে গোয়াইনঘাটের উপজেলা প্রশাসন।
কিন্তু অদৃশ্য কারণে ২০১৮ সাল থেকে ইসিএ এলাকার বাইরে পিয়াইন নদী এলাকার গেজেটভুক্ত কোয়ারি থেকেও পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জাফলংকে ইসিএ ঘোষণার নির্দেশনা দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জাফলংকে ইসিএ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। যার ফলে প্রায় ৩ বছর ধরে পাথুরে জনপদে কর্মহীন হয়ে পড়েছে এখানকার কয়েক হাজার মানুষ। তাদের জনজীবনে দেখা দিয়েছে হাহাকার।
জাফলং বল্লাঘাট পাথর উত্তোলন ও সরবরাহকারী শ্রমিক বহুমুখী সমবায় সমিতি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনছুর আহমদ জাহিদ জানান, পাথর কোয়ারি নির্ভর কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে অন্তত কোয়ারির নামে গেজেটভুক্ত এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমোদন দেয়ার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
জাফলং বল্লাঘাট পাথর ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এর সাধারণ সম্পাদক মো: শামীম পারভেজ জানান, মুদি দোকান থেকে শুরু করে গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই জাফলং পাথর কোয়ারির ওপর নির্ভরশীল। এই কোয়ারি বন্ধ হওয়ার কারণে বেকার হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ফলে উপজেলাজুড়েই দেখা দিয়েছে হাহাকার। কাজেই মানবিক দিক বিবেচনা করে জাফলংয়ের ইসিএ এলাকার বাইরে কোয়ারির গেজেটভুক্ত এলাকা থেকে পাথর উত্তোলনের অনুমতির জন্য ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd