সিলেট ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১১ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:১৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আউটসোর্সিং পদে জনবল নিয়োগের অনুমতি পায় ‘সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড’। এই অনুমতির মাধ্যমে ১০টি পদে ২৬২ জন লোক সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ থেকে প্রত্যেক আবেদনকারীকে কাজে যোগদান করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে কাজে যোগদানের পূর্ব থেকেই ব্যাপক অনিয়ম আর জালিয়াতির অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। একদিকে কাজে যোগদানকৃত কর্মীদের উপস্থিতির সাইন না নেওয়া, অফিসে গেলেও কাজ বুঝিয়ে না দেওয়া এবং আবেদন প্রতি ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে। তাছাড়া, কোম্পানীর কাজ পাইয়ে দেওয়ার নেপথ্য কারিগর হিসেবে এক যুবলীগ কর্মীর নাম শোনা গেছে। বর্তমানে তিনিই এই কোম্পানীর অলিখিত পরিচালক বলে জানিয়েছে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। এর সাথে জড়িত রয়েছে হাসপাতালের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
সূত্র জানায়, নতুন কোম্পানীর অনুকুলে দরপত্র অনুমোদনের পর নিয়োগ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন সাবেক কোম্পানীর স্টাফ রুবেল, দেলোয়ার ও তার সহযোগী সামছু। সবকটি পদে নিয়োগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে রাতারাতি এই চক্র হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। আবার বিগত কোম্পানীর আন্ডারে ফ্রিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা নতুন করে ঘুষের টাকা না দিতে পারায় তাদেরকে বঞ্চিত করা হয় চাকুরী থেকে। আবার দু-একজনকে রাখলেও তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে প্রতিদিন অফিসে যাওয়া-আসা বাধ্যতামূলক করে রেখেছে এই চক্র।
ওসমানী হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তিতে তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া উল্লেখ করেছিলেন হাসপাতালের পুরাতন স্টাফদের দিয়েই কাজ পরিচালনা করতে হবে। এরা সবাই পরিক্ষীত ও দক্ষ স্টাফ। তাছাড়া ১শ জনের মধ্যে ৯০ জন হরিজন সম্প্রদায়ের লোক রাখতে হবে। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসের দায়িত্বরতরা পরিচালকের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে নিয়োগ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন। হরিজন সম্প্রদায়ের লোকদের জনপ্রতি ১ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলেন রুবেল। তারা টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। পরে তাদেরকে আর পূণরায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ হরিজন সম্প্রদায়ের ৪০ জন লোককে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো। চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তাদের মেয়াদ রয়েছে। মেয়াদ থাকা সত্যেও টাকা না দেওয়ায় তাদেরকে চাকুরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় সেবা গ্রহণ নীতিমালায় রয়েছে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা। কিন্ত সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা সম্পর্ণ ভিন্ন।
সিলেট জেলা হরিজন সম্প্রদায়ের সহ-সভাপতি পান্নু লাল জানান, গালফ ও আল আরাফাহ সিকিউরিটি সার্ভিসের মাধ্যমে তৎকালীন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া আমাদের সম্প্রদায়ের ৪০ জন লোককে হাসপাতালে নিয়োগ প্রদান করেন। তখন তারা সবাই সিলেট সিটি কর্পোরেশনে চাকুরিতে ছিলো। কিন্তু মেডিকেলের পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে পরিচালক আমাকে বলেন। পরে আমি এই ৪০জন লোককে সিটি থেকে চাকুরি বাদ দিয়ে হাসপাতালে নিয়োগ করি। তাদের নিয়োগের মেয়াদ রয়েছে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত। কিন্তু সাউদিয়া সিকিউরিটি সার্ভিসের রুবেল ও সামছু আমাদের লোকদের চাকুরি থেকে বাতিল করে দিয়েছে। পরে আমি রুবেল ও সামছুর সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে বলেন টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। এরপর আমি ওসমানী মেডিকেলের উপ-পরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তীর সাথে যোগযোগ করি।
পান্নু লাল আরও বলেন, আমার এই ৪০ জন লোক চাকুরি হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তারা সিটি কর্পোরেশনে চাকুরি করে তাদের সংসার ভালোই চলছিলো। কিন্তু ওসমানীতে গিয়ে সিটির চাকুরিও গেছে। এখন এরা অপরাধের সাথে যুক্ত হবে। এদের নিয়ে আমি আমার সম্প্রদায়ের লোকজন চিন্তিত। আমরা শিঘ্রই চাকুরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে আন্দোলনে নামবো।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd