সিলেটের রাজনীতিতে এখন নির্বাচনী ব্যস্ততা

প্রকাশিত: ৮:০২ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০১৮

সিলেটের রাজনীতিতে এখন নির্বাচনী ব্যস্ততা

নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটে রাজনীতিতে এখন নির্বাচনী ব্যস্ততা। সামনে থাকা দুই বড় নির্বাচনকে ঘিরে এই ব্যস্ততা বেড়ে চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সদরে-অন্দরে এই ব্যস্ততা এখন দৃশ্যমান। বিশেষ করে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে এই ব্যস্ততা যেন প্রবল। তবে বর্তমান সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি রয়েছে এসব ব্যস্ততার বাইরে।

আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সে লক্ষ্যেই তোড়জোড় চালাচ্ছে। এছাড়া চলতি বছরের শেষের দিকেই রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী লড়াই জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সিলেটে রাজনীতির এখনকার ব্যস্ততা মূলত এ দুই নির্বাচনকে সামনে রেখেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সিলেটে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বর্তমান সময়ের কর্মকা- সামনে থাকা দুই বড় নির্বাচনের কথাই বলছে। দল দুটি মাঠের রাজনীতিতে যেভাবে মনোযোগী হয়ে ওঠছে, তাতে তৈরী হয়েছে নির্বাচনী আমেজ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরেই সিলেটে মাঠমুখী রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে। ইতিমধ্যেই আগামী সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

তবে আগামী সিসিক নির্বাচনে কামরানই আওয়ামী লীগদলীয় মেয়র প্রার্থী, এটা এখনই মেনে নিতে নারাজ নির্বাচনে মেয়র পদে লড়তে আগ্রহী অন্যান্য নেতাদের। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহিউদ্দিন আহমদ সেলিম নৌকা প্রতীক নিয়ে সিসিক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে আগ্রহী। সে লক্ষ্যে নিজ নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রচেষ্টায় আছেন রাজনৈতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের এসব নেতারা।

একদিকে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে কেন্দ্রের ইঙ্গিত, অন্যদিকে নির্বাচনে লড়তে আগ্রহী অন্যান্য নেতাদের তৎপরতা। এ দুইয়ে মিলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে সিলেটে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ব্যস্ততা এনে দিয়েছে।

এদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সিলেটের ছয়টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। এ জন্য আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের মাঠপর্যায়ের গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তার তথ্য গোয়েন্দা মারফতও জমা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘সিসিকের আগামী নির্বাচনের জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাঠে সক্রিয় রয়েছি। দলের নেতাকর্মীরাও আমার সাথে আছেন, সক্রিয় রয়েছেন। এই নির্বাচনী ব্যস্ততায় দলও আরো গতিশীল হচ্ছে।’

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। এ দল সবসময়ই নির্বাচনমুখী। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচন হচ্ছে অপরিহার্য। আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি তাই বরাবরই আস্থাশীল। আমাদের সামনে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন রয়েছে। এ দুই নির্বাচনকে ঘিরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্যরকম আবহ রয়েছে। কেন্দ্র থেকেও স্থানীয় রাজনীতির খবরাখবর নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।’

মাঠের বিরোধীদল বিএনপির রাজনীতিতেও রয়েছে ব্যস্ততা। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমানে সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ে তুমুল ব্যস্ত। এ দুই ইউনিট মিলিয়ে সিলেট থেকে দুই লাখ নতুন সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন বিএনপির নেতারা। সিলেট সিটি করপোরেশনের পরবর্তী নির্বাচনকে ঘিরেও দলটির নেতাদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিএনপিদলীয় সূত্রে জানা যায়, সিসিকের পরবর্তী নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে অন্তত চারজন নেতা রয়েছেন। এই চারজন হচ্ছেন- সিসিকের বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং প্যানেল মেয়র ও সিটি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। বিভিন্নভাবে এ চার নেতা দলের কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের আস্থার মধ্যে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যস্ততাও রয়েছে সিলেট বিএনপিতে। সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনে মনোনয়ন পেতে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপর রয়েছেন। বিএনপির হাইকমান্ড ছয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। যুক্তরাজ্যে থাকা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার ঘনিষ্টজনদের দিয়ে সিলেটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে দলটির ঘনিষ্ট একটি সূত্র।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে দলে তৎপরতা আছে। কেন্দ্র যদি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আমি মনোনয়ন চাইবো। এবার দলের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষ সবাই আমাকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘বিএনপি দেশের অন্যতম বড় ও জনপ্রিয় দল। আমরা সবসময়ই নির্বাচনমুখী দল। স্থানীয় বা জাতীয় যে কোনো নির্বাচনেই অংশগ্রহণের প্রস্তুতি আমাদের সবসময়ই থাকে, আছে। সিসিকের পরবর্তী নির্বাচন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়েও বিএনপি সচেতন। এখন থেকেই দলকে আরো সুসংগঠিত করা, আরো বেশি সক্রিয় রাখার চেষ্টা আমাদের রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সিসিকের পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপি নিয়মিত খবরাখবর রাখছে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় ও তৎপর রয়েছেন।’

এদিকে, বর্তমান সংসদে বিরোধীদল হিসেবে থাকা জাতীয় পার্টি সিলেটে ঝিমিয়ে আছে। দলটির নেতা বা কর্মী কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই রাজনীতির ময়দানে। সিটি নির্বাচন নিয়ে দলটির কোনো নেতার তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে অন্তত দুটি আসনে দলটির দুই নেতা তৎপর রয়েছেন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

June 2018
S S M T W T F
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  

সর্বশেষ খবর

………………………..