সিলেট ৩১শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১লা শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঠিকাদারকে অপহরণের পর জোরপূর্বক ৮৬ কোটি টাকার কাজ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও পার পেয়ে গেলেন সুনামগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন।
ঠিকাদারের ডাকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাদেকুর রহমান সাদিকের বাধায় আজাদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ সদস্যদের একটি কক্ষে রেখে পেছন দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেন সাদিকুর রহমান সাদিক। তবে বিএনপি নেতা সাদেকুর রহমান সাদিক বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
তিনি জনিয়েছেন, যে হোটেলে এ ঘটনা ঘটে; সেটি তার এলাকায়। হট্টগোল দেখে সেখানে গিয়েছিলেন মাত্র। কাউকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেননি।
এ ব্যাপারে মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। খোঁজখবর নিচ্ছি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে কেউ ছাড় পাবেন না।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী ঠিকাদার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সড়ক জনপথের ৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রাস্তার কাজ পান বদরুল ইকবাল লিমিটেড।
কাজটি শেষ করতে তিনি শফিকুল ইসলামকে অথরাইজেশন ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগ দেন। শফিকুল ইসলাম কাজটি শেষ করতে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ হোসেনকে ৫০ শতাংশ শেয়ার দিয়ে চুক্তিপত্র তৈরি করেন।
ইতোমধ্যেই কাজের কিছু অংশ শেষ হয়েছে। বুধবার সকালে সিলেটের ক্রিস্টাল রোজ হোটেলে শফিকুল ইসলামকে ডেকে পাঠান আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ হোসেন।
হোটেলে যাওয়ার পরই তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে পুরো কাজের অথরাইজেশন হস্তান্তর করতে একটি সাদা স্ট্যাম্প পেপারে স্বাক্ষর করতে বলেন। স্বাক্ষর না করায় তার (শফিকুল ইসলাম) ওপর আজাদ হোসেনসহ আরও চারজন মিলে নির্যাতন চালান।
একপর্যায়ে শফিকুল কক্ষের বাইরে বের হয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশকে খবর দেন। পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ হোসেন খবর দেন মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সাদেকুর সহমান সাদিককে। খবর পেয়ে প্রথমে ঘটনাস্থলে যান পুলিশের তিন সদস্য।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, পুলিশ ভেতরে ঢুকতেই তাদের নানাভাবে বাধা দেন সাদেকুর রহমান সাদিক। বলেন, ‘বিষয়টি আমি সমাধান করে দিব।’
পুলিশের এক সদস্য জানান, তাদেরকে বলা হয় হোটেলের মালিক যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি। তাই এখান থেকে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। এসব বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন বিএনপি নেতা সাদিক।
এ কারণে আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতার করতে কোতোয়ালি থানা থেকে অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়। তাদেরকেও হোটেলে তল্লাশি চালাতে বাধা দেওয়া হয়। এভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়।
ততক্ষণে বিএনপি নেতা সাদিক ও হোটেল কর্তৃপক্ষের সহায়তায় পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ নেতা আজাদ হোসেন। এরপর হোটেল তল্লাশি করতে দেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশ আজাদ হোসেনকে কোথাও খুঁজে পায়নি।
এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার রেজাউল করিম বলেন, আজাদ হোসেন পালিয়ে গিয়েও পার পাবেন না। তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিলেট কোতোয়ালি থানায় নির্যাতিত ঠিকাদার শফিকুল ইসলাম পাঁচজনের নামে মামলা করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বাংলাদেশ স্থলবন্দর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসাইনকে।
অপর আসামিরা হলেন তাহিরপুরের আনোয়ারপুরের জেনসন দাস, ক্রিস্টাল রোজ হোটেল সাপ্লাইয়ের সিইও নিশু দাস, জামালগঞ্জের পারভেজ ও নগরের মুন্সিপাড়ার জয়দেব পার্থ। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
কে এই আজাদ হোসেন? আজাদ হোসেন ১৫ বছর আগেও দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত এবং পরবর্তীতে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের ছত্রছায়ায় আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যান তিনি।
২০১২ সালে সুরঞ্জিত সেনের কথা বলে রেলে নিয়োগ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন আজাদ। এরপর ২০১৬ ও ২০১৮ সালে প্রভাব খাটিয়ে বড় বড় বালুমহাল ইজারা নিয়ে শতকোটি টাকার মালিক হন।
২০২২ সালে তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আর অবৈধ টাকা খরচ করে বাগিয়ে নেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য পদ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd