সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের হকার পুনর্বাসন উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গোটা নগর জুড়ে ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তা দখল করে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট অপরদিকে সংকুচিত হয়েছে জনসাধারণের চলার পথ। অথচ হকার পুনর্বাসনের জন্য বড় উদ্যোগ নিয়েছিল সিসিক। ব্যবসা জমছেনা এমন অজুহাতে ফের রাস্তায় ব্যবসা করতে নেমেছে তারা। এ নিয়ে সিসিকের নিরবতায় দিন দিন বাড়ছে ভ্রাম্যমাণ হকারদের সংখ্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর যানজট নিরসন ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ২০২০ সালে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন। সিসিকের এ কাজে এগিয়ে আসে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। যৌথ প্রচেষ্টায় ঐ বছরের শেষের দিকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পেছনের লালদিঘীরপাড় মাঠে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।
ব্যাপক আয়োজন ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হকারদের জন্য নির্মাণ করা হয় শেড। ব্যবসার ধরণ বুঝে কয়েক সারি করে দোকান কোটা বরাদ্দ দেয়া হয় হকারদের জন্য। প্রতিটি সারিতে ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এমনকি প্রতিটি সারির আলাদা আলাদা নামও দেওয়া হয়। এতো আয়োজন করার পরও হকারদের লালদিঘীরপাড়মুখী করতে পারেনি সিসিক।
শুরু থেকেই অধিকাংশ হকার এ উদ্যোগকে ভালোভাবে নেননি। উদ্বোধনের পর গুটিকয়েক হকার দোকান কোটায় ব্যবসা শুরু করেন। আর বেশিরভাগ হকারই বিচ্ছিন্নভাবে নগরীর বিভিন্ন স্থানে ফুটপাতে ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকেন। এখন ফের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ও সিসিকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চলছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার।
ফলে সিসিকের সুষ্ঠু তদারকি ও অবহেলায় লালদিঘীরপাড় হকার পুনবার্সনস্থল এখন প্রায় হকারশুণ্য। দিনের বেলায় কিছু হকার সেখানে থাকলেও সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ে রাস্তা কিংবা ফুটপাতের উদ্দেশ্যে। পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরুর ২ বছরের মাথায় হকাররা আবারও ফুটপাতে চলে যাওয়ায় এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।
জানা গেছে, ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদে সিসিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। মাঝেমধ্যে উচ্ছেদের নামে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে সিসিক। অভিযানে হকারদের শত শত ঠেলা ও ভ্যানগাড়ি জব্দ করে নিয়ে যান সিসিকের কর্মকর্তারা। কিন্তু অভিযান শেষের পরই সিসিকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে জব্দ করা ঠেলা ও ভ্যানগাড়ি হকারদের কাছে ফিরিয়ে দেন। ফলে আবারও ফুটপাত দখলে নেন হকাররা।
অন্যদিকে, হকার উচ্ছেদ না হওয়ার পেছনে পুলিশের অনিয়মের অভিযোগও রয়েছে। পুলিশ সদস্যরা হকারদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন লালদিঘীরপাড়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সহস্রাধিক হকারকে পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দকৃত মাঠে হাতেগোনা কয়েকজন হকার আছেন। আর বাকি হকাররা আগের মতোই নগরের বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে। হকারদের পুনর্বাসনের মাঠের সামনের দিকের হাতেগোনা কিছু দোকান ছাড়া পেছনের পুরো মাঠই ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
লালদিঘীরপাড় মাঠের হাফিজুর রহমান নামের কাপড় বিক্রেতা বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে এই মার্কেটে স্থান দেয়ার প্রথম দিকে লোকজন আসা যাওয়া করলেও দিন দিন তা কমছে। এরপরও আমি পড়ে আছি এখানে। কিন্তু সাথের অনেকেই এখান ছেড়ে ফুটপাতে দোকানদারি করে ভালো ব্যবসা করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, তালতলা, আম্বরখানা, চৌহাট্টাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার প্রধান সড়কগুলো হকারদের নিয়ন্ত্রণে। এসব সড়কের দুপাশের রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তারা দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছেন। ফলে নগরীতে দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। ব্যাহত হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানুষের স্বাভাবিক চলাচল।
নগরীর জিন্দাবাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে জানা যায়, জিন্দাবাজারে ট্রাফিক জ্যাম আগেও ছিল তবে খুব বেশী সময় লাগতোনা। কিন্তু এখন জ্যাম লাগলে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় চলে যায়। এর মূল কারণ সড়ক ও ফুটপাতের অধিকাংশ জায়গা হকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া। এছাড়াও বিপনী বিতানে দোকান ভাড়া নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ভ্রাম্যমাণ হকাররা কম মূল্যে নিম্নমাণের পণ্য বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারিত করছে। একদিকে ক্রেতারা মানসম্পন্ন পণ্য পাচ্ছেন না, অপরদিকে দোকান ভাড়া নিয়ে যারা ব্যবসা করছেন তারাও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সিসিকের হকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ও স্থান নির্বাচনে নগর কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন সিলেটের সচেতন মহল। তারা বলছেন, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগের হকার উচ্ছেদ বেশিরভাগ সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। হকারদের জন্য নির্মিত হকার শেডগুলো মানসম্মত ছিল না। এখানে সিটি করপোরেশন যে অর্থ ব্যয় করেছিল তা জলে গেছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক বলেন, আমি যোগদানের মাত্র ৩ সপ্তাহ হয়েছে। সব বিষয় এখনো ভালোভাবে জানতেও পারিনি। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ফুটপাত হকারমুক্ত করা আমার একার পক্ষে সম্ভব না। এক্ষেত্রে নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে। আমি যখন নগরীর রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ করতাম তখন অনেকে হকার পুনর্বাসনের দাবি তুলেছিল। পরবর্তীতে যখন সিসিকের উদ্যোগে হকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা হলো সেখানে কয়েকদিন বসে এখন তারা ব্যবসা করতে নারাজ। এরপরও সিসিকের নিয়ম মাফিক অভিযান কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd