সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:২২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট ও সুনামগঞ্জে আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশসহ প্রায় আড়াইশ জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে সিলেটে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে এবং সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশসহ ৯৯ জনের নামের দ্রুত বিচার আইনে আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়।
গত ৪ আগস্ট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বারোকোর্ট এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংঠনের নেতাকর্মীদের হামলা-গুলিবর্ষণের অভিযোগে সোমবার দুপুরে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ২য় আদালতে মামলাটি করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার কুমারপাড়া শিলঘাট এলাকার মৃত ওয়াহিত আলীর ছেলে মো. কয়ছর আহমদ (৫৫)। এই মামলায় এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালসহ ৫১ জন।
মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, সাবেক পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এজাহার আমলে নিয়ে এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার জন্য থানাপুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলার এজহারে উল্লখ্য করা হয়- ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একদফা দাবিতে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বারোকোর্ট এলাকায় একটি মিছিল চলাকালে পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগে দেশী-বিদেশী অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে বাদির ছেলে সানি আহমদ গুলিবৃদ্ধ হয়। পরে সে হাসপতালে মারা যায়।
এদিকে এই ঘটনায় একই বাদি মো. কয়ছর আহমদ (৫৫) বাদি হয়ে গোলপগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা দায়ের হয়েছে। গত ২২ আগস্ট নুরুল ইসলাম নাহিদকে প্রধান আসামি করে ১১৯ জনকে আসামি করে মামলা দয়ের করা হয়।
এদিকে গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার মিছিলে হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশসহ ৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়েরের আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জ আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী (দ্রুত বিচার) আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ জহুর আহমদের ভাই হাফিজ আহমদ এই আবেদন করেন। তিনি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের এরোয়াখাই গ্রামের নাজির আহমদের ছেলে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুট, সাধারণ সম্পাদক নোমান বখত পলিন, সাবেক সংসদ সদ্য মুহিবুর রহমান মানিক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, রণজিত সরকার, সাবেক পৌর মেয়র নাদের বখত, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, পুলিশের এএসপি রাজন কুমার দাস, সদর থানার ওসি খালেদ চৌধুরী, এসআই রিয়াজ আহমদ প্রমুখ। এছাড়া মামলায় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেক লীগ, ছাত্রলীগের জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
আদালতের বিচারক নির্জন মিত্র মামলাটি গ্রহণ করে আদেশের জন্য রেখে দিয়েছেন বলে জানান বাদীর আইনজীবী মোশাহিদ আহমদ।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : সিলেট-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদসহ সাবেক ১৮ মন্ত্রী ও আট সংসদ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত দুদকের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দেশত্যাগে যাদের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে- সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সাবেক প্রবাসী ও কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, সাবেক ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী ফরিদুল হক খান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান, সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদ, কাজী নাবিল আহমেদ ও শহিদুল ইসলাম বকুল, এ কে এম সরওয়ার জাহান, শেখ আফিল উদ্দিন, মেহের আফরোজ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ ও শেখ হেলাল উদ্দিনকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
এদিন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম সাবেক ১০ মন্ত্রী ও তিন সংসদ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। এসময় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
এছাড়া দুদকের উপপরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাবেক আট মন্ত্রী ও পাঁচ সংসদ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন। এসময় দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া সাবেক মন্ত্রীরা হলেন- সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক শিল্পমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান খান ও সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd