সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২৪
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি : সিলেটের বিশ্বনাথে ‘পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান সাময়িক বরখাস্ত ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে প্যানেল মেয়র-১ কে দায়িত্ব প্রদান’ প্রসঙ্গ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ফজর আলী। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যায় পৌর শহরের পুরাণ বাজার এলাকাস্থ একটি রেষ্টুরেন্টে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে প্যানেল মেয়র-১ দাবি করে কাউন্সিলর ফজর আলী বলেন, যে তুচ্ছ কারণগুলোতে আমাদের পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা আমরা মেনে নিতে পারছি না। কারণ পৌরসভার শুরু থেকে যখন প্রশাসকের মাধ্যমে পৌরসভা পরিচালিত হয়ে আসছিলো তখন থেকে প্রবাসী চত্ত¡রের পাশে ময়লা ডাম্পিং করা চলে আসছে, আর বাসিয়া নদীতে আরোও কত পূর্ব থেকে ময়লা ফেলা হচ্ছে।
একটি অতি জরুরী কাজে ৩ দিনের জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য তিনি লিখিত আবেদন করে ছুটি পাননি, তাই মৌখিকভাবে ছুটি নিয়ে তিনি যুক্তরাজ্যে গিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) দেশেও চলে এসেছেন। এছাড়া তিনি পৌরসভার কোন টাকা-পয়সা আতœসাৎ করেননি। তাছাড়া পৌরসভার পূর্বের অফিসে একটু মেঘ দিলেই পানি উঠে যায়, এতে থাকে সাপ ও ছোঁকের ভয়।
তাই তিনি পৌরবাসীকে নিরাপত্তার সাথে কাঙ্খিত সেবা দেওয়ার জন্য নিজের বাসায় বিনাভাড়ায় পৌরসভার কার্যালয় করেছেন। এখানে মেয়রের দোষ কোথায়? তাই আমরা মেয়র মুহিবুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করার ঘটনায় নিন্দা জানাই।
ফজর আলী আরোও বলেন, প্রায় ৩ মাস পূর্বে পৌরসভার সভায় সকল সদস্যদের উপস্থিত স্বাক্ষরের মাধ্যমে রফিক হাসানকে পরিবর্তন করে আমাকে (ফজর) প্যানেল মেয়র-১’র দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে, এখন সে (রফিক) কিভাবে নিজেকে প্যানেল মেয়র-১ দাবী করে।
এখন আইন অনুযায়ী আমি দায়িত্ব পেলে রোববার থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করব। আর সে (রফিক) যদি দায়িত্ব পায়, তাহলে দুটি মামলার অভিযুক্ত হয়েও আদালত থেকে জামিন না নিয়ে কিভাবে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করবে তা দেখার বিষয়। আশা করি আমাদের ইউএনও-ওসি’সহ প্রশাসন সে দিকে লক্ষ্য রাখবে। তারপরও যদি মামলার অভিযুক্ত থাকার পরও দায়িত্ব পালন করে, তাহলে আমি ওয়ার্ডবাসীকে সাথে নিয়ে মাইকিং করে বিষয়টি উপজেলাবাসী তথা দেশবাসীকে অবহিত করব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর ফজর আলী জানান, এখন পর্যন্ত (২৭ জুন বৃহস্পতিবার রাত ৮টা) তিনি বা মেয়র ‘সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কিংবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে প্যানেল মেয়র-১’র দায়িত্ব গ্রহনের প্রজ্ঞাপন পাননি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেলে সকলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অফিস কোথায় রাখা যায়, সেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করবেন।
এব্যাপারে বিশ্বনাথ পৌরসভার কাউন্সিলর রফিক মিয়া ওরফে রফিক হাসান বলেন, মন্ত্রণালয়ে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বৈধভাবে আমি হচ্ছি পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১।
যা পৌরসভার প্রথম মাসিক সভাতেই সর্বসম্মাতিক্রমে নির্বাচিত করা হয়ে ছিলো। কেউ যদি আমাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে কিংবা পূর্বে মেয়র মুহিবুর রহমান কর্তৃক আমাদের স্বাক্ষর নেওয়া সাদা কাগজে নিজের ইচ্ছানুযায়ী কিছু লিখে ফেললেই তো আর কেউ প্যানেল মেয়র-১ হবে না। সেই সভাটি ছিলো আমাদের (৭ কাউন্সিলরের) অনুপস্থিতি তাদের জালিয়াতির নীল-নকশার বড় অংশ, যেখানে মেয়র মুহিবুর রহমান নিজের অনিয়ম-দূর্নীতি চাপা দিতে ইচ্ছেমতো আইন তৈরী করেছেন। এতো কিছুর পরও সত্যের জয় হয়েছে, অবশেষে মেয়রের অনিয়ম-দূর্নীতি আজ (২৭ জুন, বৃহস্পতিবার) প্রমাণিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বনাথ পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বারাম উদ্দিন, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দস শহিদ, এলাকার মুরব্বী মঞ্জুর আলী, আলী হোসেন ইংরেজ, সমুজ আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক আব্দুল মতিন, পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য আজব আলী, শ্রমিক লীগ নেতা সিতাব আলী, যুবলীগ নেতা নাসির উদ্দিন, সুজন আলী, ছাত্রলীগ নেতা কামরান আহমদ, সংগঠক আবুল হোসেন, সেবুল আহমদ, কামরুল ইসলাম, আব্দুস শহিদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সিলেটের বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনা কাউন্সিলরদের নানান অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (পৌর-২ শাখা) উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩২(১), (খ), (ঘ) এবং (২) অনুযায়ী তাকে (মুহিব) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই দিনে জারিকৃত পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (পৌর-২ শাখা) উপসচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে সায়য়িক বরখাস্ত করায় এবং উক্ত পৌরসভার মেয়র পদ হতে অপসারণের কার্যক্রম শুরু করায় স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪০(৩) অনুযায়ী পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১’কে প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজের সুবিধার্থে পৌরসভার মেয়রের আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ করা হয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd