সিলেট ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪২ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০২৪
ক্রাইম প্রতিবেদক: বিস্ফোরক মামলার এজাহারনামীয় আসামি আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমদকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আপোষ রফাদফা করে বড় অংকের টাকা আদায়ের পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
গত শুক্রবার (০৮ নভেম্বর) রাতের প্রথম প্রহর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের খুলিয়াটুলার বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। গত ৭ নভেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টা মামলার (নং-১৪(৮)’২৪) এজাহারনামীয় ১৮ নম্বর আসামি তিনি।
আটককালে কোতোয়ালি থানায় দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলার (নং-১৪(৮)’২৪) তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাফিন আহমদ, এসআই এসআই ফখরুল ইসলাম ও আব্দুল মুকিতসহ পোষাকে ও সাদা পোষাকে পুলিশ সদস্যরা অভিযানে অংশ নেন।
আটককৃত আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন আহমদ (৪২) সিলেট নগরের খুলিয়াটুলা নিলিমা ৫২/৪ বাসার মৃত মুজাহিদ আলীর ছেলে।
জানা গেছে, কোতোয়ালি মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) সাফিন আহমদ ও ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ রাত সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনকে তার বাসা থেকে আটক করে।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, পোষাকে ৩ জন ও সাদা পোষাকে ২ জন পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতা শাহীনকে নীল লুঙ্গি ও শার্ট পরিহিত অবস্থায় বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছেন। এসময় পেছন থেকে আরেকজন লোক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করেন। তার সঙ্গে লুঙ্গি পরিহিত একজন এবং পেছনে লাল গেঙ্গি পরিহিত আরেকজন পুলিশের পেছনে পেছনে ছুঁটে যাচ্ছিলেন।
অন্য আরেকটি সিসি ফুটেজে দেখা যায়, সাদা পোষাকে ৩ জন এবং পোষাক পরিহিত একজন পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা শাহীন লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছেন। অন্য একটি ফুটেজে হাতে লাল ফাইল থাকা সাদা পোষাকে পুলিশ সদস্য ছেড়ে দেওয়া আসামি শাহীনকে একা নিয়ে তার বাসার দিকে যাচ্ছেন।
সূত্রমতে, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক ও (ওসি তদন্ত) আকবর হোসেনের নির্দেশনায় স্থানীয় এক সোর্সের মাধ্যমে শাহীনকে আটক করা হয়। পরে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে এসআই ফখরুলের সঙ্গে বাকবিকন্ডায় জড়ান সোর্স হিসেবে ব্যবহৃত ব্যক্তি। তার মতে, ‘আপনারা যদি তাকে ধরে ছেড়ে দেবেন, তাহলে ধরলেন কেনো?’ তখন এসআই ফখরুল অনুনয় বিনয় করে বিষয়টি ক্লোজ করতে বলেন, কেউ যেনো না জানে। তার দিকে তাকিয়ে এটা বাদ দিতে বলেন এবং এটাতে কমিশন আছে বলে প্রলুব্ধ করেন। এসআই ফখরুল বার বার অনুরোধ করেন যাতে বিষয়টি জানাজানি না হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কোতোয়াল মডেল থানার কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আসামি আওয়ামী লীগ নেতাকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এসএমপিতে তোলপাড় চলছে।
এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক প্রথমে আসামি আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেন। পরে আবার ফোন দিয়ে তিনি বলেন, শাহীন নামে যাকে আটক করা হয়েছিল, তিনি হবিগঞ্জের ফুড ইন্সপেক্টর। তাই সরকারি কর্মকর্তা হওয়ার কারণে তাকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বিস্ফোরক মামলার এজাহার নামীয় আসামিকে আটক কিংবা ছাড়ার বিষয়ে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেননি।
অভিযোগের বিষয়ে এসআই ফখরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আসামি আটকের বিষয়ে শুনেছি। ওসি কোতোয়ালি বলেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি নাকি সরকারি চাকুরিজীবী। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আটকে সতর্কতা জরুরী। কিন্তু আটক কিংবা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শ নেওয়া উচিত ছিল।
এসএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) শাহরিয়ার আলম বলেন, আটককৃত আসামি সরকারি চাকুরি করার কারণে তাকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন ওসি। কিন্তু যদি কোনো ধরণের আর্থিক সুবিধা নিয়ে ছাড়া হয়ে থাকে, সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নগরের চৌহাট্টা পয়েন্টে ছাত্র জনতার ওপর হামলার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাবেক স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও হত্যা চেষ্টা মামলা হয়। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের বাগাউড়া গ্রামের সফিক মিয়ার ছেলে রাজন মিয়া বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd