সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে একটি ভবনের কক্ষ থেকে সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় ফারহানা হক মিলির (২৪) লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে নগরের তেলিহাওর এলাকায় সিল ভ্যালি ক্যাসল নামক ভবনে শোয়ার ঘর থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ মিলির স্বামী নুর আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা হেফাজতে নিয়েছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, ‘মরদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আজ ভোরের দিকে মিলির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিলিংফ্যানের সঙ্গে ঝোলানো মরদেহের হাঁটু বিছানায় লাগানো ছিল। তাতে যথেষ্ঠ সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। সহকারী পুলিশ কমিশনার শামসুদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কোতোয়ালি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শাওন মাহমুদ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর মরদেহ ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।’
মিলির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তেলিহাওর এলাকার সিল ভ্যালি ক্যাসলের তৃতীয় তলার এ-২ ইউনিটে মিলি ও মিলির বড় বোন রেহানা হক সুহেলি তাঁদের স্বামীসহ ভাড়ায় থাকেন। গতকাল শুক্রবার রাতে মিলি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। স্বামী ঘুমান আলাদা কক্ষে। আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত মিলির ঘরের দরজা ভেতর থেকে লাগানো দেখে পরিবারের সদস্যরা ডাকাডাকি করেন। সাড়াশব্দ না পেয়ে একপর্যায়ে একটি থাই গ্লাসের দরজা এবং কক্ষের মূল দরজা ভেঙে মিলির মরদেহ খাটের ওপরে হাঁটু গেঁড়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। তাঁর গলায় ওড়না পেঁচানো। পরিবারের সদস্যরা কোতোয়ালি থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
মিলির বড় বোন রেহানা হক সুহেলি বলেন, ‘সাড়ে চার বছর আগে নুর আলমের সঙ্গে মিলির বিয়ে হয়। এরপর থেকে তিনি এবং মিলি স্বামী নিয়ে সিল ভ্যালি ক্যাসলের ওই বাসায় ভাড়া থাকেন। মিলির স্বামী দৃশ্যমান কোনো চাকরি বা পেশায় জড়িত না। উল্টো অনলাইনে জুয়া খেলে লাখ লাখ টাকা উড়িয়েছে। এমনকি নিজের একটি ঘর বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা এক দিনেই জুয়া খেলায় হারিয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে মিলি ও তার স্বামীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। অনেক সময় স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হত মিলি। আগে কয়েকবার স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে মিলি। অনেক সময় একসঙ্গে অনকেগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতো মিলি।’
মিলি আত্মহত্যা করলে তো তার পা এভাবে বিছানায় থাকার কথা নয় মন্তব্য করে রেহানা বলেন, ‘পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত করলে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস-আমার বোন এভাবে আত্মহত্যা করতে পারে না।’
এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শামসুদ্দিন সালেহ আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘মিলি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন কি না, তাও জানার চেষ্টা চলছে।’ নিহতের ভাই সাংবাদিক এনামুল হক রেনু ও আমিনুল হক সিপনের অভিযোগ, মিলিকে নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে।
তাঁরা বলেন, মিলির স্বামী নুর আলম তাঁর স্ত্রীর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৬ লাখ টাকা তুলে অনলাইনে জুয়া খেলেছেন। সেই সঙ্গে মিলির ব্যবহৃত স্বর্ণ দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে জুয়া খেলেছেন। এসব বিষয় নিয়ে তাঁদের বোনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির জের থেকে মারধর করা হয়। এরই জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। মিলির ভাই আমিনুল হক সিপন আরও বলেন, ‘আমার বোন জেলা পর্যায়ে ব্যাডমিন্টন খেলত।’
অভিযোগের বিষয়ে নুর আলম বলেন, ‘আমাদের প্রায়ই ঝগড়া হতো। মিলি খুব রাগী ছিল। কখনো রাগ করে ২-৩ দিন ঘুমের ট্যাবলেট থেকে ঘুমিয়ে থাকতো। গত বৃহস্পতিবার রাতেও ঠিক একইভাবে রাগ করে দরজা বন্ধ করে থাকে মিলি।’
জুয়া নয় পেশা হিসেবে অনলাইনে ডলার কেনা-বেচা করতেন দাবি করে নুর আলম বলেন, ‘স্ত্রীর কাছ থেকে কোনো টাকা নিইনি। বাড়ির জমি বিক্রি করে বিনিয়োগ করেছি। মিলির ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা উঠাইনি।’
মিলি সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিরাজুল হকের মেয়ে। স্বামী নুর আলমের বাড়ি দিরাই উপজেলার কালিয়ারখাপন গ্রামে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd