বন্ধ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজ : ঝুঁকি নিয়ে সুরমা নদী পারাপার

প্রকাশিত: ৮:৩৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৩

বন্ধ সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজ : ঝুঁকি নিয়ে সুরমা নদী পারাপার

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সংস্কারের জন্য বন্ধ রয়েছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বীন ব্রিজ। এজন্য প্রথমে ব্যারিকেড এবং পরে টিনের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে ব্রিজের দুদিকের প্রবেশমুখ। তাই যারা ব্রিজ দিয়ে হেঁটে সুরমা নদী পার হতেন তাদের এখন বিকল্প হিসেবে নৌকায় পারাপার হতে হচ্ছে। কিন্তু এতে রয়েছে জীবনের ঝুঁকি। খেয়া নৌকায় অতিরিক্ত মানুষ ওঠায় যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মাইকিং করেও তাদের সতর্ক করতে পারছে না পুলিশ। ছোট নৌকায় ধারণক্ষমতা ১০/১৫ জন, অথচ এর তিন গুণ মানুষ ওঠানো হচ্ছে।
তবে কিছুদিনের জন্য হলেও ঐতিহাসিক চাঁদনীঘাট ফিরেছে তার পুরনো রূপে। ভালো রোজগার হচ্ছে মাঝিদের। এ যেন একেবারেই গ্রামীণ জমজমাট খেয়াঘাটের দৃশ্য। খেয়া পারাপারে জনপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫ টাকা। তবে নৌকায় ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘসময়। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে দেখা যায়, তীরে নৌকা ভিড়লেই শুরু হয়ে যাচ্ছে হুল¯ূ’ল- কার আগে কে উঠবে।
নদীর তীরে বেড়াতে আসা মানুষরাও এসব উপভোগ করছেন। ঘাটের সিঁড়ির দুধারে সারি বেঁধে উৎসুক জনতার ভিড়। নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো, কারো হাতে ব্যাগ, কারো হাতে কাপড়ের পুঁটলি, কেউ কোলে ছোটো শিশু নিয়ে ছুটছেন খেয়াঘাটে। সুরমার দক্ষিণ পাড় থেকে উত্তর পাড়ে, কিংবা উত্তর পাড় থেকে দক্ষিণ পাড়ে যাতায়াতের এখন একমাত্র মাধ্যম ছোট নৌকা। যদিও আরো ৩টি ব্রিজ রয়েছে সুরমায়। তবে সেগুলোর দূরত্ব একটু বেশি থাকায় মানুষ এই ছোট নৌকাতেই সুরমা পাড়ি দিতে চায়। এতে যে কোনো সময় দুর্ঘটনারও শঙ্কা করছেন সচেতন মহল।
শেষ বিকালে যাত্রীদের মধ্যে বড়ো একটি অংশ দেখা যায় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি। সুমন নামে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, সুরমা নদীর দক্ষিণ পাশে ওষুধের বেশ কয়েকটি পাইকারি দোকান। তাই প্রতিদিন যেতে হয়। ক্বীন ব্রিজ বন্ধ হওয়ায় বাইক এদিকে রেখে নৌকায় নদী পার হলাম। বর্ষায় উত্তাল নদীতে ছোটো নৌকায় কিছুটা ভয় কাজ করছে। তবে চলতে তো হবে। তিনি বলেন, চাঁদনীঘাটের নাম অনেক শুনেছি কিন্তু নৌকা পারাপার দেখিনি কখনো। এবার সেই আশা পূরণ হলো।
এদিকে খেয়া পারাপার জমজমাট হওয়ায় বেড়েছে আশপাশের বেচাকেনা। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পান-সিগারেট। বিক্রেতারা বলেন, নৌকার জন্য মানুষ এসে অপেক্ষা করে, তারাই মূল ক্রেতা।
গত ১৭ আগস্ট ক্বীন ব্রিজে কাজ শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল শাখা। এর আগে গত ২৫ জুলাই সংস্কার কাজের জন্য ঐতিহ্যবাহী এই সেতু বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। রেল বিভাগের নিয়ন্ত্রণে সেতুটি মেরামতের কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। ব্রিজটির দুই প্রবেশমুখে ব্যারিকেড দিয়ে কাজ শুরু হয়।
তবে সেই ব্যারিকেড ডিঙিয়ে ব্রিজ দিয়ে আসা-যাওয়া করত সাধারণ মানুষ। এতে সংস্কার কাজে সমস্যা হচ্ছিল। তাই ব্রিজের প্রবেশমুখ টিন দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্রিজ সংস্কারের মেয়াদ দুই মাস ধরা হলেও এর আগেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রেলওয়ে বিভাগের পূর্বাঞ্চলের সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্ত জানান, ব্রিজের উপর-নিচে একযোগে কাজ হচ্ছে। কাজের মেয়াদ দুই মাস হলেও আশা করছি এর আগেই শেষ করতে পারব। তিনি জানান, সংস্কার কাজের আওতায় রং ছাড়াও কয়েকটি পাটাতন, লোহা পরিবর্তন এবং উপরের ঢালাই তুলে নতুন ঢালাই হবে।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ক্বীন ব্রিজের সংস্কার কাজ চলছে পুরোদমে। আবহাওয়ার কারণে কাজে অল্প বেগ পেতে হচ্ছে। আশা করছি দুই মাসের আগে কাজ শেষ করা যাবে। তিনি বলেন, সংস্কার শেষে আবারো জনসাধারণের জন্য এটি খুলে দেয়া হবে। তবে সংস্কারে পরেও ব্রিজ দিয়ে বড়ো ধরনের কোনো যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হবে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, ক্বীন ব্রিজ দেশের একটি ঐতিহ্য। সিলেটের পরিচয়বহনকারী স্থাপত্য এটি। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্রিজের দক্ষিণ প্রান্তে গ্রেনেড মেরে ভেঙে ফেলে। সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করে। এরপর আর বড় ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..