সিলেট ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার বন্ধ শ্রীপুর পাথর কোয়ারি থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে একটি প্রশাসনকে ম্যানেজ করে একটি প্রভাবশালী মহল। তারা সীমান্তের শূন্যরেখার কাছ থেকে পাথর তুলছে। ফলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বন্ধ থাকা পাথর কোয়ারি ঘুরে দেখা গেছে, কয়েকশ শ্রমিক দিনের বেলা ১২৮০ নম্বর আন্তর্জাতিক পিলার এলাকা থেকে দেদারছে পাথর উত্তোলন করে ট্রাকে বিক্রি করা হচ্ছে। পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, মহাজনেরা পাথর উত্তোলন করে গাড়িতে বিক্রি করেন। আমরা পাথর উত্তোলন করলে হাজার টাকা মজুরি পাই। পেটের দায়ে শ্রীপুর পাথর কোয়ারিতে পাথর উত্তোলন করি। কথা হয় একজন পাথর ব্যবসায়ীর সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে বন্ধ থাকা শ্রীপুর পাথর কোয়ারি থেকে প্রভাবশালী একটি পাথরখেকো চক্র সীমান্তের মেইন পিলার এলাকা থেকে পাথর উত্তোলন করে আসছে। সীমান্তে পাথর উত্তোলনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাধা দেয়। তারপরও পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুর পাথর কোয়ারী থেকে অবৈধভাবে পাথর লুটপাটের মহোৎসব চলছে। এই লুটপাটের মূলহোতা জৈন্তা ট্রাক চালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল ড্রাইভার। তারই নেতৃত্বে জৈন্তাপুর থানার ওসি-উপজেলা প্রশাসন ম্যানেজ করে এই লুটপাট চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ফলে নিরব ভূমিকা পালন করছেন জৈন্তাপুর থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন। জানা গেছে, জামাল ড্রাইভারের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট প্রশাসন ও বিজিবির নাম ভাঙিয়ে গাড়ী প্রতি নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা আদায়ের করে আসছে। শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে থেকে জৈন্তাপুর মডেল থানা ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জামাল ড্রাইভারের কাছ থেকে চাঁদা অংশ বুঝে নেন। এছাড়া বিজিবি-এসিল্যান্ডের নামে প্রতি বালু গাড়ী থেকে ৪ শত, পাথর ৮ শত টাকা করে চাঁদা আদায় করচে জামাল ড্রাইভারের সিন্ডিকেট।
স্থানীয়রা ওসির কাছে একাধিকবার অভিযোগ করা হলে তিনি বলেন, এগুলো আমার দেখার বিষয় না। এসিল্যান্ডের কাছে যান। কিন্তু জামাল জামাল ড্রাইভারের সাথে জৈন্তাপুর মডেল থানা ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামানের রহম-দহম থাকায় তিনি এসকল বিষয় আমলে না নিয়ে মানুষকে অন্যপথ দেখাচ্ছেন। ফলে দৈনিক ওসির পকেটে ঢুকছে লাখ টাকা।
জৈন্তাপুর ইউপির সদস্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, শ্রীপুর পাথর কোয়ারি সরকারিভাবে বন্দ রয়েছে। শ্রীপুর কোয়ারি পাথর উত্তোলনের অযোগ্য হওয়ায় সরকার ইজারা বাতিল করেছেন। তারপর থেকে কোয়ারি বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি একটি প্রভাবশালী চক্র সীমান্তে জিরো লাইন হতে এবং জিরো লাইন অতিক্রম করে পাথর উত্তোলন করছে। তবে বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
অপরদিকে, যারা বিষয়টি দেখার কথা তারও নিরবতা পালন করছে। কয়েক জন স্থানীয় সাংবাদিক মাঝে মধ্যে দায়সারাভাবে সংবাদ প্রকাশ করেন। নিয়মিত বিষয়টি কেউ তুলে ধরছেন না। ফলে এই চক্রটি পাথর উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের পর থেকে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে সব ধরণের বালু পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে সরকারি কাগজপত্রে।
কিন্তু বিগত ৭ বছরে যেখানে কুয়ারী এলাকায় গাড়ী পাথর পরিবহনের জন্য নামতে সাহস পেতো না। কিন্তু ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামানের আমলে অদৃশ্য শক্তির কারনে মূল কোয়ারী এলাকায় সরাসরি গাড়ী দিয়ে পাথর লুট হচ্ছে। অথিতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
সরজমিনে গিয়ে দেখা মিলে বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত পিলার ১২৭৯-১২৮০-১২৮১ মেইন পিলারের নিকটবর্তী এলাকা হইতে দিন দুপুরে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কয়েকশ শ্রমিক পাথর নিয়ে আসছে। বিগত কয়েক বছর যাবত অনুরূপ নিয়মে রাতের আঁধারে পাথর নৌকাযোগে বহন করে মূল কোয়ারী এলাকা হতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে লোডিং করলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নতুন সিন্ডিকেট চক্র মূল কোয়ারী এলাকায় পাথর ফেলে কোয়ারী এলাকায় গাড়ী নামিয়ে বিক্রি করে আসছে।
সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে কিছু শ্রমিকদের সাথে আলাপ কালে নতুন সিন্ডিকেট চক্রের কয়েকজন সদস্যদের নাম তালিকায় উঠে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেমার শ্রমিক জানান কয়েক সপ্তাহ যাবৎ কেন্দ্রী গ্রামে বাসিন্দা শামিম, গুচ্ছগ্রাম এলাকার সুমন মেম্বার, খারুবিল এলাকার নজির মিয়া ও ৪নং বাংলা বাজার এলাকার দিলদার হোসেন চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে নতুন করে কোন ব্যবসায়ী পাথর উত্তোলনের কাজে জড়িত হতে হলে ৫ হাজার টাকা প্রাথমিক ভাবে সিন্ডিকেট চক্রটিকে দিতে হয়। আর প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট টাকা বিভিন্ন মাধ্যমের নামে উত্তোলন করা হয়।
স্থানীয় সুমন মেম্বার ও জাকির হোসেন এসকল টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এছাড়া এই সিন্ডিকেট চক্রের আরো সদস্যের মধ্যে নুর ইসলাম, আক্কাস আলি, বালফু সুমন ও মরমের নাম রয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)’র সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি প্রতিবেদকের কল রিসিভ করেননি।
জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আক্তার লাবনীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন (০১৭৩০৩৩১০৪৯) রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
জৈন্তাপুর মডেল থানা ওসি আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এসবের কিছু জানি না। ইউএনও-এসিল্যান্ড এর কাছ থেকে জানেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd