সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৫৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সুনামগঞ্জ জেলার প্রাকৃতিক সম্পদ তথা অন্যতম অর্থনৈতিক কর্মকা-ের উৎস হলো বালু, পাথর ও কয়লা। এসব পণ্য নদীপথে পরিবহন করে সারা দেশে পৌঁছে দেয়া হয়। নদীপথে বালু, পাথর ও কয়লা পরিবহনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে পুরো জেলায় গড়ে উঠেছে নানা নামের চাঁদাবাজ চক্র। নদীপথের বিভিন্ন পয়েন্টে এরূপ চাঁদাবাজচক্রের সদম্ভ উপস্থিতি। এদের কেউ কেউ ইজারা গ্রহণের নামে বৈধতার লেবাসধারী আবার কেউ কেউ একেবারেই অবৈধ। যারা ইজারা গ্রহণ করেছেন, ইজারা শর্তে তারা কী পরিমাণ ট্যাক্স টুল আদায় করতে পারেন তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ আছে। নির্দিষ্ট পরিমাণের ট্যাক্স টুল আদায় করা হলে কোনো পক্ষ থেকেই আপত্তি উঠার সুযোগ নেই। যখন এই বৈধ হারের চাইতে অনেক বেশি টাকা দাবি করা হয় এবং দাবিমত টাকা দিতে নৌকার উপর জোরজবরদস্তি করা হয় তখনই একে চাঁদাবাজি বলা হয়। আর যারা অবৈধভাবে নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে নৌকা থেকে টাকা তুলেন তারা তো চাঁদাবাজই বটে। চাঁদাবাজদের কারণে কয়লা, চুনাপাথর, বালু ও পাথরের পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায় যা পণ্যমূল্য বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলত ক্রেতা জনসাধারণের ঘাড়ে গিয়ে বর্তায়। এমন বেপরোয়া চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নানা সময়ে পরিবহনকারী নৌকার মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হলেও অবস্থার বিশেষ হেরফের হতে দেখা যায় না। কখনও লোকদেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও ভুক্তভোগীরা একে সাজানো নাটক হিসাবে আখ্যায়িত করেন। সুনামগঞ্জের নদীপথের এই চাঁদাবাজি জেলার বাইরের এসব পণ্যের ক্রেতা ও পরিবহনকারীদের যথেষ্ট বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছে যা চূড়ান্তভাবে জেলার অথনৈতিক কর্মকা-ের জন্য এক ধরনের হুমকি।
চাঁদাবাজির সাথে সরাসরি সরকারি দলের সংশ্রবের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরে প্রকাশিত একটি সংবাদ থেকে জানা যায়, পাটলাই নদীতে এমন চাঁদাবাজির সাথে জনৈক যুবলীগ নেতা জড়িত। তিনি নিজেকে প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নেয়া বৈধ ইজারাদার দাবি করে আইন মোতাবেক টুল আদায়ের কথা বললেও নৌকার মালিক-শ্রমিকরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেনÑ নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে অনেক বেশি টাকা নেয়া ও অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করলে মারধর করার। খোঁজ নিলে জানা যাবে সর্বত্রই এরকম ক্ষমতাসীন দলের সংশ্লিষ্টতা অনেকটা অপেন সিক্রেট। চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক উদ্যোগও অনেক বেশি লোক দেখানো ধরনের হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে যেসব অভিযান পরিচালিত হয় সেজন্য চাঁদাবাজরা প্রস্তুতই থাকে। চাঁদাবাজি কারা করে তাদের পরিচয় প্রশাসনের অজানা থাকার কথা নয়। ইচ্ছা করলে এমন অবৈধ চাাঁদাবাজি পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। কিন্তু তা কেন সম্ভব হচ্ছে না তা সকলের নিকট অনুমেয়। পাটলাই নদীর চাঁদাবাজি নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার, সিলেটের নিকট দাখিল করা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০ টাকা টুলের জায়গায় ২ হাজার টাকা এবং ৫০০ টাকার জায়গায় ৫ হাজার টাকা দিতে তাদের বাধ্য করা হয়। এ থেকে চাঁদাবাজির বেপরোয়াত্ব বুঝা যায়। জেলার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকা-ের এই জায়গাটিকে সচল রাখতে এমন অবৈধ চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অনৈতিক ও বিধিবর্ভিূত কর্মকা- নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কঠোর ভূমিকা কামনা করেন জড়িত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।
জেলার বালু-পাথর মহালগুলো প্রভাবশালীদের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালীদের সিন্ডিকেট ওই সোনার ডিম পাড়া হাঁসের পেট চিড়ে সকল ডিম পাওয়ার লোভে হাঁসটিকেই মেরে ফেলছেন। অথচ এটিকে বাঁচিয়ে রাখলে জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শ্রমজীবী পরিবারের কর্মসংস্থানের সুনিশ্চিত ব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম উপায় হিসাবে অনবদ্য ভূমিকা রাখতে পারত। বিষয়টির প্রতি আমরা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd