সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:৪৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৩
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : শরতের রৌদ্রোজ্জ্বল সকাল। সকাল আটটার কিছু পর থেকেই সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এলাকায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। সেখানে শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান।
সকালে একটু পরপর যেনো রঙ বদলাচ্ছিল। রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ মেঘে ঢাকা পড়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাকরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছিলেন। শনিবার সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের মূল আয়োজন।
অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গান আড্ডায় মেতে উঠেছিল কৃতী শিক্ষার্থীরা। আয়োজনে পরিবেশন হওয়া লোকগানে কণ্ঠ মেলান শিক্ষার্থী, অতিথি ও অভিভাবকেরা।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলো সিলেটের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমনকুমার দাশ। কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দিতে বক্তব্য দেন সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মো. আশরাফুল আলম ও প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. আশরাফুল আলম তার বক্তব্যে বলেন, ‘ আজকের যারা কৃতী শিক্ষার্থী তারা সবাই একেক জন আলো। এ শিক্ষার্থীরাই দেশকে আলোকিত করবে।’
শিক্ষার্থীদের তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালো করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শুধু পুথিগত বিদ্যা নয়, জীবনের প্রতিটা পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেতে হবে। সততা, দেশপ্রেম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজিকসহ সব দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে জিপিএ-৫ পেতে হবে।’ দেশকে আলোকিত করতে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানান তিনি।
প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক সোহরাব হাসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রথম আলো সব সময় ভালোর সঙ্গে থাকে। অ্যাসিড-সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কাজ করে আসছে।’ তরুণ বন্ধুরাও এমন আন্দোলনে সহযাত্রী হবেন বলে আশা প্রকাশ করে তিনি প্রথম আলো সবার ও দেশের জয় দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেন।
তরুণরা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আজকের কৃতী শিক্ষার্থীরা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তোলবে। সুন্দর বাংলাদেশের অভিযাত্রী হবে আজকের কৃতী শিক্ষার্থীরা।’ এসময় তিনি প্রথম আলো এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সহসভাপতি হিমাদ্রী শর্মা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফারহানা হকের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিলেট এমসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নিতাই চন্দ্র চন্দ, মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান রাজীব আহমেদ, সিলেট ইন্টানরন্যাশন ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক প্রণবকান্তি দেব প্রমুখ।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই সেখানে জড়ো হতে শুরু করে কৃতী শিক্ষার্থীরা। সংবর্ধনার নিবন্ধনের কার্ড হাতে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীরা মূল অনুষ্ঠান স্থলের প্যান্ডেলের পাশের বুথ থেকে ক্রেস্ট ও স্ন্যাকস সংগ্রহ করে। এসময় অনেক দিন পর স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায় কৃতী শিক্ষার্থীদের। একে অপরকে কাছে পেয়ে সহপাঠী-বন্ধুদের যেন উচ্ছ্বাসের শেষ ছিল না। এই উৎসবের ক্ষণ একসঙ্গে উপভোগ করার বিরল মুহূর্ত মুঠোফোনের ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা গেল অনেক শিক্ষার্থীদের। তাদের হইহুল্লোড়ে ছিল উৎসবের আমেজ। চলে ছোট ছোট দলে আড্ডা। এ সময় সবার মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। অনুষ্ঠান স্থলে স্থাপিত সেলফি স্ট্যান্ডে বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত সময় পাড় করছিল অনেক শিক্ষার্থী। অনেকে আবার অভিভাকদের সঙ্গে ছবি তোলছিল।
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবারের উৎসবটি পাওয়ার্ড বাই ‘বিকাশ’। সহযোগিতা করছে কনকর্ড গ্রুপ, ফ্রেশ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউসিএসআই ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ শাখা ক্যাম্পাস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এটিএন বাংলা ও প্রথম আলো বন্ধুসভা।
সিলেট উৎসবে অংশ নিতে আগে থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করেন জিপিএ-৫ পাওয়া প্রায় ১ হাজার তিনশোর অধিক শিক্ষার্থী।
সংবর্ধনায় শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল ক্রেস্ট, অনলাইনে সার্টিফিকেট, প্রথম আলো ই-পেপার (১ মাস) ও চরকির (১৫ দিন) ফ্রি সাবস্ক্রিপশন, শিখোর সৌজন্যে বিনা মূল্যে কোর্স, ফ্রেশ ব্র্যান্ডের স্ন্যাকস।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকাল সকাল উপস্থিত হয়েছেন জানিয়ে সিলেট বটেশ্বর এলাকার কৃতী শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম জানায়, তারা ৬ জন বন্ধু এক সঙ্গে এসেছেন। বাসে আসার কথা থাকলেও সময় বেশী লাগবে ভেবে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে এসেছে। অনুষ্ঠান স্থলে আসার পর অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। যারা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়েছে। যার কারণে তাদের এখন আর তেমনটি দেখা হয় না। এ জন্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে ভালো লেগেছে।
সিলেট নগরের লামাবাজার এলাকার বাসিন্দা সাধনা রাণী চন্দ মেয়ে মেঘা চন্দকে নিয়ে অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। মেঘা জানায় সে জানায়, ‘অনলাইনে নিবন্ধন করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরেছে। সে নিজের নিবন্ধন ছাড়াও আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিবন্ধন করে দিয়েছে। তারা সবাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছে। সব বন্ধুদের সঙ্গে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে।’
কৃতি শিক্ষার্থী রুপা দাসকে নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বড় ভাই সজয় দাশ। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান জাকজমকপূর্ণ হতে দেখেছেন তিনি। সিলেটে অতিথি শিল্পীর গানগুলো ভালো লেগেছে। শিক্ষার্থীরা সতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ দেখে তিনি নিজে যখন এসএসসি পাস করে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন সে দিনের কথা মনে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, তার বোন সিলেট কিশোরী মোহন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে সিলেট এমসি কলেজে ভর্তি হয়েছে।
আব্রাহাম আব্দুল্লাহ সিলেট ওসমানী মেডিকেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সে জানায়, তারা কয়েকজন বন্ধু এক সঙ্গে থাকতো। কিন্তু এখন একেকজন একেক কলেজে ভর্তি হয়েছে। এর জন্য বন্ধুদের সঙ্গে এখন তেমন সময় কাটানা হয়ে ওঠে না। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে সবাই একত্রিত হয়েছে। সে সঙ্গে নতুন কলেজের বন্ধুরাও আজ সবার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে এর জন্য ভালোই লেগেছে।
অনুষ্ঠানে লোকসংগীত পরিবেশন করেন ‘ফোক যুবরাজ’ খ্যাত কন্ঠশিল্পী আশিক, কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে গান পরিবেশন করে প্রিয়ন্তি মোদক, রোহিত দত্ত চৌধুরী এবং কৃতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেয় আয়েশা বিনতে শরিফ। এসময় কৃতী শিক্ষার্থীরাও অনুষ্ঠানে পরিবেশন হওয়া গানের সঙ্গে কন্ঠ মেলায়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd