বাংলাদেশি গ্রাউন্ডসম্যান মামুন নেপালের প্রধান কিউরেটর হওয়ার গল্প

প্রকাশিত: ৮:৫০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২৩

বাংলাদেশি গ্রাউন্ডসম্যান মামুন নেপালের প্রধান কিউরেটর হওয়ার গল্প

ক্রীড়া ডেস্ক: আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর ক্রিকেট অবকাঠামোর উন্নতিতে পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তার ধারাবাহিকতায় নেপালের হোম অব ক্রিকেটের পিচ ও আউটফিল্ড আন্তর্জাতিক মানের করতে সহায়তা করছেন বিসিবির প্রধান গ্রাউন্ডসম্যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন। যিনি দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নেপালে আছেন। সেখানকার প্রধান ভেন্যু মুলপানি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিঃসন্দেহে সাধারণ গ্রাউন্ডসম্যান থেকে নেপালের মূল মাঠের প্রধান কিউরেটর হওয়াটা মামুনের জন্য বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশের এই গ্রাউন্ডসম্যান মনে করেন, ২০ বছরের অভিজ্ঞতার ফল পাচ্ছেন তিনি।

 

ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপালের আমন্ত্রণে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তিন জনের একটি দল সেখানে যায়। বিসিবির কিউরেটর শফিউল আলম বেলাল, বিসিবির সহযোগী কিউরেটর হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে হেড অব গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে নেপালে যান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুনও। সেখানে স্থানীয় কিউরেটর ও গ্রাউন্ডসম্যানদের নিয়ে আয়োজন করা হয় একটি ট্রেনিং সেশনের। ট্রেনিং শেষ করে বেলাল ও হুমায়ুন দেশে ফিরে এলেও মামুনের হাতে মুলপানি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রধান কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। মামুনের সেখানে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা।

 

গ্রাউন্ডসম্যান থেকে কীভাবে নেপালের কিউরেটর হয়ে ওঠা, সেই গল্প শুনিয়েছেন মামুন। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘বিসিবির মাধ্যমে আসছি। তারাই আমাকে পাঠিয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে বিসিবিতে কর্মরত। ওই হিসেবে আমার চাকরির অভিজ্ঞতা ২০ বছর। বর্তমানে বিসিবিতে প্রধান গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবে কর্মরত আছি। মূলত নেপালে আমাকে হেড গ্রাউন্ডসম্যান হিসেবেই পাঠানো হয়েছিল। আসার পর ওদের এখানে স্থানীয় যে কিউরেটর-গ্রাউন্ডসম্যান আছে, তাদের তিন দিনের একটি ওয়ার্কশপ করিয়েছি। আমি ছিলাম, বেলাল স্যার, হুমায়ুন ভাই ছিলেন। তারা দুজন ট্রেনিং সেশন করিয়ে দেশে ফিরে গেছেন।’

 

মামুন জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে নেপালে গিয়েই বাংলাদেশের তিন প্রতিনিধি দুটি মাঠ পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু মাঠের অবস্থা দেখে আশাহত হন তারা। বিশেষ করে মুলপানি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট, আউটফিল্ড সবকিছুই ছিল খেলার অনুপযুক্ত। এমন মাঠে প্রাণ ফিরিয়েছেন মামুন, “নেপালে পৌঁছেই আমরা বেশ কিছু মাঠ পরিদর্শন করি। ওদের ত্রিভুবন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাঠ আছে। ওই মাঠটি মোটামুটি ভালো। কিন্তু মুলপানি স্টেডিয়ামের মাঠটি মোটেও ভালো নয়। আমরা তিন জন মিলে পরিকল্পনা করলাম কীভাবে কী করবো। কাজ শুরুর আগে মাঠটি ছিল পুরোপুরি আনইভেন্ট। প্রায় দেড় মাস কষ্ট করার পর মাঠটাকে গ্রিন বানালাম। মাঠটা এখন অনেক সুন্দর। আগে এখানে ঘরোয়া যে লিগগুলোতে রানই উঠতো না, গড় রান ছিল দেড়শ’র মতো। ইতোমধ্যে কয়েকটি ম্যাচ হয়েছে, যেখানে রান হচ্ছে দুইশ’, আড়াইশ’র কাছাকাছি। ব্যাটাররা সেঞ্চুরি, হাফসেঞ্চুরিও পাচ্ছে।’

 

বাংলাদেশের প্রধান কিউরেটরের সবগুলো পদেই আছেন বিদেশি। নেপালের মাঠে প্রাণ ফেরানো মামুনকে দেখে স্থানীয় কিউরেটররা নিশ্চিতভাবে নিজ দেশের দায়িত্ব নেওয়ার অনুপ্রেরণা পাবেন। মামুন অবশ্য তুলে ধরলেন বাস্তব পরিস্থিতির কথা, ‘আমাদের অনেক গ্রাউন্ডসম্যান আছে যারা অনেক কিছু পারে। কিন্তু তাদের ওই স্পেসটুকু দিতে হবে, কাজ করার ওই ফ্রিডমটা দিতে হবে। যদি স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই সে করে দেখাতে পারবে। এমনিতে আমরা যার তত্ত্বাবধানে কাজ করবো, তার মতো করেই কিন্তু কাজটা শেষ করতে হবে।’

 

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের টুর্নামেন্টের কারণে এবার দেশে ঈদও করা হবে না মামুনের। আগামী ১ মে টুর্নামেন্ট শেষ করে আরও এক সপ্তাহ থেকে তবেই দেশে ফিরবেন। এই মুহূর্তে তাকে মুলপানি স্টেডিয়াম ছাড়া নেপালের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা মাঠটিও দেখভাল করতে হচ্ছে। মামুন বলেছেন, ‘আমি দুইটা মাঠ দেখছি এই মুহূর্তে। ওদের এনএসসির একটি মাঠ আছে, সেখানে অনুশীলন হয়। উইকেটগুলোও আমি সিলেক্ট করে দিয়েছি। সেখানে একজন সহযোগী কিউরেটর আছেন। তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কীভাবে রোলিং করতে হয়। ওটাও আমি দেখাশোনা করছি। তবে মূল মাঠ যেখানে খেলা চলছে, সেটাতে আমি দেখাশোনা বেশি করছি।’

 

ক্যারিয়ারের এমন প্রাপ্তিতে বিসিবিকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন মামুন, ‘সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ বিসিবিকে, তারা আমাকে এই সুযোগ করে দিয়েছে। বিশেষ করে ধন্যবাদ গ্রাউন্ডস বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ বাতেন স্যার, ডেপুটি ম্যানেজার রতন কুমার স্যারকে।’

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2023
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..