তিন নেতার দখলদারিত্ব চাঁদাবাজিতে অস্থির জাফলং : নিরব পুলিশ প্রশাসন

প্রকাশিত: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৫

তিন নেতার দখলদারিত্ব চাঁদাবাজিতে অস্থির জাফলং : নিরব পুলিশ প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত জনপদ পর্যটন নগরীর জাফলং এখন মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম। গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির সমর্থিত তিন নেতার দখলে চলে গেছে জাফলংয়ের নিয়ন্ত্রণ। এর পূর্বে ছিলো স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দখলে। তর্বমানে চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের মধ্যে একেরপর এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এই সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে নিরব ভূমিকা পালন করছে স্থানীয় থানা পুলিশ। দখলদারিত্ব চাঁদাবাজিতে অস্থির জাফলং। যার ফলে ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে গোয়াইনঘাটের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা।
বর্তমানে যাদের জন্য উত্তপ্ত জাফলং তারা হলেন সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স ও জেলা বিএনপির বহিস্কৃত নেতা শাহ আলম স্বপন। ৫ই আগস্টের দৃশ্যপট পরিবর্তনের পর থেকে জাফলংয়ে শুরু হয় দখলদারিত্ব চাঁদাবাজি ও লুটপাট। জাফলং পর্যটন কেন্দ্র থেকে শাহ আলম স্বপন, ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্সের নেতৃত্বে শতকোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হয়। এরপর এই চক্রের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর বাদি হয়ে পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করে। কিন্তু এসকল মামলায় তাদের কিছুই হয়নি। ফলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে।

জানা গেছে, জাফলংয়ে পাথর খেকো চাঁদাবাজ-অন্যদিকে ভারতীয় চোরাচালানকারীদের লাইনম্যান নামক চাঁদাবাজ। তাদের মধ্যে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। দুটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রক জেলা বিএনপির বহিস্কৃত নেতা শাহ আলম স্বপন ও আমজাদ বক্স এবং অপর গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করছেন সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম। স্বপন পাথর লুটপাটে ও কাশেম চোরাচালান নিয়ে। এক গ্রুপের লোকেরা আরেক গ্রুপের লাইনে ভাগ চাইলেই শুরু হয় সংঘর্ষ। এই তিন নেতার গ্রুপের রাজত্বে অস্থির হয়ে উঠেছে শান্তির জনপদ জাফলং।
গত শুক্রবার রাতে জেলা যুবদল নেতা আবুল কাশেমের হামলায় গুরুতর আহত হয় মির্জা রায়হান ও তার স্ত্রী। পরে যুবদল নেতা কাশেমের সহযোগী ভারতীয় চোরাচালানের লাইনম্যান জয়দুল ইসলামের উপর হামলা চালিয়েছে পাথর খেকো সিন্ডিকেটের সদস্যরা।
এরআগে গত সোমবার রাতে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের ভারতীয় চোরাই লাইনে পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা স্বপন বলয়ের লোক আজির উদ্দিন লাইনে চাঁদার ভাগ না পেয়ে প্রতিবাদ করেন।
পরে আবুল কাশেম ও তার সহযোগীরা উত্তেজিত হয়ে মামার দোকানের স্বাদ রেষ্টুরেন্টের ভিতর থেকে আজির উদ্দিনকে তুলে নিয়ে যায় নলজুরী এলাকায়। পরে এ ঘটনায় পুরো জাফলংয়ে আজির উদ্দিন সমর্থিত ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ও আবুল কাশেমের সমর্থিত যুবদলের দুই গ্রুপ মুখোমুখি অবস্তা বিরাজ করে। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় শান্তিকামী মানুষের মধ্যে।
খবর পেয়ে গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের এসআই ওবায়দুল হাসান সঙ্গীয়ফোর্স নিয়ে নলজুরী থেকে ভিকটিম আজির উদ্দিনকে উদ্ধার করে গোয়াইনঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেন।
কিন্তু ওই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশ মামলাটি রেকর্ডভূক্ত করেনি। এরই জের ধরে শুক্রবার রাতে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের সহযোগী যুবদল নেতা জয়দুল ইসলামের উপর হামলা করে গাড়ি ভংচুর করে।
পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। জয়দুল ইসলামের অবস্তা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে ওসমানী মেডিকেলের চর্থ তলায় ৭নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেমের লোকদের হামলায় গুরুতর আহত হয় আজির উদ্দিন। পরে সে সিলেট নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা সম্পন্ন করে। সে সুস্থ্য হয়ে দলবল নিয়ে আবুল কাশেমের সহযোগী জয়দুল ইসলামের উপর হামলা করে।
আর এসকল ঘটনার জন্য পুলিশকে দোষারোপ করেছেন স্থানীয়রা। আজির উদ্দিনের উপর হামলার ঘটনায় মামলা নেয়নি পুলিশ। ফলে আজিররের লোকজন ক্ষীপ্ত হয়ে আইন তাদের নিজের হাতে তোলে নিয়েছেন। উভয় পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
এ ঘটনায় গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, উভয় পক্ষের লোকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবার কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

February 2025
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728

সর্বশেষ খবর

………………………..