সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৫৭ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
ডেস্ক রিপোর্ট: বিদায়ি বছর ব্যাংক খাতের বাইরে বা মানুষের হাতে নগদ অর্থের অঙ্ক ২ লাখ ৬৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা, যা ২০২১ সালে ছিল ২ লাখ ১০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মানুষের হাতে নগদ অর্থের অঙ্ক বেড়েছে ৫৭ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, যা ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
আবার ২০২০ সালে মানুষের হাতে রাখা অর্থের অঙ্ক ছিল ১ লাখ ৮৭ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ২০২১ সালে হাতে নগদ অর্থ বেড়েছিল ২৩ হাজার ২৬১ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ঋণে সুদহারে সীমা, মূল্যস্ফীতি ও ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে অনেক গ্রাহক সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংক থেকে অস্বাভাবিকভাবে উত্তোলন করেন। এতে গত এক বছরের ব্যবধানে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ৫৭ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা, যা ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর তারল্য সংকট সামাল দিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে প্রয়োজনীয় তারল্য সুবিধা দিয়ে গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমনকি গত রোববারও প্রচলিত ব্যাংকের মতো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংককে আপৎকালীন অর্থ সহায়তার লক্ষ্যে নতুন নীতিমালা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মানুষ যখন অর্থ হাতে রাখতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তখন ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থ বেড়ে যায়। সম্প্রতি মূল্যস্ফীতি বেশ বেড়েছে। তাই মানুষের বাড়তি খরচ হচ্ছে। বাড়তি খরচ মেটাতেই অনেকে নগদ অর্থ তুলে খরচ করতে পারেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত জুনে মানুষের হাতে থাকা অর্থের অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা। সে অঙ্ক ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে শুধু ছয় মাসে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে রাখা নগদ অর্থের অঙ্ক বেড়েছে ৩১ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘গত বছর এপ্রিল থেকে ডলারের মূল্য বেড়ে যায়। এতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। আর নিত্যপণ্যের বাড়তি জোগানের পেছনে খরচ বাড়ায় অনেকে সঞ্চয়ের অর্থ তুলে নিচ্ছিলেন। এছাড়া গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ১০ ব্যাংককে দুর্বল হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি গণ্যমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাংকের ওপর আস্থার সংকট দেখা দেয়। এতে অনেক গ্রাহক অর্থ তুলে হাতে রাখেন।
এতে ব্যাংকগুলোয় ব্যাপক তারল্য সংকট দেখা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়া ব্যাংকের আপৎকালীন অর্থ সহায়তা অব্যাহত রাখে।’
সূত্র জানায়, তিনটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক থেকে মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন গ্রাহকরা। এতে ব্যাংকগুলোয় তারল্য সংকট দেখা দেয়। এমনকি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের অনিয়ম ও পাচার নিয়ে খবর প্রকাশ হওয়ার পরই গ্রাহকের আস্থা ধরে রাখতে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা সাময়িক সহায়তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মানুষ ব্যাংকে সঞ্চয় করে সুদ পেত। মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় যা এখন অনেক কম। বলা যায়, প্রকৃত সুদহার ঋণাত্মক হয়ে গেছে। সুদ না পেলে মানুষ অন্য কোথাও অর্থ বিনিয়োগ করবে। এতে ব্যাংকের তারল্য সংকট তৈরি হবে। এছাড়া আস্থার ঘাটতির কারণেও ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিতে পারেন গ্রাহকরা।
এদিকে দেশের প্রচলিত ধারার ব্যাংকের মতো শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোও আপৎকালীন তারল্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুদারাবাহ লিকুউডিটি সাপোর্ট (এমএলএস) পদ্ধতি চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন শরিয়াহ ব্যাংকগুলো এমএলএস-এর আওতায় ৭, ১৪ ও ২৮ দিন মেয়াদি বিশেষ তারল্য সুবিধা সপ্তাহের প্রতি প্রথম কার্যদিবসে নিতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা প্রকৃত মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। কেননা বর্তমান বাজার মূল্যস্ফীতি সরকারিভাবে ৯ শতাংশের বেশি। তবে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে, এই হার ১৩ শতাংশের কম হবে না।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd