গোলাপগঞ্জে গরু চুরি করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক- ৩

প্রকাশিত: ১:২২ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২৩

গোলাপগঞ্জে গরু চুরি করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক- ৩

বিশেষ প্রতিবেদন: সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযান চালিয়ে গরু সহ তিন চুরকে আটক করেছে পুলিশ।

থানার এসআই পার্থ সারথি দাস গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার দিবাগত রাত অনুমান ৩টা ৪০ মিনিটের সময় উপজেলার ঘোষগাঁও মাদ্রাসার সম্মুখ থেকে তাদের আটক করেন। এ সময় চুরি করে নিয়ে আসা একটি লাল রংয়ের গাভি গাভী গরু ও একটি কাগজপত্র বিহীন নীল কালারের পিকাপ জব্দ করে পুলিশ।

আটককৃতরা চুরেরা হলো উপজেলা লক্ষিপাশা মিরপুর গ্রামের মৃত তেরা মিয়ার ছেলে আব্দুল কাদির, উপজেলার দক্ষিণ বাঘা ইউনিয়নের ইউসুফ আলীর ছেলে মনোয়ার হোসেন, ও বাঘা রস্তুমপুর গ্রামের মোবারক আলী উরফে রেনু মিয়ার ছেলে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এ.কে মুন্না উরফে মুন্না আহমদ। আটককৃতরা পেশাদার গরু চুর বলে পুলিশ জানিয়েছে।

 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে পুলিশের মোবাইল ডিউটি করছিলেন থানার এসআই পার্থ সারথি দাস। হঠাৎ তার কাছে গোপন সংবাদ আসে শাহপরাণ থেকে একটি গরু চুরি করে নীল কালারের পিকাপ যোগে তিনজন চুর গোলাপগঞ্জ শহরের দিকে যাচ্ছে। বিষয়টি পার্থ সারথি থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে জানালে, তার দিক নির্দেশনা মোতাবেক পুলিশ পৌরসভার ঘোষগাঁও এলাকায় অবস্থান নেয়। রাত অনুমান ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে নীল কালারের পিকাপে তিনজন লোকসহ একটি গরু দেখতে পেয়ে পুলিশ তাদের গাড়ি থামানোর জন্য সিগন্যাল দিলে গাড়িটি ঘোষগাঁও এলাকায় রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে। পরে এলাকার লোকজনের সহযোগীতায় ঘোষগাঁও মাদ্রাসার সামনে গাড়িটি আটক করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

 

জিজ্ঞাসাবাদ কালে তারা জানায়, গরুটি তারা শাহপরাণ এলাকা থেকে চুরি করে নিয়ে এসেছে, এবং প্রায় সময় তারা জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, শাহপরাণ এলাকা থেকে গরু চুরি করে শহরে এবং উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে থাকে। এটাই তাদের আসল পেশা

 

আটককালে পুলিশি জেরার মুখে তারা নিজেদের পেশাদার গরুচুর হিসাবে স্বীকার করে। এসময় পুলিশ তাদের কাছ থেকে অনুমান ৫৫ হাজার টাকা দামের একটি লাল কালারের গাভী গরু এবং ৭ লাখ টাকা দামের একটি নীল পিকাপ উদ্ধার করে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদের মধ্যে একে মুন্না উরফে মুন্না আহমদ একজন পেশাদার চুর। ইতিপুর্বেও তার নিজ গ্রাম রস্তুমপুরে একটি সিএনজি চুরি করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে গণধোলাইর স্বীকার হয়। পরে মুসলকা দিয়ে জীবনে চুরি করবেনা বলে সে সময় রক্ষা পায়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। রস্তুমপুর গ্রামের একাধিকজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এ.কে মুন্না উরফে মুন্না আহমদ (৩০) এর পিতা মোবারক আলী উরফে রেনু জৈন্তাপুর এলাকা থেকে রস্তুমপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন।

 

আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করে গরুচুর মুন্না গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। সে একজন পেশাদার চুর জেনেও তাকে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাইয়ে দিয়েছেন এলাকার কিছু সুবিধাভোগী নেতা, এমনকি সে কোন দিন স্কুল-কলেজের বারান্ধায়ও যায়নি বলে অনেকে জানান।

এ বিষয়ে এসআই পার্থ সারথি দাস জানান, ঘটনার রাতে গোপন খবর পেয়ে ওসি স্যারের নির্দেশে আমরা অভিযান চালিয়ে পেশাদার এই তিন চুরকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের বিরুদ্ধে আমি বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করি। যাহা গোলাপগঞ্জ থানার মামলা-৮ তারিখ ১০/৮/২০২৩ ইং, ধারা ৪২৩ পেনালকোড।

থানা ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, বেশ কয়েকদিন থেকে থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে গরু চুরির খবর পেয়ে থাকি। কিন্তু সে সব চোরদের আমরা আটক করতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছি এর ধারাবাহিকতায় গতকাল তিন পেশাদার গরু চুরকে আটক করতে সক্ষম হই। তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মান্না আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন একে মুন্না ছাত্রলীগের কোন দায়িত্বে নেই। তবে পরবর্তীতে স্বীকার করে বলেন, তার নাম ভুলঃবশত কমিটিতে এসেছে। কমিটি হওয়ার পর থেকে তাকে আমরা কোন কার্যক্রমে দাওয়াত পর্যন্ত দেইনি।

উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, সে উপজেলার ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে। যখন চুরির বিষয়টি শুনেছি, তখন সাথে সাথে আমরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বিষয়টি অবগত করেছি। তারা যে ভাবে বলবেন, আমরা সেই ভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..