সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:০৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৩
হবিগঞ্জ সংবাদদাতা: হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নিরীহ পরিবারের বিশাল সম্পদ দখলে নিয়েছেন এক বালু ব্যবসায়ী। একই উপজেলা আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের আশ্রাবপুর গ্রামে মৃত মো. মাকশোদ মিয়ার ছেলে মো. খুরশিদ মিয়া সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।
বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চুনারুঘাট উপজেলার সাটিয়াজুরী গ্রামে মৃত আশ্রব উল্লার ছেলে মো. সেলিম মিয়া বালু মহালের লিজ নিয়ে নিরীহ খুরশিদ মিয়ার পরিবারের ৫ একর ভূমি দখলে নিয়েছেন। সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে তিনি তার পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়তে হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মো. খুরশিদ মিয়া বলেন, আমার বাবা একজন সরকারি চাকুরীজীবী ছিলেন। তার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তির আয়ের উপর নির্ভর করে আমরা আমরা দুই ভাই ও এক বোন অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করতে থাকি। কিন্তু আমাদের গ্রামে মৃত আ.ওয়াহেদ আনসারীর ছেলে আবদাল আনসারীর লাঠিয়াল বাহিনী কাছে অত্যাচারিত হতে থাকি। ২০২১ সালে সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আশ্রাবপুর মৌজা বালুমহালের লিজভুক্ত হয়। মো. সেলিম মিয়া লিজ গ্রহণ করে বালু উত্তোলনের জন্য সন্ত্রাসী আবদাল আনসারীর সাথে মিলে আমার পৈত্রিক ৫ একর সম্পত্তি দখলে নেন। কিন্তু এতিম ও নিরীহ হবার কারণে আবদাল আনসারীর লাঠি ও সেলিম মিয়ার টাকার কাছে অসহায় হয়ে পড়ি।
মো. খুরশিদ মিয়ার অভিযোগ, সম্পত্তি রক্ষার জন্য বারবার প্রশাসনিক সাহায্যের জন্য চেষ্টা করেন তিনি। প্রশাসনের আশ্বাসে ২০২১ সালে ৬ মাস অতিবাহিত হয়। এর মধ্যে বালমহারের ইজারাদার সেলিম মিয়া অন্যায় না করার আশ্বাস দিয়ে আরো দুই তিনমাস আমার ভূমি ব্যবহারের একটি লিখিত অনুমতি নেন। নিরীহ হওয়ার কারণে খুরশিদ মিয়া ঝামেলা এড়ানোর জন্য অনুমতি দেন। ২০২১ সালের পর ২০২২ সালে একইভাবে সেলিম মিয়া পুণরায় ওই বালুমহাল লিজ নেন। আর এরপর থেকেই অত্যাচারিত হতে থাকেন খুরশিদ মিয়া।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী আবদাল আনসারীর সহযোগীতায় আমার পুরো ৫ একর জায়গা দখলে নিয়ে নেন সেলিম মিয়া। ওই জায়গায় গাছ, জমির মাটি চুরি করাসহ নানা অত্যাচার চালানো হয়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, চুনারুঘাটের এসিল্যান্ড, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দরখাস্ত করি। যা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিনে তদন্তসহ রিপোর্ট হয়। তবে ওই রিপোর্ট পেতে আমাকে ৬/৭ মাস অপেক্ষায় থাকতে হয়। এরকম নানা অত্যাচারে আমি জর্জরিত হয়ে পড়ি। লাঠি ও টাকার কাাঠে আমার পুরো সম্পত্তি ও এর উপস্বত্ব তারা ভোগ করতে থাকেন। বারবার দরখাস্তসহ সবার কাছে আকুতি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। ২০২৩ সালে আবারও বালুমহালের লিজ নেন সেলিম মিয়া। যে কারণে আমার উপর অত্যাচার বন্ধ হয়নি। পৈত্রিক সম্পত্তি হারিয়ে সর্বসান্ত হয়ে আমি ও আমার পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছি।
মো. খুরশিদ মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তারপরও আমি জেলা প্রশাসক, এসিল্যান্ড, চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে উল্টো বালু ব্যবসায়ি সেলিম মিয়া ও সন্ত্রাসী আবদাল আনসারী আমার উপর আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা আমার জায়গার আকাশি, বেলজিয়ামসহ ৪০ থেকে ৫০টি গাছ কেটে ফেলে এবং মাটি বিক্রি করতে থাকে।
এ ব্যাপারে চুনারুঘাট থানা থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে হবিগঞ্জের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করি। যা পিবিআই তদন্ত করছে। দুই মাস পর পুণরায় ১৬ আগস্ট তারা এক্সকেভেটর দিয়ে কয়েক শ ট্রাক মাটি কেটে বালুর সাথে বিক্রি শুরু করে। আমি ১৭ আগস্ট জাতীয় সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ওইসময় এক্সকেভেটর ও ট্রাক ফেলে সন্ত্রাসী আবদাল বাহিনী পালিয়ে যায়। একইসাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ২ লাখ টাকা জরিমানা করেন।
মো. খুরশিদ আলম বলেন, আমি সম্পত্তি হারিয়ে ও ফসলসহ সবকিছু সন্ত্রাসীদের ভোগ-দখলে থাকায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করছি। আমি আমার পরিবার নিয়ে গ্রাম ছেড়ে বর্তমানে হবিগঞ্জ শহরে বাস করছি। প্রাণের ভয়ে এলাকায় যেতে পারছি না। অথচ ওই সন্ত্রাসীরা নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিজের লোক হিসেবে এলাকায় প্রতাপ দেখাচ্ছে।
তিনি তার পরিবারের সম্পত্তি রক্ষার জন্য বালুমহালের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের দাবি জানান।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd