সিলেট ১০ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৩
ডেস্ক রিপোর্ট: চরম হয়রানি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস। নির্বাচন অফিসে যোগদানের পর ডাটাএন্ট্রি অপারেটর সামসুল আরেফীন ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী টিপু মিয়া তাদের একক আধিপত্য কায়েম করেছেন। উপজেলাটি প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে।
ভুক্তভোগীরা জানান, বালাগঞ্জ নির্বাচন অফিসে নতুন ভোটার হতে গেলে জনপ্রতি টাকা দিতে হয় তিন-চার হাজার। পরিচয় পত্র সংশোধনের কাজ নির্বাচন অফিসের আশেপাশের কম্পিউটারের দোকানদাররা এবং অফিস সহায়ক মো. টিপু মিয়া যোগসাজসে মোটা অংকের টাকার বিনিময় কাজ করেন ডাটাএন্ট্রি অপারেটর সামসুল আরেফীন। টাকা বিষয়টি স্পষ্ট না হলে নির্বাচনের দোহাই, খসড়া ভোটার তালিকা, ছবি তোলার মেশিন নষ্ট, সার্ভার ডাউন, অফিসার আসেন নি ইত্যাদি অজুহাত দিয়ে নির্বাচন অফিসের ডাটাএন্ট্রি অপারেটর দেশী ও প্রবাসীদের জরুরী কাজগুলো আটকে দেন।
নির্বাচন অফিসে গিয়ে গ্রামগঞ্জের সাধারণ মানুষ সিলেটী ভাষায় কথা বললে সহ্য করতে পারেন না অফিসের স্টাফ। রুঢ় ব্যবহারে দূর-দূরান্তের ভোটাররা অতিষ্ঠ বলেও অভিযোগও রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা আরও জানায়, দ্বৈত নাগরিকত্ব লাভ করতে সকল ডকুমেন্টস দেওয়ার পরও মোটা অংকের হাদিয়া ছাড়া কাজ করেন না ডাটাএন্ট্রি অপারেটর। হাদিয়া নামক ঘুষ না দিলে দু-এক ডজন কাগজের স্লিপ হাতে ধরিয়ে দেন অপারেটর ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী সামসুল-টিপু। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সামসুল আরেফীনের ঘুষ নামের হাদিয়া নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শুনা যায়, কষ্টের হাদিয়া পর্যন্ত আমরা দেই! হ্যাঁ বিজি, তোমরা কষ্ট কররায়। তোমরা নেউ কাজও করো।
এই অনিয়মের রামরাজত্ব কায়েম করা সামসুলের খুঁটির জোর কোথায়! এ প্রশ্ন এখন উপজেলার সবার মুখে মুখে! বালাগঞ্জ নির্বাচন অফিসে যোগদানের কিছু দিনের ব্যবধানে ঘুষ, দুর্নীতি-অনিয়মের বরপুত্র হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিত লাভ করেছেন ওই ডাটা এন্টি অপারেটর সামসুল।
ঘুষের টাকা নিয়মিত তার সহকর্মী ও স্থানীয় কিছু বেকার ছেলেদের কে প্রতিমাসে মাসোহারা দিয়ে হাতে রাখেন সামসুল আরেফীন। মাসোহারা ও বকশিশ দেওয়ার মাধ্যমে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে বা কোন সাংবাদিক সংবাদ করতে গেলে মাসোহারা পাওয়া বেকারদের লেলিয়ে দেন। তাকে বাঁচাতে উঠেপড়ে লাগে তারা। শুনান টাকা পয়সার কথাও।
উপজেলা সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা বালাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী জিলু মিয়া জানান, তার জাতীয় পরিচয় পত্রে মো. শব্দটা নেই। ছেলের জাতীয় পরিচয় পত্রে মো. জিলু মিয়া আছে। মো. শব্দটি তুলতে সংশোধনের জন্য উপজেলা নির্বাচন অফিসে আবেদন করে ফাইল জমা দেন জিলু মিয়া। কৌশলে ২০ হাজার টাকা দাবী করলে পরবর্তীতে নগদ ১০ হাজার টাকা দেন সামসুল আরেফীনকে। কিন্তু কাজ হয়নি, বাকি টাকা না দেওয়ায়। পরে জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস থেকে কাজ করান ভুক্তভোগী।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্বগৌরীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা এক ইউরোপ প্রবাসী জানান, আমার পাসপোর্টের সাথে মিল রেখে এনআইডি কার্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে কাজটি হয়েছে। টাকার বিনিময় হলো, স্বাভাবিক ভাবে কেন হলো না ?
সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা সৌমিত্র রায় বলেন, আমার সার্টিফিকেট সহ যাবতীয় তথ্য দেওয়ার পরও ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশের নাগরিক কার্ড পেয়েছি।
পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রাসেল আহমদ বলেন, ১৫শত টাকা দিয়ে আইডি কার্ড বানাইছি।
সদরের ইউনিয়নের সিরিয়া বাসিন্দা পনির মিয়া বলেন, নতুন ভোটারের ছবি তুলতে গেছি সার্ভার ডাউন। ৪ হাজার ৫শ টাকায় সার্ভার ফ্রাস্ট হয়ে গেলো। তদন্তপূর্বক এর বিচার দাবী করেন ভুক্তভোগীরা।
বালাগঞ্জ উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলতাফ হোসেন বলেন, অফিসে আসেন বিষয়গুলো নিয়ে সাক্ষাতে কথা বলি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd