‘মুনিয়া খান রোজা নামে কেউ কখনই ন্যাশনাল মেডিকেলে পড়েনি’

প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৯, ২০২৪

‘মুনিয়া খান রোজা নামে কেউ কখনই ন্যাশনাল মেডিকেলে পড়েনি’

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: কথিত মুনিয়া খান রোজা কেউ কখনোই ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে পড়েননি বলে জানিয়েছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি নাগরিক টিভি ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুনিয়া খান রোজা নামক এক কথিত ডাক্তারের বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। বক্তব্যটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কথিত ঐ ডাক্তার ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হতে পাশ করেছেন- মর্মে সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। প্রকৃত সত্য হলো- মুনিয়া খান রোজা নামের কোন ছাত্রী কখনোই ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেননি।’

এতে আরও বলা হয়, ‘তার এহেন মিথ্যা বক্তব্যের কারণে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিবৃতবোধ করছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রচার কোনভাবে কাম্য নয়।’

একাধিক সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত মুনিয়া খান রোজা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকের সেলিব্রিটি। তিনি ডাক্তার সেজে ও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে ঢামেকে টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন। টিকটকে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতেন এই তরুণী।

ঢামেকের নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে শনিবার ওই তরুণীকে আটকের পর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য।

চিকিৎসকের মিথ্যা পরিচয় দেওয়া মুনিয়া খান চাঁদপুর সদরের হামান কর্দ্দি গ্রামের প্রয়াত মো. করিম খানের মেয়ে। তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন।

ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন ভবনের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বলেন, শনিবার ভুয়া এক গাইনি চিকিৎসককে নতুন ভবনের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে আনসার সদস্যরা আটক করেন। পরে তাকে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। এই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় প্রতারণার মামলা করি। পরদিন রোববার সেই মামলায় তাকে আদালতে পাঠায় পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, ওই ভুয়া নারী চিকিৎসক অ‍্যাপ্রোন পরে ও গলায় স্টেথোস্কোপ দিয়ে আইসিইউয়ের ভেতরে ঢুকে বিভিন্ন রুমে যাওয়া-আসা করছিলেন। পরে আনসার সদস্যদের সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে ওই নারী বহির্বিভাগের গাইনি চিকিৎসক বলে পরিচয় দিলেও পরে তিনি স্বীকার করেন— তিনি কোনো চিকিৎসক নন।

এদিকে সিসিটিভি ফুটেজে ওই নারীর বিভিন্ন রুমে যাওয়া-আসার দৃশ্য দেখা যায়। হুবহু চিকিৎসকের মতো সেজে ইচ্ছেমতো আইসিইউয়ের ভেতরে তিনি ঘুরে বেড়ান।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) উজ্জ্বল বেপারী বলেন, অভিযুক্ত তরুণী আটকের সময় ডাক্তারদের ব্যবহারের অ্যাপ্রোন পরা অবস্থায় ছিলেন। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই— তিনি ডাক্তার নন। একপর্যায়ে তিনি চিকিৎসক নন বলে আমাদের কাছে স্বীকারও করেন।

মুনিয়া প্রথমে নিজেকে চিকিৎসক দাবি করলেও পরে ভুয়া ডাক্তারের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে আমি কোনো চিকিৎসক নই, চিকিৎসা পেশার সঙ্গে আমি জড়িতও নই। আমি নীলক্ষেত থেকে ৫৫০ টাকা দিয়ে অ্যাপ্রোন কিনি এবং মিটফোর্ড এলাকা থেকে স্টেথোস্কোপ ক্রয় করি। এরপর নীলক্ষেত থেকে একটি আইডি কার্ড বানাই।

অভিযুক্ত মুনিয়ার টিকটক আইডিতে ঢুকে দেখা যায়, তিনি ঢাকা মেডিকেলের বিভিন্ন ওয়ার্ডে বসে রোগী দেখছেন এবং চিকিৎসা দিচ্ছেন। এমন আরো অসংখ্য ভিডিও তার প্রোফাইলে রয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে আপলোড দেওয়া।

অভিযুক্ত তরুণীকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সানাউল হক। তিনি বলেন, শনিবার মধ্যরাতে ভুয়া ওই চিকিৎসককে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জিল্লুর রহমান বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় (মামলা নং-৪১) প্রতারণার একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

March 2024
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

………………………..