হ্যাম রেডিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মাঝে বিটিআরসি’র সনদ বিতরণ

প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১২, ২০২৩

হ্যাম রেডিও পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মাঝে বিটিআরসি’র সনদ বিতরণ

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : ২০২৩ সালের এ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও লাইসেন্স প্রাপ্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মাঝে সনদ বিতরণ করা হয়েছে। ৩০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকার আগারগাঁও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কার্যালয়ে এই সনদ বিতরণ করা হয়।
বেতার শ্রোতা সংগঠন সাউথ এশিয়া রেডিও ক্লাব (সার্ক) বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও রেডিও এক্টিভিস্ট দিদারুল ইকবাল ৬ আগস্ট বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)’র তরঙ্গ মনিটরিং ও সনাক্তকরণ শাখার উপ-পরিচালক প্রকৌশলী মো. মেহফুজ বিন খালেদের কাছ থেকে সনদপত্র গ্রহণ করেন। এসময় ইফতেখার মাহমুদ, মো. ইশতিয়াক মাহমুদ, সন্দ্বীপ রায় সৌরভ, হাফিজুর রহমান রাহাত, মো. আমিনুল ইসলাম খাঁন রিংকু সহ আরো বেশ কয়েকজন সনদ গ্রহণ করেন। ০৮ আগস্ট দিদারুল ইকবাল তার পছন্দের ৩টি কল সাইনের আবেদন করেন (ক. এস২১ ডেল্টা আলফা, খ. এস২১ লিমা আলফা এবং গ. এস২১ ডেল্টা ব্রাভো)। ইতিমধ্যে বিটিআরসি’র নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ১২০ জনেরও বেশি ব্যক্তি সনদপত্র সংগ্রহ করে কল সাইনের জন্য আবেদন করেছেন। সনদ সংগ্রহ ও কল সাইন আবেদনে দেশের এ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের অন্যতম সংগঠন এ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এআরএসবি)-এর একাধিক নেতৃবৃন্দ বিটিআরসি ভবনে উপস্থিত থেকে উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সহযোগিতা সহ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেন।
এরএসবি’র সাধারণ সম্পাদক অনুপ কুমার ভৌমিক বলেন, এ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র কল সাইন সরবরাহ করে বিটিআরসি। ইতোমধ্যে যেসব কল সাইন বিটিআরসি অপারেটরদের মাঝে সরবরাহ করেছেন সেগুলোর তালিকা এরএসবির ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। যেসব কল সাইন এখনও ব্যবহৃত হয়নি, বা বিটিআরসি হ্যামদের ইস্যু করেনি কেবলমাত্র সেগুলোর জন্য আবেদন করা যাবে।
২০২৩ সালের ১২ মে এ্যমেচার রেডিও সার্ভিস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফল প্রকাশ হয় ২৫ জুন। এবারের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে ৪১৫ জন এবং পরীক্ষায় অংশ নেন ৩৯৮ জন এদের মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে ৩৪৯ জন। উত্তীর্ণ প্রার্থীগণের অনুকূলে এ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়।
উল্লেখ্য, অ্যামেচার রেডিও সাধারণত নির্দিষ্ট বেতার তরঙ্গে অবাণিজ্যিকভাবে তথ্য আদান প্রদান, গবেষণা, মহাকাশচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ, ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ এবং আপদকালীন সময়ে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সহ জরুরি অবস্থায় ব্যবহৃত একটি টেলিযোগাযোগ সার্ভিস। প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা জরুরি অবস্থায় অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর সব দেশের জন্য রয়েছে আলাদা কল-সাইন। সেটা শুনলেই বোঝা যায় ব্যবহারকারীর পরিচয় এবং তিনি কোন দেশের নাগরিক। সারা পৃথিবীতে একজনের একটি মাত্র কল-সাইন থাকে। বাংলাদেশের হ্যামদের কল সাইন সিয়েরা ২১ ল্যান্ড (ঝ২১) দিয়ে শুরু।
হ্যাম রেডিও ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি বাংলাদেশে। একানব্বই সালে দেশ বড়সড় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়লে তখনকার সরকার হ্যাম রেডিও’র গুরুত্ব বেশি করে বুঝতে পারে। ফলে অনেক নিয়মকানুন বেঁধে দিয়ে ১৯৯১ সালের ২৯ আগস্ট হ্যাম রেডিও স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশ সরকার এবং ১২ সেপ্টেম্বর সাবেক বাংলাদেশ তরঙ্গ ও বেতার বোর্ডের ১৮তম সভায় বাংলাদেশে প্রথম এ্যামেচার রেডিও সার্ভিস প্রবর্তণের জন্য লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বলা যায় তখন থেকে দেশে হ্যাম রেডিও চর্চা শুরু হয়। ১৯৯২ সালে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে হ্যাম রেডিও লাইসেন্স প্রদান শুরু হয় এবং তখন থেকে দেশে অ্যামেচার রেডিও চালু হয়। বাংলাদেশের হ্যামরা ওই সময় থেকে অ্যামেচার রেডিও ব্যবহার করতে পারেন বলে জানা যায়। অন্য একটি সূত্রমতে ১৯৯৫ সালের ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর প্রথমবার হ্যাম রেডিও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ১৯৯৬ সালের ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ তরঙ্গ ও বেতার বোর্ড হতে ফলাফল ঘোষণা করে। এরপর এই বোর্ডের অধীনে একাধিকবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে বিটিআরসি হতে ২০০৩ সালে পরীক্ষা গ্রহণ করা হলেও দু:খজনক ভাবে ২০০৪ সালে আবার লাইসেন্স দেওয়া স্থগিত করা হয়। পরে অনেক দেনদরবার শেষে সে স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে ২০০৮, ২০১৩, ২০১৭, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায় বাংলাদেশে মোট লাইসেন্সধারী হ্যাম আছেন ৬০০ জন এবং বেইজস্টেশনধারী আছেন প্রায় ৫০জন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..