সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:১৮ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
নিজস্ব সংবাদদাতা: সিলেট জেলা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত গোয়াইনঘাট থানার দুই কনস্টেবল বিভিন্ন বির্তকিত কান্ডে জড়িত থাকায় অবশেষে তাদের চট্রগ্রামে বদলি করা হয়েছে।
বদলির প্রায় ১ মাস অতিক্রম হলেও অদৃশ্য কারণে গোয়াইনঘাটের টাকার খনির মায়া যেনও ছাড়তে পারছেন না তারা। বদলীর আদেশ হওয়ার পরও তারা গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চোরাচালানের কালো টাকা ও জাফলংয় সেতুর নিচে রিয়েলিটির নামে চাঁদাবাজির টাকা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে একাধিক সুত্র তা নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে- গোয়াইনঘাট থানায় পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত- সুনীল তাঁতি, বিপি নং-৮১১১১২৯৫৬২ ও কাজী মুমিন হোসেন (ইমন) বিপি নং-৯৫১৮২০৪৪৮০ দুজনকে এক সঙ্গে সিএমপি চট্রগ্রামে বদলি করা হয়েছে।
গত (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সেরের এআইজি মোঃ মাহবুবুল করিম এর সই করা এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ বদলীর আদেশ জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়- বদলিকৃত কর্মকর্তারা বর্তমান কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে আগামী (১৮ নভেম্বর) এর মধ্যে যোগদানের জন্য কিন্তু কে শুনে কার কথা এই দুজন ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করেও ফের টাকার খনিতে টাকা সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
প্রজ্ঞাপনে আরোও বলা হয়- বদলিকৃত কর্মকর্তারা বর্তমান কর্মস্থল ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে আগামী ১৮/১১/২৩ইং তারিখের বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নিমিত্তে ছাড়পত্র প্রদান করবেন অন্যথায় ১৯/১১/২৩ইং তারিখ হইতে তারা তাৎক্ষনিক অবমুক্ত ( Stand Release) হিসেবে গণ্য হবেন মর্মে সূত্রোক্ত পত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা গোয়াইনঘাটের টাকার খনির মায়া ছাড়তে পারছেন না এই দুই কনস্টেবল। যার ফলে এখনো তারা বহাল তবিয়তে রয়েছেন। কি এমন অদৃশ্য ক্ষমতার গুণে পুলিশ হেডকোয়ারটার্স-এর বদলীর আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গোয়াইনঘাটে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন তারা। এই দুই কনস্টেবলের এমন কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের নিকট গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি কুন্ঠিত হচ্ছে বলে সচেতনমহল মনে করছেন।
গোয়াইনঘাট থানায় দায়িত্ব পালন করা সাবেক এক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান- গোয়াইনঘাট থানায় বদলির আদেশ আসলে তা গোপন করে অনেকে সিসি না নেওয়ার জন্য তদবির করেন অতীতেও এ থানায় বহুবার অমান্য করা হয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এমন অসংখ্য আদেশ যা আপনারা সিলেটের সাংবাদিক ভাইরা অবগত রয়েছেন। এর কারণ কি জানতে চাইলে তিনি জানান- এখানে সরকারি বেতন-ভাতার চেয়ে অবৈধ উপায়ে তিনগুণ টাকা আয় করা যায়। কনস্টেবল সুনীল তাঁতি ও কনস্টেবল কাজী মুমিন হোসেন (ইমন) হচ্ছে বর্তমান ওসির অবৈধ উপায়ের টাকা উত্তোলনের বিশ্বস্ত সঙ্গী। ওসি তাঁদের দিয়ে চোরাচালানসহ জাফলংয়ে রাতে পাথর উত্তোলনের হিসাব নিয়ন্ত্রণ করিয়ে আসছেন। এ জন্যই ওসি তাদের কৌশলে সেখানে রাখার গোপন যুদ্ধে মরিয়া রয়েছেন।
এদিকে পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার একটি সুত্রে বলছে- থানার ওসির নেতৃত্বে সদ্য বদলির আদেশ হওয়া এই দুই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে জাফলং পিয়াইন নদীতে রাতে পাথর খেকো চক্রের কাছ থেকে এবং ভারতীয় চোরাচালান ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থানার ওসির নামে দৈনিক, মাসিক ও সাপ্তাহিক চাঁদা আদায় করে ওসিকে বুঝিয়ে দেওয়া সহ তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও পুলিশের নীতিমালা অমান্য করার অভিযোগেই মূলত তাদের প্রশাসনিক কারণ দেখিয়ে সিএমপি চট্রগ্রামে বদলির আদেশ প্রদান করা হয়েছে।
এব্যাপারে বদলি আদেশ পাওয়া কনস্টেবল সুনীল তাঁতির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার নীতিমালায় বলা হয়েছে পুলিশ সদস্য যে স্থানে রয়েছেন সে স্থানে বহাল থাকার জন্য। মূলত তফসিল মেনেই আমাদের রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছে।
এব্যাপারে একই আদেশ প্রাপ্ত কনস্টেবল কাজী মুমিন হোসেন(ইমন)’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বদলি আদেশের বিষয়ে তিনি কেবল প্রতিবেদকের মারফতে অবগত হলেন। এমন আদেশ আসছে কি না তা ডিআইজি স্যার এবং ওসি স্যার বলতে পারবেন। বিগত (১৩ নভেম্বর) বদলি আদেশ পাঠানো হয়েছে এখনো কর্মস্থলে বহাল কিভাবে? জবাবে তিনি জানান- তা ওসি স্যার ভালো জানেন তবে আমি যেকোন সময় এমন আদেশ সম্মানের সহিত গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
এব্যাপারে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম নজরুল ইসলাম এর সরাসরি সেলফোন একাধিকবার যোগাযোগ করলে তিনি ফোন না তোলায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।
প্রকাশ থাকা আবশ্যক যে এই দুই কনেস্টবল এর বদলির আদেশ হয়েছে বিগত (১৩ নভেম্বর) আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর তফসিল ঘোষণা হয়েছে বিগত (১৫ নভেম্বর)।
এদিকে, অদৃশ্য কারণে বদলির আদেশ প্রাপ্ত দুই কনেস্টবল এখনো সাবেক কর্মস্থলে রয়েছেন। দিনের আলো শেষে অন্ধকার হলেই তারা শুরু করেন ওসির হয়ে অবৈধ টাকা ইনকাম। গুনতে থাকেন কয়েক লক্ষ টাকা। আর এই টাকা তারা আদায় করেন ভারতীয় চিনি ও ভারতীয় গরু চোরাচালান কারবারীসহ জাফলং সেতুর নীচে, জুমপাড় ও বল্লাঘাটে অবৈধভাবে রিয়েলিটির নামে চাঁদাবাজির ভাগবাটোয়ারা হইতে। তাহলে কি সেই কালো টাকার মায়ায় আটকা পরে আছেন তারা বিদায় গোয়াইঘাটের মায়া ছাড়তে পারছেন না এ দুই কনেস্টবল? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে গোয়াইনঘাট উপজেলার সচেতন মহলে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd