সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৭:৩৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগ করেন। পরিস্থিতির এহেন আকস্মিতায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ও জনরোষে পড়ার ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি-মন্ত্রীসহ প্রভাবশালী নেতা ও কর্তাব্যাক্তিরা। নেতাদের পাশাপাশি তাঁদের কাছের অনুসারীরাও মোবাইল বন্ধ রেখেছেন। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরাও।
যেখানে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে ও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সেখানে সিলেটের ব্যস্ততম তামাবিল স্থলবন্দরে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে থাকা তামাবিল স্থলবন্দরের দখল নিতে মারিয়া হয়ে উঠেন বিএনপি জামাতে নেতারা।
ছাত্র-জনতার রোষ থেকে রক্ষা ও নিরাপত্তা দেওয়ার নামে সীমান্ত এলাকার আওয়ামী দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা। স্থালবন্দর দখল নিতে প্রথমেই পুনর্বাসনও করিয়ে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ লুটেরাদেরকে। সিলেটের ব্যস্ততম স্থলবন্দর তামাবিল দীর্ঘপ্রায় দেড় দশক থেকে দখল করে রেখেছেন জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীরা। সরকারের পতন হওয়ার সাথে সাথে তামাবিল স্থলবন্দর এমনকি বাড়িঘর থেকে পালিয়ে ভবঘুরে চলে যান দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও সন্ত্রাসীরা। আর এ সুযোগে আওয়ামী ব্যবসায়ী ও চাঁদাবাজদের নিরাপত্তা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন সিলেট জেলা বিএনপির এক নেতা।
জেলা বিএনপির এই নেতা প্রথমেই সীমান্তের শীর্ষ চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে হাতিয়ে নেন জাফলং জিরো পয়েন্টের পাথর ও পিয়াইন নদীতে জব্দ করা দুই কোটি টাকার বালু। তামাবিল স্থলবন্দরে আওয়ামী লীগ নেতা জলাল উদ্দিনকে পুনর্বাসন করতে জেলা বিএনপি নেতার নেতৃত্বে শোডাউন করে আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদাবাজ জালাল উদ্দিনকে নিয়ে একসাথে গ্রুপ ছবি উঠান। পরে একটি সভা করেন আওয়ামী লীগ নেতা জালাল উদ্দিনকে সাথে নিয়ে। জালালকে সাথে নিয়ে পরিদর্শন করেন স্থলবন্দরের বিভিন্ন স্থান।
জানা গেছে, সরকার পতনের পর সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর, জাফলং, ভোলাগঞ্জসহ বিভিন্ন পাথর কোয়ারি ও বালুমহালে দখলবাজ ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের পরিবর্তন হচ্ছে। বন্দর ও পাথর কোয়ারিগুলো অবৈধভাবে আয়-রোজগারের ক্ষেত্র বানিয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজন। এসব জায়গায় একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল দলটির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের। এখন সেই নিয়ন্ত্রণ অন্যরা দখলে নিচ্ছে।
তাছাড়া সিলেটের বিভিন্ন হাটবাজার, খেয়াঘাট ও যানবাহন থেকে চাঁদা তুলছে নতুন চক্র। সরকার পতনের পরই লুট হয়েছে সাদা পাথর ও জাফলং পর্যটন কেন্দ্রের কোটি কোটি টাকার পাথর। এমনকি সেনাবাহিনী পাহারায় থাকার পরও একটি সিন্ডিকেট পাথর কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট সীমান্তের তামাবিল স্থলবন্দরটি এক দশক ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপ। এ গ্রুপের সভাপতি জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার হোসেন ছেদু। বন্দরের নিয়ন্ত্রণ ছিল সভাপতি-সম্পাদকের হাতে। পণ্য তোলা-খালাস থেকে শ্রমিকদের খরচ বাবদ প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন তারা। সরকার পতনের কয়েকদিনের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতরা অফিস দখল করে নেন।
সূত্রমতে, গত ১৭ আগস্ট তামাবিল আমদানিকারক গ্রুপের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরানকে সভাপতি ও ওমর ফারুককে সাধারণ সম্পাদক করে ২৯ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করলে তা অস্বীকার করেন আরেক গ্রুপের ব্যবসায়ীরা। সাবেক ছাত্রদল নেতা আবুল হাসিমকে সভাপতি ও যুবদল নেতা জাহিদ খানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৩১ সদস্যের পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেন তারা। এমনকি ওই দিন কানাডা থেকে লুৎফুর রহমানকে সভাপতি ও হেলুয়ার আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে আরেকটি কমিটি ঘোষণা হয়। এ নিয়ে চলছে উত্তেজনা।
জানা যায়, সিলেটে দীর্ঘদিন ধরে পাথর ও বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করতেন গোয়াইনঘাট কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক (সদ্য পদত্যাগী), তাঁর ভাই ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা সামসুল আলমসহ কয়েকজন। সরকার পতনের পর লুটপাট করা হয় জাফলংয়ের পাথর। অভিযোগ ওঠে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম স্বপন ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সীমান্তের সারি নদী ও বাউরবাগ বালুমহালও দখলের চেষ্টা হচ্ছে। একটি সিন্ডিকেট জাফলংও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সরকার পতনের আগে জাফলং দখল বা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অস্বীকার করেন অধ্যক্ষ ফজলুল হক। তিনি জানান, অনেকে এখন অনেক কথা বলবে।
তামাবিল চুনাপাথর, পাথর ও কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলীর দাবি, অফিস দখল হয়ে গেছে। একাধিক কমিটি হয়েছে। এটা ব্যবসায়ীদের সংগঠন, রাজনৈতিক কোনো অফিস নয়। অতীতে কাউকে হয়রানি করা হয়নি।
তবে তামাবিল আমদানিকারক গ্রুপের নতুন কমিটির সভাপতি বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম শাহপরান বলেন, ‘আমরা সবাই ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীদের স্বার্থেই আমরা অফিসে অবস্থান নিয়েছি ও কমিটি করেছি। আগের কমিটির লোকজন অফিস না করায় আমরা স্থলবন্দর সচল রাখতে কাজ করছি। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের স্বার্থে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এটা দলীয় কোনো বিষয় নয়।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd