সিলেট ৩১শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ২০১০ সালে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের তিন মাস প্রশিক্ষণের পর বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দুই বছর মেয়াদে অস্থায়ী চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও গোয়াইনঘাটে চলে ভিন্ন চিত্র। ন্যাশনাল সার্ভিসের সাবেক কর্মী ডৌবাড়ী ইউনিয়নের নৃপেন দাস বলেন এখানে ইলিয়াস আকরাম নামে স্যারের বডিগার্ডকে বেতনের অর্ধেক টাকা দিলেই বাড়ীতে বসে বসে বেতন তুলা যেত।
প্রশিক্ষণকালে প্রতিদিন ১০০ টাকা ভাতা আর চাকরিতে যোগদানের পর প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তৎকালীন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আজহারুল কবির
ব্যাক্তিগত দেহরক্ষী নিজে স্বাক্ষর করে অনেকের টাকা আত্মসাৎ করতেন। বেতন-ভাতা পুরোটাই দেয়া হতো যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে । এজন্য জনপ্রতি সরকারের বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ৩২৯ টাকা। সব মিলিয়ে ১৩ বছরে এই কর্মসূচিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বিপুল এই টাকায় বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মসংস্থানের কথা থাকলেও নানা কায়দায় এর উল্লেখযোগ্য অংশ মেরে দিয়েছেন বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মাত্র তিনটি উপজেলায় ৪১ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে। কর্মসূচির আওতাধীন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় কার্যক্রমের তদন্ত করা হলে প্রায় ৩০ কোটি টাকা লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির (৪র্থ পর্ব) অধীনে সিলেটের গোয়াইনঘাটের ১ হাজার ২৯৫ জন যুবক-যুবতীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। বেকার যুবকদের অস্থায়ী কর্মসংস্থান হিসেবে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি (৪র্থ পর্ব) অধীনে গোয়াইনঘাট উপজেলাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত হওয়ার জন্য উপজেলার ২০৯১ জন আবেদন করেন। পরে বেতনের অর্ধেক টাকা ইলিয়াস আকরামের কাছে দেয়ার শর্তে ১২৯৫ জন বেকার যুবক/যুব মহিলাকে মনোনীত করা হয়। ৫৬৪ জন যুবক ও ৭৩১ জন মহিলা ওই প্রকল্পের আওতায় ভূক্ত হন। ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে ১২৬ জন, পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নে ২৯৫ জন, পূর্ব জাফলং ইউনিয়নে ১৭৪ জন, লেঙ্গুড়া ইউনিয়নে ৯৩ জন, আলীরগাঁও ইউনিয়নে ২৩২ জন, ফতেপুর ইউনিয়নে ১০৬ জন, নন্দিরগাঁও ইউনিয়নে ৮১ জন, তোয়াকুল ইউনিয়নে ৮৫ জন এবং ডৌবাড়ী ইউনিয়নে ১০৩ জন যুবক ও যুব মহিলা অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি (৪র্থ পর্বে) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অফিশিয়াল ফাইল,রেজিস্ট্রার ও গোয়াইনঘাট সোনালী ব্যাংকে ১২৯৫ জনের একাউন্ট খোলা থাকলেও প্রকৃত পক্ষে চাকুরী করতেন মাত্র ৬০০-৬৫০ জন। বাকি একাউন্ট গুলো নিয়ন্ত্রণ করতেন তৎকালীন গোয়াইনঘাট উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আজহারুল কবির, বডিগার্ড ইলিয়াস আকরাম এবং খায়রুল আমিন নামের জনৈক ব্যক্তি। সোনালী ব্যাংক গোয়াইনঘাট শাখায় এখনো ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির অফিশিয়াল ডকুমেন্টস দেখলে বিষয়টি একদম পরিষ্কার হয়ে যাবে। ৬ শতাধিক মানুষের একাউন্ট খোলে জাল স্বাক্ষর দিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আজহারুল কবির ও ইলিয়াস আকরাম বহাল তবিয়তে রয়েছেন। গোয়াইনঘাটবাসী এসব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়েছেন প্রশাসনের প্রতি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd