পরিচালকের চৌকস-কর্মদক্ষতায় বদলে গেছে ওসমানী হাসপাতালের দৃশ্যপট

প্রকাশিত: ১২:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

পরিচালকের চৌকস-কর্মদক্ষতায় বদলে গেছে ওসমানী হাসপাতালের দৃশ্যপট

আজিজুর রহমান :: এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া-এর চৌকস ও কর্মদক্ষতায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। প্রশমিত হয়ে গেছে হাসপাতালের চিরায়ত সকল অনিয়ম ও দূর্নীতি।
উন্মাচন হয়েছে এক নবদিগন্তের। অতীতের সকল ক্ষতি পোষিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে সরকারের রাজস্ব আয়। গত ২০-২১ অর্থ বছরে যেখানে এক বছরে রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ৬৭৫ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমান পরিচালক যোগাদানের পর ২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৫ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৭২
লক্ষ টাকা। ফলে বিগত একবছরের আয় চলতি বছরের ৫ মাসের আয়ের প্রায় সমান। যা হাসপাতালের জন্য উন্নয়নের মাইলফলক।

সিলেটে ওসমানী মেডিক্যাল হাসপাতালে কিছুদিন পূর্বে যেখানে জরুরি বিভাগে ছিল দালালের দৌরাত্ম ও দাপটে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগিকে কে আগে রিসিভ করবে? কে আগে ট্রলি করে রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে যাবে? সেই প্রতিযোগিতায়
মেতে ওঠতো দালালারা। উপরন্তু ছিল বকশিস নিয়ে দর কষাকষি। আর বকশিস না দিলে তো হেনস্থার শিকার হতে হত রোগীর বা রোগীর স্বজনদের। আর এখন উল্টো দৃশ্য দেখা যাচ্ছে জরুরি বিভাগ, ইনডোর ও আউটডোরে।

হাসপাতালে ঢুকতেই আগে কাউন্টারে দেখা যেত টিকেটের জন দীর্ঘ লাইন। সামনে থাকতো চিকিৎসা সেবা প্রত্যাশী রোগীদের ভিড়।এখন আর টিকিট কাউন্টারে লাইন দেখা যায় না। এক সময় হেল্পডেস্কের সামনেও থাকতো ভিড় । প্রতি ওয়ার্ডে সেবার মান বাড়ায় এখন হেল্পডেস্কে আর ভিড় দেখা যায় না। পরিবর্তিত এ অবস্থা জানান দিচ্ছে স্বচ্ছ ও নিরচ্ছিন্ন চিকিৎসা সেবার বণিল বার্তা। আন্ত:র্বিভাগের ওয়ার্ডগুলোতে প্রবেশে এখন বেশ কড়াকড়ি। রোগী প্রতি একজন দর্শনার্থী বা এটন্টে থাকতে পারছেন। আর এ জন্যও নিতে হয় অনুমতিপত্র। নিরাপদ চিকিৎসা সেবার জন্য এ ব্যবস্থা অত্যন্ত কল্যাণকর বলে রোগী সাধারণরা জানিয়েছেন।
অতীতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ছিল ওষুধ কোম্পানীগুলোর এজেন্ট ও প্রতিনিধিদের সরব উপস্থিতি ও কলেরব। এখন নেই ওষুধ কোম্পানির লোকজনের সেই অবাধ উপস্থিতি। তাঁরা হাসপাতালে ঢুকতে পারেন সপ্তাহে ২ দিন। আর তা-ও বেলা একটার পর।

অপরাধ-অপকর্ম দমনে ওসমানী হাসপাতাল ও এলাকাকে বর্তমানের সার্বক্ষনিক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সিসি ক্যামেরা দিয়ে ২৪ ঘন্টা মনিটরিং করা হয় সার্বিক কার্যক্রম। সেবা সহজীকরণ ও ভোগান্তিমুক্ত সেবা প্রদানে আরও বেশি উদ্যোগী হয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হলে কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগেরও সুযোগ পাচ্ছেন রোগীরা ও তাদের এটেন্ডেন্টরা। হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে দৃশ্যমান হচ্ছে সেবা নির্দেশিকা ও যোগাযোগের ফোন নাম্বার। ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো- হাসপাতালের পরিচালক নিজেও সেবা প্রার্থীদের সমস্যার কথা মুঠোফোনের মাধ্যমে শোনে থাকেন এবং রোগীর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা গ্রহণে সহযোগিতা করে থাকেন।

গত শনিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে এমন দৃশ্য। এ ব সময় প্রতিবেদকের কথা হয় পুরনো বিভিন্ন রোগি ও তাদের স্বজনদের সাথে। তারা বলেন, এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল যেন এখন এক অপরিচিত চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র। জরুরী বিভাগ ও ওয়ার্ডগুলেতে নেই আগের পরিচিত দালাল ও টাইট-বাটপারদের উৎপাত, জরুরী বিভাগে ভর্তি রিসিট নিয়ে নেই আগের মত টানাটানি। নেয়া হচ্ছে না ভর্তি বাবদ অতিরিক্ত টাকা, এমনকি বকশিস বাহিনীও এখন আর নেই। হাসপাতালের ওয়ার্ড-মেঝেতে নেই ময়লা আবর্জনা, রোগি ভর্তিও সঙ্গে সঙ্গে ট্রলি ধরার প্রতিতযোগিতাও নেই। নেই বয়-ব্রাদার ও আয়াদের সিট বাণিজ্য। পুরো হাসপাতাল এখন ঝকঝকে চকচকে, মনোরম ও বর্ণিল চিকিসালয়।

কয়েক মাস আগে হামিদা নামের একজন আসেন তার বাবাকে নিয়ে সিসিইউ ওয়ার্ডে হার্টের চিকিৎসা নিতে। তখন ট্রলি বাবদ ২৫০ টাকা,গেইটম্যাকে প্রতিবার প্রবেশে ১০০/৫০ টাকা করে দিতে হয়েছে। বাবা কিছুটা সুস্থ্য হলে ওনাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। আবার অসুস্থ হলে ঠিক গত শনিবার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন তিনি। এসে দেখেন জরুরী বিভাগে সেই চিরচেনা হৈচৈ আর নেই, তার বাবাকে ভর্তি করার জন্য আগের মত এগিয়ে আসেনি দালালরা, ট্রলিতে করে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলেও কেউ টাকা চায়নি। ওসমানী হাসপাতালে এমন পরিবর্তন দেখে ওসমানী হাসপাতাল বলে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। মনে হচ্ছিল এটা কোন অত্যাধুনিক কোন বেসরকারি হাসপাতাল। তিনি আরো জানান,আমার কাছে কেউ অতিরিক্ত টাকা চায়নি। ভর্তি বাবদ ২৫ টাকা নিয়েছে, এ জন্য ভর্তি রিসিট দিয়েছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারি নাই প্রশাসন এখন এত শক্ত।

শনিবারে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা খলিলুর রহমান জানান, একটি দাঁত ফেলতে দু বছর আগে ওসামনী হাপাতালে এসেছিলাম, দাঁতের এক্সরে করাতে আমাকে দুবার করে ডায়গনিস্টিক সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল। ব্যয় হয়েছিল অনেক টাকা। ওষুধ সেবন করে ৭ দিন পরে এসে ফেলতে হয়েছিল যন্ত্রদায়ক দাঁতটি।এবার অপর একটি দাঁত ফেলতে এসে দেখি আগের সেই অবস্থা আর নেই। ডেন্টাল বিভাগের সব অনেক উন্নতমানের চিকিৎসা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের ভেতরেই স্থাপিত হয়েছে দাঁতের দুটি এক্সরে কক্ষ। একটিতে ফ্রি এবং অপরটিতে সামান্য টাকা দিতে হয়। এক্সরে শেষ হলেই বিলম্ব না করে আমার দাঁতটি ফেলে দেওয়া হয়। এবার আর ৭ দিন যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়নি চরম বেদনাদায়ক দাঁতের। তিনি বলেন,আগে ঔষধ নিতে আবাল বৃদ্ধ বণিতা ও পুরুষ-মহিলাদের লাইনে দাঁড়াতে হতো । এবার দেখি বাইরের ভবনে করা হয়েছে পৃথক পৃথক ঔষধ ডেলিভারি কাউন্টার। স্টাফদের জন্য আলাদা, মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আলাদা। পুরুষ মাহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা কাউন্টার। তাই হাসপাতাল থেকে ঔষধ সংগ্রকে আগের মত বেগ পেতে হয়নি।

সেবা নিতে আসা মোঃ আবুল হোসেন জানান, হাসপাতালে আগে দূর্গন্ধের জন্য প্রবেশ করতে মুখেহাসি কাপড় চেপে ধরতে হতো। এখন আর দূগন্ধ নেই,হাসপাতাল কত পরিস্কার। কোথাও কোন ময়লা আবর্জনা নেই। ওয়ার্ডের ভিতর রুম,বেড সব পরিস্কার। নিচ তলা থেকে উপর তলা উঠা নামা করতে এখন রোগীদের সিড়ি বেয়ে ওঠতে নামতে হয় না। প্রতিটি স্থানে রোগি বহন করার জন্য আলাদা আলাদা লিফট রয়েছে। এমন পরিবেশ সব সময় থাকলে ভালো এবং জনকল্যাণকরই হতো।

কথা হয়, সুনামগঞ্জে দোয়ারা বাজার প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক আশিক মিয়ার সাথে, তিনি জানান, গত চারদিন থেকে হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ছোট ভাইকে নিয়ে আছেন। এর আগেও আমি হাসপাতালে ছিলাম । কিন্তু বর্তমান সময়কার মত এত ভালো ব্যবহার কেউ করেনি। ডাক্তার, নার্স, আয়া সবাই যেন বাড়ির লোক। এখন কেউ আগের মত খারাপ ব্যবহার করেন না। ভর্তির সময় কেউ কোন টাকা পয়সা চায়নি।
শোনে আসছিলাম হাসপাতালে এদিক-সেদিক টাকা নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু কেউ তো আর টাকা চায়নি।

সিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়া জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমরা সবাই মিলে পরিকল্পনা নিচ্ছি।
উন্নয়নের চাবিকাঠিই হলো সুৃষ্টু ও নিখুত পরিকল্পনা। এটা আমার অবদান তা কিন্তু নয়। আমি উন্নয়ন ও উন্নতির চেষ্টা করছি মাত্র। তিনি বলেন, আমরা একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে চেয়েছি, সেটাই করছি। আমরা দেখছি জরুরী বিভাগে সমস্যা আছে, সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি। হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে অনেক দোকান ছিলো। যা ছিল ক্ষুদ্রাকারে একটা বাজারের মতো। আর সেখানে বহিরাগত অনেকের আনাগোনা ছিল। সেই দোকানগুলো এখন আর নেই। সবকিছু নিয়মতান্ত্রিক চলছে। আগামীতেও নিয়মতান্ত্রিক চলবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সিলেটবাসির সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

December 2022
S S M T W T F
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  

সর্বশেষ খবর

………………………..